রেসিপি
ঈদের দুপুরে খাবার টেবিলে
ঈদের ভোজের প্রধান এক পর্ব দুপুরের খাবার। গরমের কারণে দুপুরে খাওয়ার পর হাঁসফাঁস যেন না লাগে, সেদিকেও খেয়াল রাখুন। রেসিপি দিয়েছেন ফারাহ্ সুবর্ণা
আলু মাঞ্চুরিয়ান
উপকরণ: ছোট গোল আলু আধা কেজি, সবুজ ক্যাপসিকাম আধা কাপ (একদম ছোট কিউব করে কাটা), পেঁয়াজ আধা কাপ (৪ ভাগ করে খুলে নেওয়া), কর্নফ্লাওয়ার দেড় টেবিল চামচ, রসুন কিমা আধা চা-চামচ, আদা কিমা ১ চা-চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ, কাশ্মীরি মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লাল মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ, গোলমরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ, সয়া সস ১ টেবিল চামচ, টমেটো সস দেড় টেবিল চামচ, চিনি সস ১ চা-চামচ, ভিনেগার ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো ও তেল ৪ টেবিল চামচ।
প্রণালি: গোল আলু সেদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে নিন। ১ টেবিল চামচের মতো কর্নফ্লাওয়ার আর অল্প লবণ মেখে নিতে হবে। এরপর প্যানে তেল গরম করে আলু লালচে করে ভেজে তুলে নিতে হবে। এবার প্যানে আদা-রসুনের কিমা দিয়ে সোনালি করে ভেজে তাতে কর্নফ্লাওয়ার বাদে বাকি উপকরণ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। ৪ থেকে ৫ মিনিট বেশি আঁচে রান্না করে নিন। এবার অল্প পানিতে বাকি কর্নফ্লাওয়ার মিশিয়ে ঢেলে দিন আলুর তরকারিতে। নামিয়ে নিন। পরিবেশন করুন।
ছোলার পোলাও
উপকরণ: চিনিগুঁড়া চাল ২ কাপ, ছোলা ১ কাপ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, আদাবাটা আধা চা-চামচ, রসুনবাটা আধা চা-চামচ, জিরাগুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ, হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, গরমমসলার গুঁড়া ১ চা-চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ, আস্ত গরমমসলা (দারুচিনি, এলাচি, লবঙ্গ, তেজপাতা) প্রতিটি ৩টি করে, আস্ত কাঁচা মরিচ ৪ থেকে ৫টি, চিনি আধা চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল ১ কাপের ৩ ভাগের ১ ভাগ, ঘি ২ টেবিল চামচ, ফুটন্ত গরম পানি প্রয়োজনমতো ও পেঁয়াজ বেরেস্তা সাজানোর জন্য।
প্রণালি: ছোলা বেছে নিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে পর্যাপ্ত পানি আর অল্প লবণ দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে। পানি ঝরিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। চালও ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখতে হবে। এবার পাত্রে তেল গরম করে গরমমসলা ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজ সোনালি করে ভেজে নিন। এরপর চাল ও অন্যান্য মসলা দিয়ে ৩ থেকে ৪ মিনিট ভেজে নিতে হবে। সেদ্ধ ছোলা ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে আরও ৩ থেকে ৪ মিনিট ভেজে নিন। তাতে প্রয়োজনমতো ফুটন্ত গরম পানি দিয়ে ঢেকে রান্না করতে হবে। পানি আর চাল সমান হয়ে এলে আঁচ কমিয়ে দিন। পাত্রের নিচে তাওয়া দিয়ে দমে বসিয়ে দিতে হবে মিনিট পনেরোর জন্য। এ সময় আস্ত কাঁচা মরিচ, চিনি আর ঘি দিয়ে আলতো করে নেড়ে মিশিয়ে দিতে হবে। চাল সেদ্ধ হয়ে গেলেই পরিবেশন পাত্রে নামিয়ে ওপরে বেরেস্তা ছড়িয়ে দিয়ে পরিবেশন করুন।
মাছের টিকিয়া
উপকরণ: অল্প হলুদ, মরিচগুঁড়া ও লবণ দিয়ে সেদ্ধ রুই মাছ দেড় কাপ (সেদ্ধ হওয়ার পরে চামড়া বাদ দিয়ে কাঁটা বেছে নিতে হবে), আলু সেদ্ধ করে চটকে নেওয়া আধা কাপ, পেঁয়াজকুচি ৩ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ মিহি কুচি স্বাদমতো, ধনেপাতা মিহি কুচি ৩ টেবিল চামচ, ফেটানো ডিম ১টি, হলুদগুঁড়া সামান্য, মরিচগুঁড়া সামান্য, কর্নফ্লাওয়ার ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো ও তেল ভাজার জন্য।
প্রণালি: দেড় চা-চামচ তেলে পেঁয়াজ হালকা করে ভেজে নিতে হবে। এবার ডিম আর তেল বাদে বাকি উপকরণ ভালোভাবে মেখে নিতে হবে। এবার সেই মিশ্রণের সঙ্গে অল্প অল্প করে ফেটানো ডিম মিশিয়ে মেখে নিতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে, মিশ্রণ যেন বেশি নরম হয়ে না যায়। তাহলে টিকিয়া বানানো যাবে না। এবার মিশ্রণ থেকে পরিমাণমতো নিয়ে টিকিয়ার আকারে গড়ে আধা ঘণ্টার জন্য ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। মাঝে একবার উল্টে দিতে হবে। পরিবেশনের আগে আগে গরম তেলে সোনালি করে ভেজে নিন। পোলাও ও খিচুড়ির সঙ্গে অথবা বিকেলের নাশতা হিসেবেও পরিবেশন করতে পারেন মাছের এই টিকিয়া।
মিন্ট লেমোনেড
উপকরণ: পুদিনাপাতা ১০ থেকে ১২টি, লেবু (পাতলা গোল করে কাটা) ৮ থেকে ১০ স্লাইস, যেকোনো সাদা ঠান্ডা সোডা ২ গ্লাস, চিনির সিরাপ স্বাদমতো (সোডা ব্যবহার করলে লাগবে না), লবণ প্রতি গ্লাসে ১ চিমটি (স্বাদমতো দিলে ভালো)।
প্রণালি: একটা হামানদিস্তা অথবা বাটিতে পুদিনাপাতা ও লেবু ভালো করে থেঁতো করে নিতে হবে। তারপর দুই গ্লাসে সমপরিমাণে থেঁতো করা পুদিনা-লেবু, লবণ আর ঠান্ডা সোডা মিশিয়ে নিলেই মিন্ট লেমোনেড তৈরি হয়ে যাবে। যদি সোডা ব্যবহার না করেন, তাহলে এতে স্বাদমতো চিনির সিরাপ মিশিয়ে নিতে ভুলবেন না যেন।
মোরগ মোসাল্লাম
উপকরণ: চামড়া ছড়ানো আস্ত মোরগ ১ কেজি বা সোয়া কেজি, টক দই ৫ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ বেরেস্তা আধা কাপ, পেঁয়াজবাটা ২ চা-চামচ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঠবাদাম ৮ থেকে ১০টি, মরিচগুঁড়া দেড় চা-চামচ, জিরাগুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ, গরমমসলার গুঁড়া আধা চা-চামচ, জয়ফল-জয়ত্রীবাটা ১ চা-চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ, কেওড়া জল আধা চা-চামচ, সেদ্ধ ডিম ২টি, আস্ত দারুচিনি ১ ইঞ্চি, আস্ত কিশমিশ ৮ থেকে ১০টি, এলাচি ২টি, তেজপাতা ২টি, লবণ স্বাদমতো, তেল আধা কাপ ও ঘি ৪ টেবিল চামচ।
প্রণালি: মোরগ বা মুরগির পেট ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। বুক, রান—সবদিক হালকা করে চিরে নিতে হবে যাতে মসলা ভেতরে ভালোভাবে ঢোকে। এবার একটা পাত্রে ২ টেবিল চামচ টক দই, আধা চা-চামচ আদাবাটা, আধা চা-চামচ রসুনবাটা, আধা চা-চামচ মরিচগুঁড়া আর স্বাদমতো লবণ দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। তাতে মোরগ দিয়ে ভালোভাবে মসলা মাখিয়ে নিন। কমপক্ষে ২ ঘণ্টা ম্যারিনেশনের জন্য রেখে দিতে হবে। সারা রাত রেখে দিতে পারলে সবচেয়ে ভালো। এবার বাকি টক দই, পেঁয়াজ বেরেস্তা আর বাদাম একসঙ্গে বেটে নিতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পরে ম্যারিনেশন থেকে মসলা বাদ দিয়ে শুধু মোরগ তুলে নিয়ে তার পেটের মধ্যে সেদ্ধ ডিম ভরে দিন। ডিম যাতে বেরিয়ে না যায়, সে জন্য টুথপিক দিয়ে আটকে দিতে হবে। সেই সঙ্গে মোরগের পা দুটি সুতা দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। টুথপিকের সাহায্যে ডানাও মোরগের গায়ের সঙ্গে আটকে নিতে হবে যাতে রান্নার পরে দেখতে ভালো লাগে। একটা পাত্রে তেল গরম করে তাতে মাঝারি আঁচে মোরগটা ৮ থেকে ১০ মিনিট উল্টেপাল্টে সোনালি করে ভেজে তুলে নিন। ভাজা তেল একটু কমিয়ে নিয়ে তাতে ঘি মিশিয়ে আস্ত গরমমসলা ও তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজবাটা, আদা-রসুনবাটা, মরিচ-জিরা-ধনেগুঁড়া, গরমমসলার গুঁড়া, জায়ফল-জয়ত্রীবাটা আর ম্যারিনেশনের মসলা দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিতে হবে। এতে দই-বেরেস্তা-বাদামের মিশ্রণ দিয়ে আরও একবার ভালোমতো কষিয়ে ভাজা মোরগ দিয়ে দিন। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে উল্টেপাল্টে রান্না করে নিতে হবে। প্রয়োজন হলে অল্প পানি দিতে হবে। মাংস সেদ্ধ হয়ে ঝোল ঘন হয়ে এলে কেওড়া জল আর কিশমিশ দিয়ে মিনিট পাঁচেক দমে রেখে তেল উঠে এলে মোরগ মোসাল্লাম তৈরি।
খাসির গ্লাসি
উপকরণ: খাসির মাংস ১ কেজি, পেঁয়াজকুচি পৌনে ১ কাপ, পেঁয়াজবাটা ২ টেবিল চামচ, টক দই ১ কাপের ৩ ভাগের ১ ভাগ, বাদামবাটা সিকি কাপ, পোস্তবাটা আধা চা-চামচ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, মরিচগুঁড়া আধা চা-চামচ, জিরাগুঁড়া ১ চা-চামচ, গরমমসলার গুঁড়া আধা চা-চামচ, জায়ফল-জয়ত্রীবাটা ১ চা-চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ, কেওড়া জল আধা চা-চামচ, আস্ত গরমমসলা (দারুচিনি, এলাচি, লবঙ্গ, তেজপাতা) প্রতিটি ৩টা করে, সেদ্ধ ডিম ৪টি, তরল দুধ আধা কাপ, ক্রিম ১ চা-চামচ, আস্ত কাঁচা মরিচ ৪ থেকে ৫টি, লবণ স্বাদমতো, তেল আধা কাপ ও ঘি ৩ টেবিল চামচ।
প্রণালি: বড় টুকরা করা খাসির মাংসে স্বাদমতো লবণ ও টক দই দিয়ে মেখে রাখতে হবে ঘণ্টা দুয়েকের জন্য। তারপর প্যানে তেল ও ঘি গরম করে তাতে আস্ত গরমমসলা ও তেজপাতা দিয়ে হালকা ভেজে তাতে পেঁয়াজকুচি দিয়ে আবারও হালকা ভেজে নিতে হবে। তারপর এতে পেঁয়াজবাটা, আদা-রসুনবাটা, মরিচ-জিরাগুঁড়া, গরমমসলার গুঁড়া ও বাদামবাটা দিয়ে ভালো করে কষিয়ে দই-লবণে মাখিয়ে রাখা মাংস দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ঢেকে রান্না করতে হবে। প্রথমে ৭ থেকে ৮ মিনিট আঁচ বাড়িয়ে ও পরে কমিয়ে রান্না করতে হবে। মাংসের গায়ের পানিতে সেদ্ধ হতে দিতে হবে। মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে পোস্তবাটা, জায়ফল-জয়ত্রীবাটা, দুধ, ক্রিম, আস্ত কাঁচা মরিচ, কেওড়া জল ও সেদ্ধ ডিম দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে দমে রেখে বাকি রান্না শেষ করতে হবে।
ফলের কাস্টার্ড
উপকরণ: তরল দুধ ১ লিটার, চিনি স্বাদমতো, কাস্টার্ড পাউডার ৩ টেবিল চামচ, আপেল সিকি কাপ, সাগর কলা সিকি কাপ, সবুজ আঙুর সিকি কাপ, লাল আঙুর সিকি কাপ, পাকা আম সিকি কাপ, আনার দানা ২ টেবিল চামচ (সাজানোর জন্য)।
প্রণালি: আধা কাপ দুধ সরিয়ে রেখে বাকি দুধ প্যানে দিয়ে ভালোভাবে জ্বাল দিতে হবে। দুধ ফুটে উঠলে তাতে চিনি ও আধা কাপ দুধে গুলিয়ে রাখা কাস্টার্ড পাউডার মিশিয়ে অনবরত নেড়ে ঘন করে নামিয়ে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, ঠান্ডা হওয়ার পরে এই কাস্টার্ড আরও ঘন হয়ে যাবে। কাস্টার্ড অনবরত নেড়ে নেড়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। নয়তো সর পড়ে কাস্টার্ডের স্বাদ নষ্ট করে দেবে। কাস্টার্ড ঠান্ডা হয়ে গেলে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ফ্রিজে রাখুন। এরপর আপেল, কলা ও আম খোসা ছাড়িয়ে ছোট কিউব করে কেটে নিন। আঙুরও অর্ধেক করে কেটে নিতে হবে। পরিবেশনের একদম আগে ফ্রিজ থেকে কাস্টার্ড বের করে তাতে কেটে রাখা ফল আলতো করে মিশিয়ে ওপরে আনার দানা ছড়িয়ে পরিবেশন করতে হবে। কাস্টার্ডের সঙ্গে যেকোনো মিষ্টি ফল ব্যবহার করতে পারেন। শুধু লক্ষ রাখবেন, এমন কোনো ফল ব্যবহার করবেন না, যেটি থেকে পানি বের হয়। যেমন তরমুজ।