উদ্ভাবনমুখী শিক্ষার সুযোগ

ইউআইটিএসের ক্যাম্পাস

ক্যাম্পাস একরকম বন্ধ, কিন্তু শিক্ষার্থীরা থেমে নেই। অ্যাসাইনমেন্ট, প্রজেক্ট সাবমিশন, ইলেকট্রনিক সার্কিট তৈরির প্রতিযোগিতা...কত কী কাজ! এসব নিয়ে বেশ ব্যস্ত ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসের (ইউআইটিএস) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল ইমরোজ, রানা চন্দ্র ও আয়মান আল সামি। ক্লাস, গ্রুপ মিটিং, প্রেজেন্টেশন আর প্রজেক্ট তৈরির কাজ...একটার পর একটা লেগেই আছে। ফয়সাল ইমরোজ বলছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ সেমিস্টারে পড়ছি আমরা। আর কিছুদিন পরেই কর্মজীবন শুরু। করোনা যে স্থবিরতা তৈরি করেছে, সেটা কাটিয়ে উঠতে লড়াই করছি আমরা।’

অনলাইনে চলছে যত ব্যস্ততা

বিবিএর ছাত্রী শাহিদা আক্তার তাবাসসুমের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। জানালেন, করোনাকালে অনলাইনের মাধ্যমেই তাঁরা নানা প্রকল্প, প্রতিযোগিতা বা সাংস্কৃতিক আয়োজন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুটিং সোসাইটির সদস্য নাজিফা যেমন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বললেন। করোনাকালের আগে ক্যাম্পাসে নানা অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করতেন তিনি। এখনো তাঁকে উপস্থাপনা করতে হচ্ছে, তবে সেটা ফেসবুক পেজে আয়োজিত অনুষ্ঠানের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাবের ফেসবুক পেজ ঘুরে শিক্ষার্থীদের কার্যক্রমগুলো চোখে পড়ে। যেমন ছিল নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, তেমনি ছিল মেধাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিযোগিতা। অনলাইনের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক মো. সাঈদ পারভেজ বলেন, ‘করোনার সময় ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগ ধরে রাখতে ক্লাস, প্রেজেন্টেশন, নিয়মিত অ্যাসাইনমেন্ট...এসব বিষয়ে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নতুন চ্যালেঞ্জকে যেন শিক্ষার্থীরা জয় করতে পারে, সে লক্ষ্যেই তাঁদের তৈরি করা হচ্ছে।’ ইউআইটিএসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণা কার্যক্রমকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। জার্নাল অব বিজনেস স্টাডিজ, জার্নাল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং আর জার্নাল অব হিউম্যানিটিস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা।

ভবিষ্যৎমুখী শিক্ষার প্রচেষ্টা

২০০৩ সালে চালু হয় ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস)। ঢাকার ভাটারায় বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস। বর্তমানে ৪টি অনুষদে ১০টি বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘ভবিষ্যৎ পেশার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য যে দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন, তা সম্পর্কে যেন আমাদের শিক্ষার্থীরা কার্যকরভাবে শেখার সুযোগ পায়—সেদিকেই খেয়াল রাখছি আমরা। আমরা করোনার আগে থেকেই অনলাইনে নানাভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্লাসে যুক্ত। দক্ষতা বিকাশের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশের চেষ্টা চলছে।’ সেমিনার, সিম্পোজিয়াম আর অনলাইন-অফলাইন ক্যারিয়ার ও জব ফেয়ারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করা হয়। সফল পেশাজীবী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংযুক্ত করা যেমন এসব কার্যক্রমের লক্ষ্য, তেমনি শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনে অনুপ্রেরণা দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। করোনার সংকটে অর্থনৈতিক কারণে যেন ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দিতে নানা বৃত্তির পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উদ্ভাবনমুখী শিক্ষাক্রম

ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসের ইলেকট্রনিকস ও তড়িৎ প্রকৌশল (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থীরা এখন বেশ ব্যস্ত। নিজেদের শেষ বর্ষের প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন তাঁরা। এরই মধ্যে দেখার সুযোগ হয় ৮ শিক্ষার্থীর প্রকল্প—ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটর। আবু বকর সিদ্দিক, আদিল আদনান, কাজী এমদাদ, আতিকুর রহমান, মাজহারুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম চৌধুরী ও শোভন ইসলাম স্বল্পমূল্যে ব্যবহারযোগ্য এই ভেন্টিলেটর তৈরি করেছেন। দলের সদস্য তিতুমীর বলেন, ‘করোনার চিকিৎসায় যে ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হয়, তা ব্যয়বহুল। আমাদের ভেন্টিলেটর খুবই সাশ্রয়ী। ১৮-১৯ হাজার টাকা মধ্যে আমরা ভেন্টিলেটর তৈরি করেছি।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রায়োগিক জ্ঞান বিকাশের দিকেই বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়। ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীরা যা শিখছেন, তা যেন বাস্তব জীবনের নানা সমস্যা সমাধানে কাজে আসে, সেদিকেই শিক্ষকেরা খেয়াল রাখছেন। তাই ইইই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী শেখ সাদী তৈরি করেছেন একটি ‘অটোমেটেড হ্যান্ড স্যানিটাইজ ডিভাইস’।

ইউআইটিএস সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে এই ঠিকানায়: uits.edu.bd