অ্যামেচার রেডিও সোসাইটির মিলনমেলা
অ্যামেচার রেডিও সোসাইটি অব বাংলাদেশের (এআরএসবি) আয়োজনে ১২ মার্চ রাজধানীর পূর্বাঞ্চলে অনুষ্ঠিত হলো মাঠপর্যায়ের সদস্যদের মিলনমেলা। দিনব্যাপী সেই কার্যক্রমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এআরএসবির সদস্যরা জাতীয় সংগীত ও পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু করেন আয়োজন। হ্যাম রেডিও লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও লাইসেন্স নিতে আগ্রহীরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে দিনব্যাপী নানা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দিনটি উদ্যাপন করেন। লুকায়িত রেডিও ট্রান্সমিটার উদ্ধার প্রতিযোগিতা (ফক্স হান্টিং), স্যাটেলাইট ও রেডিওর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের হ্যাম সদস্যদের সঙ্গে হাতে–কলমে যোগাযোগের কৌশল, অ্যামেচার রেডিও যন্ত্র প্রদর্শিত হয় এদিন।
কী এই অ্যামেচার রেডিও?
এআরএসবির জেনারেল সেক্রেটারি অনুপ কুমার ভৌমিক জানান, অ্যামেচার রেডিও হলো একটি রেডিও বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যক্রম। ১৮৯০ সালে রেডিও বিজ্ঞানী মার্কনির হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই রেডিওর কার্যক্রম। ১৯২৫ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে আন্তর্জাতিক অ্যামেচার রেডিও ইউনিয়ন যাত্রা শুরু করে। আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন সারা বিশ্বে অ্যামেচার রেডিওর নিয়মকানুনসহ এর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে অ্যামেচার রেডিও লাইসেন্স অপারেটরের সংখ্যা ৩০ লাখের বেশি। প্রত্যেক দেশের সরকার আইটিইউয়ের গাইডলাইন অনুসারে তার দেশের অ্যামেচার রেডিওর লাইসেন্স প্রদান এবং নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
কীভাবে পাবেন কলসাইন?
কলসাইন হলো ব্যবহারকারীকে দেওয়া সরকারের পরিচয় নম্বর। বাংলাদেশে অ্যামেচার রেডিওর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিটিআরসি)। প্রতিষ্ঠানটি এই কলসাইন দেয়। সদ্য প্রয়াত সাইফ শহীদের হাত ধরে ১৯৭৯ সাল থেকে বাংলাদেশে অ্যামেচার রেডিওর চর্চা শুরু হয়। একজন অ্যামেচার রেডিও লাইসেন্স অপারেটর হতে হলে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বয়স অন্তত ১৮ বছর হতে হবে (যদিও বিশ্বের অন্যান্য দেশে ১২ বছরের নাগরিকদের লাইসেন্স প্রদানের নিয়ম আছে)। ন্যূনতম এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। বিটিআরসির অ্যামেচার রেডিও সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লাইসেন্স এবং কলসাইন পেতে হবে।
লাইসেন্সপ্রাপ্ত একজন অ্যামেচার রেডিও অপারেটর নির্ধারিত তরঙ্গে সারা বিশ্বসহ মহাশূন্যের নভোচারীদের সঙ্গে বেতার যোগাযোগ, উপগ্রহের মাধ্যমে বেতার যোগাযোগ ও গবেষণা, রেডিওর মাধ্যমে ছবি আদান–প্রদান, আবহাওয়া উপগ্রহ থেকে ডেটা সংগ্রহ করে আবহাওয়া বিশ্লেষণ এবং রেডিও নিয়ে গবেষণা করতে পারেন।
অ্যামেচার রেডিও কী করে?
যেকোনো বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে অ্যামেচার রেডিওর ভূমিকা অপরিসীম। কেননা, বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবার আগে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। সঠিক তথ্য না জানায় সাধারণ মানুষের কাছে সাহায্য পাঠানো কঠিন হয়ে পড়ে। আর এই কঠিন সময়ে একমাত্র ভরসা হয়ে থাকে অ্যামেচার রেডিও।
অ্যামেচার রেডিওর একটি বড় সুবিধা হলো, নিজ দেশসহ প্রয়োজনীয় তথ্য বহির্বিশ্বে মুহূর্তেই পাঠানো যায়। যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ নেপালের ভূমিকম্প। অ্যামেচার রেডিও অপারেটররা সব সময় তাঁর দেশের অঘোষিত দূত। কেননা, একজন অ্যামেচার রেডিও অপারেটর দিনের কোনো না কোনো সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অ্যামেচারদের সঙ্গে বেতার যোগাযোগ করে থাকেন। সবাই তাঁর দেশের ভালো দিকগুলো রেডিওর মাধ্যমে তুলে ধরেন। অ্যামেচার রেডিও সোসাইটি অব বাংলাদেশের (এআরএসবি) আমন্ত্রণে অনেক বিদেশি রেডিও বন্ধুরা এসেছেন।
অ্যামেচার রেডিও সব সময় মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারকে সহযোগিতা করে থাকে। বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশকের পর অ্যামেচার রেডিও স্থিমিত হয়ে পড়ে। ২০১৩ সাল থেকে বিটিআরসির যুগোপযোগী কিছু সিদ্ধান্তে বর্তমানে বাংলাদেশের অ্যামেচার রেডিও অপারেটররা দেশে ও দেশের বাইরে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন।