স্মার্ট সময়
ইন্টারনেটের খরচে কৌশলী হোন
হোম অফিস, ভিডিও মিটিং, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ইউটিউব বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিনোদন নেওয়ার জন্যও দরকার পড়ে ইন্টারনেট। তাই আজকাল অনেকের কাছে অনেকটা নিত্যপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে ইন্টারনেট। তাই ইন্টারনেটের খরচ কিছুটা কমাতে নিজে থেকে কৌশলী হওয়া জরুরি।
করোনাকালে স্কুলপড়ুয়া শিশুদের একটা চাপ কমেছে। পিঠের ব্যাগে গাদা গাদা বইয়ের ভার এখন তাদের ক্লান্ত করে না। তবে চাপ বাড়ছে অন্যদিক থেকে। সেটা অবশ্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে অভিভাবকের ওপরই বেশি।
অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস চলছে অনলাইনে। যার যার বাসা থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। চলছে পাঠদান। এতে ইন্টারনেট ডেটার ব্যবহার বেড়েছে। বেড়েছে খরচও। আর চাপটা সেদিক থেকেই। তবে মিতব্যয়িতা বলেও তো একটা কথা আছে। হোম অফিস, ভিডিও মিটিং, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ইউটিউব বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিনোদন নেওয়ার জন্যও দরকার পড়ে ইন্টারনেট। তাই আজকাল অনেকের কাছে অনেকটা নিত্যপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে ইন্টারনেট। তাই ইন্টারনেটের খরচ কিছুটা কমাতে নিজে থেকে কৌশলী হওয়া জরুরি।
বেশি ব্যবহারে ব্রডব্যান্ড
ইন্টারনেট ডেটার খরচ কমানোর সহজ পদ্ধতি হলো ব্রডব্যান্ড সংযোগ নেওয়া। মূল সুবিধা হলো, এতে সচরাচর ডেটা ব্যবহারের সীমা থাকে না। কতটুকু ব্যবহার হলো, লাগাম টানতে হবে কি না—এত শত ভাবার দরকার নেই। গতির বিচারে মাসিক দাম দিতে হয়। ওয়াই-ফাই রাউটারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে বাড়ির সবাই ব্যবহার করতে পারেন। সেই নির্দিষ্ট দূরত্বের আওতায় যদি দুটি বাড়ি পড়ে, তো একসঙ্গে ব্যবহার করতেই বা ক্ষতি কী?
ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (আইএসপি) এবং এলাকাভেদে ব্রডব্যান্ড সংযোগের প্যাকেজের খরচে তারতম্য তো আছেই। তবে মোটামুটি দাম শুরু মাসে ৫০০ টাকা থেকে। অনলাইনে ক্লাস করার পাশাপাশি অনেকে তো বাড়ি থেকে কাজও করছেন। যদি মনে হয় এই প্যাকেজে বাড়ির সবার কাজ চলছে না, তবে আলাদা সংযোগ না কিনে বেশি গতির প্যাকেজ ব্যবহার করতে পারেন। আরেকটি বিষয় অবশ্য মাথায় রাখতে পারেন।
ব্রডব্যান্ড সংযোগে আপনি ব্যবহার যতটুকুই করেন বা না করেন, তবু আপনাকে মাসে মাসে খরচ বহন করতে হবে। তাই বেশি গতির প্যাকেজ কেনার আগে ভেবে দেখুন সময় ভাগ করে ব্যবহার করতে পারবেন কি না। যেমন ক্লাস তো আর সারা দিন চলবে না কিংবা কাজও সব সময় থাকছে না। হয়তো সকালে সন্তানের ক্লাস শেষে অভিভাবক তাঁর কাজ শুরু করতে পারেন। তা ছাড়া ভিডিও মিটিং সব সময় না থাকলে ডেটার চাহিদাও বেশি থাকে না। স্বাভাবিক ওয়েব ব্রাউজিং আর ই-মেইল আদান-প্রদানের কাজে খুব বেশি ডেটার প্রয়োজনও নেই।
মুঠোফোনে মিতব্যয়ী
ব্রডব্যান্ড সংযোগ বাড়ির সবাই একসঙ্গে ব্যবহার করতে পারেন ঠিকই। তবে সেটা একদিক থেকে অসুবিধারও কারণ। খুব প্রয়োজনে ঘর ছেড়ে যাওয়ার সময় ইন্টারনেট সংযোগ ঘরেই রেখে আসতে হয়। আবার যতটুকু ব্যবহার, ততটুকু খরচের সুযোগও কম। তা ছাড়া দেশের সব জায়গায় ব্রডব্যান্ড সংযোগ এখনো পৌঁছায়নি। এসব বিষয় বিবেচনায় মুঠোফোন নেটওয়ার্ক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ইন্টারনেট ভালো অপশন। তবে খরচ তুলনামূলক বেশি মনে হতে পারে। এখানে মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের উদ্যোগের কথা বলে রাখি।
বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা মূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ দেওয়ার সুপারিশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এমন দাবি আরও জানানো হয় গত দুই-তিন মাসে। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের মাসে ১০০ টাকায় ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে টেলিটক। এই টাকাও অনলাইন ক্লাসের জন্য খরচ হবে না। শিক্ষার্থীর মুঠোফোনেই থাকবে। অন্যান্য সেবা গ্রহণে ব্যয় করা যাবে। বিষয়টি মাথায় রাখতে পারেন।
গ্রামীণফোনের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, কমিউনিকেশন প্যাক শিরোনামে নতুন কিছু ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করেছে তারা। এতে মাইক্রোসফট টিমস, জুম, স্কাইপ ফর বিজনেস, লিংকের মতো সেবাগুলোর ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্য অপারেটররা করোনাকালে বেশি ডেটার মাসিক প্যাকেজে গুরুত্ব দিয়েছে। তাই আপনার জন্য এই সময়ে কোন প্যাকেজটি উপযুক্ত, সেটা মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট দেখে ঠিক করে নিতে পারেন। এতে কমে আসবে আপনার ইন্টারনেট ব্যবহারের দৈনিক খরচ। এ ছাড়া কিছু অ্যাপ চালু রাখলে অযথা ইন্টারনেট খরচ হতে পারে, অপ্রয়োজনীয় এসব অ্যাপ মুছে ফেলতে পারেন মুঠোফোন থেকে। কোন অ্যাপে বেশি ডেটা খরচ হচ্ছে, সেটা মুঠোফোনে নিজেই দেখে নিতে পারেন। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে সেটিংস থেকে ‘ডেটা ইউজেস’ বিভাগে ঢুকে সহজে দেখে নিতে পারবেন। এরপর সেভাবে ব্যবস্থা নিলেই আপনার ইন্টারনেট খরচ কমে আসবে।