ঘরে রাখা তাজা ফুল শুকিয়ে যায় কদিনেই। জমাট পানিতে ফুল রাখাও এক বিপত্তি। এ পানিতে মশা হতে পারে। রোমান্টিক আবহে যেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের ‘কর্কশ’ হুমকি। রোজ পানি পাল্টানোর কথা কজনেরই–বা মনে থাকে? ফুল পচে গেলে দুর্গন্ধও হতে পারে। আবার কৃত্রিম ফুলে তো প্রকৃতি থাকে না। এর চেয়ে বরং প্রাকৃতিক শুকনো ফুল বা ড্রাই ফ্লাওয়ার ঘরে রাখতে পারেন। এগুলো থাকেও বেশি দিন। ঝক্কিও কম।
সাজানো এ ঘর
র্যাডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের প্রধান ও অন্দর সজ্জাবিদ গুলসান নাসরীন চৌধুরী বাতলে দিলেন শুকনো ফুল দিয়ে একটু অন্যভাবে ঘর সাজানোর কিছু উপায়—
বাড়ির প্রবেশপথে দরজার বাইরে একটা পুরোনো শুকনো গাছের আঁকাবাঁকা ডাল বা গুঁড়ি রাখা যায়। এটি হতে পারে আমগাছের ডাল, পেয়ারাগাছের ডাল কিংবা সুবিধামতো অন্য কোনো গাছের ডাল। ডাল বা গুঁড়িটির কয়েকটি সুবিধামতো জায়গায় ছিদ্র করে নিন। ডালটিকে একটি কাঠের পাটাতনে বসিয়ে নিন। ছিদ্রগুলোতে থোকা থোকা শুকনো ফুল সাজিয়ে রাখতে পারেন। কিছু শুকনো ফুল ও পাতা এই ছিদ্রগুলোতে ঝুলিয়েও দিতে পারেন। ডালের গোড়ায় কিছু পাথর রাখা যায়, কৃত্রিম ঘাস রাখা যায়। বসার ঘর বড় হলে সেখানেও এভাবে সাজিয়ে রাখতে পারেন।
শুকনো কাশফুলও থোকা থোকা করে সাজাতে পারেন। কাশফুলের শুকনো লম্বা পাতাও সাজানো যায়। মাটির একটি ছড়ানো চাড়ি বা কোনো পাত্রের মধ্যে আঠার সাহায্যে ওয়েসিস (ফুলের তোড়া কিনলে ভেতরে সবুজ রঙের ফোম–জাতীয় যে জিনিসটি পাওয়া যায়) বা এ–জাতীয় কোনো কিছুতে আটকে নিন। ওয়েসিসে ফুল ও পাতাগুলোকে গেঁথে দিন। ইকেবানা ধারাতেও সাজাতে পারেন। প্রবেশপথ বা ড্রয়িংরুমের অন্য একটা পাশ অথবা খাবার ঘরের একটা কোণ এভাবে সাজানো যায়।
ড্রয়িংরুম ও খাবার ঘরের মাঝের জায়গাটাতে স্লাইডিং দরজা থাকলে তার ফ্রেমের ওপরে দেয়ালেই একটি ঝাড় (শুকনো ডাল, পাতা ও ফুল দিয়ে) তৈরি করতে পারেন। এই জায়গায় ফ্রেমের ওপর বরাবর দেয়ালে হুকের সাহায্যে শোলা আটকে দিতে পারেন। ১ ইঞ্চি পুরু, ৩ ইঞ্চি চওড়া শোলাটি লম্বায় হতে পারে ফ্রেমের সমান বা এর চেয়ে ছোট। শোলার ওপরে শুকনো ফুলগুলো আটকে দিন।
লিভিং রুমের একটি কোণের ছাদ থেকে ছোট একটি গাছের গুঁড়ি হুকের সাহায্যে ঝুলিয়ে দিতে পারেন। এই গুঁড়িতে অর্কিড বা অন্য কোনো শুকনো ফুল ঝুলিয়ে রাখতে পারেন।
শোবার ঘরে বিছানার পাশে অর্থাৎ পাশ টেবিলে কাচের পাত্রে সাজিয়ে রাখতে পারেন শুকনো ফুল। পাশে একটা মোম রেখে দিন।
শুকনো ফুল সাধারণত তাজা ফুলের মতো উজ্জ্বল হয় না। যেখানে এসব ফুল রাখবেন, সেখানে খানিকটা আলো ফোকাস করার ব্যবস্থা করুন। ছাদ থেকে খানিকটা আলো ফেলতে পারেন। কিংবা ফলস সিলিং থেকে আলোর ব্যবস্থা করতে পারেন, যাতে উল্টো দিক থেকে আলো পড়বে ফুলগুলোর ওপর।
যত্নআত্তি
যদিও এসব ফুলে গন্ধ নেই, তবু তো প্রাকৃতিক। পানি দিতে হয় না এসব ফুল সংরক্ষণে। শুকনো ফুলের যত্ন সম্পর্কে জেনে নিন।
● ঘরের ভেতরে রাখাই ভালো এসব ফুল। সরাসরি সূর্যের আলো বা অন্য কোনো আলো, উত্তাপ এবং আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখুন।
● যেসব জায়গায় রাখলে ঝাঁকুনি লাগতে পারে, সেসব জায়গায় ড্রাই ফ্লাওয়ার রাখবেন না। সাজিয়ে রাখার পরেও নাড়াচাড়া না করাই ভালো। ঝাঁকুনি বা নাড়াচাড়ায় পাপড়ি ভেঙে যাওয়ার ভয় থাকে।
পরিষ্কার রাখতে
এসব ফুল পরিষ্কার করার জন্য বিভিন্ন ক্লিনিং স্প্রের ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া ধুলা পরিষ্কারের জন্য ব্লো ড্রায়ার ব্যবহার করতে পারেন ‘কুল’ বা ‘ঠান্ডা’ মোড অথবা ‘নো হিট’ বা ‘উত্তাপহীন’ মোড দিয়ে।
পালকের ডাস্টার দিয়েও পরিষ্কার করা যায় এসব ফুল, তবে এভাবে পরিষ্কার করতে গেলে ভঙ্গুর পাপড়িগুলো ভেঙে যাওয়ার ভয় তো থাকেই। তাই খুবই সাবধানতার সঙ্গে পরিষ্কার করতে হবে। সম্ভব হলে এই পদ্ধতির পরিবর্তে ওপরের অন্য দুটি পদ্ধতিই বেছে নিন ড্রাই ফ্লাওয়ারের পরিচ্ছন্নতায়।
শুকনো ফুলের খোঁজ
রাজধানীর বনানীতে দোলনচাঁপা ফুল বিতান, বনানী ফ্লাওয়ার শপ, এবি ফ্লাওয়ার সেন্টার, এসএ ফ্লাওয়ার্স ও ফ্লাওয়ার্স পেটাল দোকানে পাবেন স্টাটিস বা লিমোনিয়া–জাতীয় ফুল। প্রতিটি স্টিকের দাম পড়বে ১৫০-২০০ টাকা। এ ছাড়া বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকার দোলনচাঁপা ফুল বিতানে অর্ডার করলে শুকনো জিপসোফিলা, ইউস্টোমা, ওয়াক্স ফ্লাওয়ার, পুসি উইলো ফ্লাওয়ার ও গোলাপের সরবরাহ করে তারা। এসব ফুলের ধরন অনুযায়ী প্রতিটি স্টিকের দাম পড়বে ২০০ থেকে ১ হাজার টাকা। উত্তরা, বনানী ও ধানমন্ডিতে অবস্থিত নোয়াহ্ হোম দোকানেও পাবেন শুকনো ফুল।