আপনিও কি কর্মক্ষেত্রে খারাপ ব্যবহারের শিকার?

কর্মক্ষেত্রে খারাপ ব্যবহারের শিকার হয়ে অনেকেই ভোগেন হতাশা আর আত্মবিশ্বাসহীনতায়
ছবি: পেক্সেলস

কেবল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাই নন, সহকর্মী, এমনকি অধস্তনের কাছ থেকেও খারাপ আচরণ পেতে হয় অনেক সময়। কেউ কথায় ঝাড়েন মনের ঝাল, তো কেউ দেখান অবজ্ঞা ও অবাধ্যতা। অনেক বস তো আবার ব্যক্তিগত রাগ, ক্ষোভ, হতাশা অধস্তনের ওপর ঝাড়ায় সিদ্ধহস্ত। কেউ হয়তো শারীরিক ভঙ্গি নিয়ে কটূক্তি করেন, কেউ আবার নারী-পুরুষের ভেদাভেদ টেনে আনেন কথার মধ্যে। কারও আবার কোনো এক ‘ভুতুড়ে’ কারণে বছরের পর বছর আটকে থাকে পদোন্নতি। বিশ্বজুড়েই রোজকার কর্মপরিসরে দুর্ব্যবহারের শিকার হয়ে থাকেন বহু মানুষ। সব মিলিয়ে ব্যাপারটা দাঁড়ায় এই, কর্মক্ষেত্রে ‘শান্তি’ নামক বস্তুটাই থাকে না। অথচ  দিনের বেশির ভাগ সময়ই আমরা কর্মক্ষেত্রে কাটাই। আর তাই সেখানকার অশান্তির প্রভাব যে ব্যক্তিগত আর পারিবারিক জীবনেও পড়বে—সেটাই স্বাভাবিক।

কথায় বলে, ব্যবহারে বংশের পরিচয়। তবে সেই কথাটা মাথায় রেখে কয়জন অন্যের সঙ্গে আচরণ করেন? আচার-ব্যবহারের বেলায় নিজেকে সংযত রাখেন? অন্যের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলেই যে আপনি ‘প্রতিদানে’ ভালো ব্যবহার পাবেন, তেমনটাও সব সময় ঘটে না। আবার, অন্যের খারাপ আচরণের প্রভাবেও অনেকে রাগান্বিত হয়ে পড়েন। চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলতে পারেন কেউ। আপনি এও জানেন নিশ্চয়ই, ‘রেগে গেলেন, তো হেরে গেলেন’। তবে চাইলেই সব সময় সব বঞ্চনাকে তুচ্ছজ্ঞান করে হাসিমুখে এগিয়ে যাওয়াও সম্ভব হয় না। কর্মক্ষেত্রে খারাপ ব্যবহারের শিকার হয়ে অনেকেই ভোগেন দীর্ঘমেয়াদী হতাশা আর আত্মবিশ্বাসহীনতায়। এই রাগ, দুঃখ, হতাশা, ক্ষোভ সামলে কীভাবে কর্মজীবনে নিজেকে একটু ভালো রাখা যায়, তার পাঁচটি ধাপ জেনে নিন আজ।

বসের বকা, সহকর্মীর উটকো মন্তব্য— মিলিয়ে ব্যাপারটা দাঁড়ায় এই, কর্মক্ষেত্রে ‘শান্তি’ নামক বস্তুটাই থাকে না
ছবি: পেক্সেলস

ধাপ এক

প্রথমে ভেবে দেখুন, কোন কোন বিষয় আপনার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, আর কোনগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কারও স্বভাবই যদি হয় দুর্ব্যবহার করা, আপনি তো আর তাঁকে চাইলেই বদলে ফেলতে পারছেন না, তা–ই না? আবার, আপনার কাজের কোনো ভুল থেকে থাকলে সেটা ঠিক করে ফেলা আপনার নিয়ন্ত্রণে। তাই যেগুলোর ওপর আপনার নিয়ন্ত্রণ আছে, সেখানে ইতিবাচকতা নিয়ে আসুন। নিজের সেরাটা দিন। যাতে অন্য কেউ আপনার কাজ নিয়ে কিছু বলতে না পারে। এরপরও যদি কেউ কথা শোনান, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত সমস্যা, চারিত্রিক দুর্বলতা।  

ধাপ দুই

সাধারণত দেখা যায়, খারাপ আচরণের একটা ধারা থাকে। কোন পরিস্থিতিতে একজন মানুষ আপনার সঙ্গে কোন ধরনের দুর্ব্যবহার করছেন, কাজ করতে করতে আপনি তা বুঝে ফেলবেন একসময়। প্রায়শই ঘটতে থাকা এই ‘চিত্রনাট্য’ আপনার জানা হয়ে গেলে আপনি সহজে সেই পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলাতে সক্ষম হবেন। তাই ‘পূর্বানুমান’ অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত রাখুন।

ধাপ তিন

মনে রাখবেন, আপনার সংসার চালানোর জন্য, মাসে কিছু টাকা আয় করার জন্য আপনি চাকরিটি করছেন। ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক এর সঙ্গে আপনার নেই। কেবল অর্থনৈতিক সম্পর্ক। নিজের কাজটা সর্বোচ্চ সততা আর নিষ্ঠার সঙ্গে করবেন। মাস শেষে টাকা গুনবেন। এর মধ্যে হর্তাকর্তা বা সহকর্মীদের অকারণ খারাপ ব্যবহারকে গনায় ধরবেন না। ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না। তাঁদের এই সব কথাবার্তা, আচরণে আপনি কতটা আহত হচ্ছেন, সেটা কিন্তু আপনার হাতে।  চাইলেই আপনি তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা সবচেয়ে বড় জিনিসটা কী, জানেন? নিজের মন। আপনি অন্যের কথা গায়ে না লাগালেই কিন্তু তাঁর আর ক্ষমতা নেই আপনাকে ভেতর থেকে দুমড়েমুচড়ে ফেলার। তাই নিজের আনন্দে বাঁচুন।

ধাপ চার

‘ব্যক্তি’কে তাঁর ‘ব্যবহার’ থেকে আলাদা করে ভাবুন। একই অফিসে কাজ করেন, এই পরিচয়ের বাইরেও তাঁর আলাদা একটা পরিচয় আছে অবশ্যই। তিনিও তো একজন মানুষ। তিনিও হয়তো চাপে আছেন। মানসিকভাবে ভালো অবস্থায় নেই। হয়তো তিনি পারিবারিক অশান্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, হয়তো তিনি একজন স্নেহ-ভালোবাসা বঞ্চিত ‘অভাগা’ ব্যক্তি, অথবা হয়তো তাঁর কাছের মানুষটি মারাত্মক অসুস্থতায় ভুগছেন। এক জায়গার হতাশা বা ক্ষোভ অন্য জায়গায় ‘বিস্ফোরিত’ করার প্রবণতা তৈরি হয় অনেকের মধ্যেই। মনে রাখবেন, যে ব্যক্তি সুখী আর নির্ভার—সে কখনোই অকারণে সহকর্মী বা অধস্তনের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে না!

ধাপ পাঁচ

কোন পরিস্থিতিতে আপনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন, তা ঠিক করে নিন। অকারণে কেন কথা শুনবেন? মাত্রা ঠিক রেখে প্রতিক্রিয়া দেখান। ব্যাপারটা অনেকটা চিত্রনাট্যের সংলাপের মতো। আপনার ‘সংলাপ’ ঠিক করার সময় খেয়াল রাখুন যুক্তি, শান্তি আর স্বাচ্ছন্দ্যের ওপর। ‘সেন্স অব হিউমার’ বা রসবোধের পরিচয়ও দিতে পারেন অবস্থা বুঝে। প্রয়োজনে আরও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে পরিস্থিতি বিস্তারিত জানিয়ে মেইল করতে পারেন। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হতে পারেন। মনে রাখবেন, কারণ ছাড়া দিনের পর দিন আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার অধিকার কারও নেই। সময় থাকতেই নিজের অধিকারের চর্চা করুন।

 
সূত্র: ফোর্বস