‘অভিনয় নয়, যা দেখছেন, সেটা সত্যিকারের অনুভব’

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে ‘আমার বাংলাদেশ’ছবি: সংগৃহীত

: লরা, ছুটিতে তুমি বাড়ি যাচ্ছ না?
: আমার যাওয়ার মতো কোনো বাড়ি নেই।


উৎসব একাই কাটে লরার। পৃথিবীতে আপন বলে কেউ নেই তার। বিদেশের এক ডরমিটরিতে বড়দিনে ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর সময় এই কথাটা জানতে পারে লরার বাংলাদেশি বন্ধু জুঁই। লরাকে সে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। উদ্দেশ্য, লরাকে নববর্ষ উদ্‌যাপনের সঙ্গী করা। বিদেশি লরাকে নিয়ে জুঁই প্রথমে আসে তার মায়ের কাছে। সেখান থেকে তারা শামিল হয় মঙ্গল শোভাযাত্রায়। তারপর এই দুই বন্ধু দেশ ঘুরতে বের হয়।

জীবনানন্দ দাশ যেমন লিখেছিলেন, ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর’। ভিনদেশি লরারও একই উপলব্ধি। বাংলার ফসলের খেত, জঙ্গল, পাহাড়, চা–বাগান, সমুদ্র, বিয়েবাড়ি, সংস্কৃতি, বাউলগান আর সবার চেয়ে এগিয়ে থাকা এই বাংলার মানুষের আন্তরিক আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয় সে। আর মুগ্ধ হয় এই দেশের বৈচিত্র্যময় খাবারের স্বাদে। কেননা এখানে রান্না করা খাবারের অপরিহার্য এক উপাদান হলো পরম মমতার স্পর্শ।

কেননা এখানে রান্না করা খাবারের অপরিহার্য এক উপাদান হলো পরম মমতার স্পর্শ
ছবি: সংগৃহীত

সাক্রাইন উৎসবের সন্ধ্যায় আলো–আঁধারির মধ্যে দাঁড়িয়ে তার মনে হয়, এই বাংলা তার বড্ড আপন। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে এক মেয়ে তার হাতে একটা শঙ্খ ধরিয়ে দিয়ে দৌড় দেয়। লরা যখন বলে, ‘দাঁড়াও, টাকা নিয়ে যাও’। মেয়েটি একবার তাকিয়ে বলে, ‘ন লাগিব, গিফট ফর ইউ’। ওই মুহূর্তে লরা বুঝেছিল, সবকিছু টাকা দিয়ে পরিশোধ করা যায় না। আর বাংলাদেশ এমন সবকিছুতেই ভরপুর। তাই জুঁই যখন জানতে চায়, ‘তোমার কেমন লাগছে’? যে মেয়েটির আপনজন বলতে কেউ নেই, সে উত্তর দেয়, ‘মনে হচ্ছে, এই আমার বাড়ি’।

এমনই এক গল্প নিয়ে মেরিল–রাঁধুনীর উদ্যোগে, সান কমিউনিকেশনস লিমিটেড বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনে নির্মাণ করেছে সাড়ে তিন মিনিটের একটি ভিডিও কনটেন্ট ‘আমার বাংলাদেশ’।

এখানে বাংলাদেশি মেয়ে জুঁই চরিত্রে অভিনয় করেছেন নিদ্রা দে নেহা। আর পর্দার লরা হয়ে উঠেছেন ব্রিটিশ কন্যা অ্যালেক্স ডবসন। নেহা বলেন, ‘এটাকে কেবল একটা ট্রাভেল ভ্লগ ভাবা হলে ভুল হবে। এটা আমাদের দেশ, দেশের সৌন্দর্য, দেশের মানুষ আর তাঁদের আন্তরিকতার একটা স্বতঃস্ফূর্ত বয়ান। এই ভিডিওতে অভিনয় করতে গিয়ে আমি নতুন করে বাংলাদেশের প্রেমে পড়েছি। আর এই প্রেম সহজে ভাঙার নয়।’


অ্যালেক্সের এই প্রথম বাংলাদেশে আসা, এ কাজের উদ্দেশ্যে। অভিজ্ঞতা আর অনুভূতি জানাতে তিনি বললেন, ‘আমি থিয়েটারে কাজ করি। কাজটা শুরুতে আমার কাছে ভীষণ চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছিল। কিন্তু কাজ করতে এসে দেখি, সেটা নিজে নিজেই হয়ে যাচ্ছে। আমাকে বিশেষ কিছু করতে হয়নি। আমাকে যেভাবে দেখা গেছে, সেটা আসলে অভিনয় নয়, সত্যিকারের অনুভব। আমার মনে হয়েছে, আমি এই দেশের মানুষেরই একজন। চলে যাওয়ার সময় খুব কষ্ট হয়েছে। মনে হচ্ছে, আমার হৃদয়ের একটা কণা কোথাও ফেলে রেখে এসেছি। যেটা আর খুঁজে বের করে নিয়ে আসা সম্ভব নয়।’

বিজ্ঞাপন বার্তা