আপনি কি পরিবারের মেজ সন্তান? অভিনন্দন!
অনেক পরিবারে বড় বা ছোট সন্তান যেভাবে মা–বাবার মনোযোগ পান, মেজরা সেভাবে পান না। অনেক সময় মা–বাবারা মেজ সন্তানকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতেও ব্যর্থ হন। ফলে মেজ সন্তানেরা সাধারণত বিশেষ ধরনের মনস্তাত্ত্বিক অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যান। মেজরা বড় হন খানিকটা অলক্ষ্যে। বড় হওয়ার ভার অনেকটা নিজেদের কাঁধে নিয়েই বড় হন তাঁরা। ফলে অনেক সময় তাঁদের ভেতর দেখা যায় আত্মবিশ্বাসের অভাব, মনোযোগ পাওয়ার নানারকম চেষ্টা করেন তাঁরা, কারও কারও মনোভাব হয়ে ওঠে বিদ্রোহী। অনেক সময় এ রকম কিছু নেতিবাচক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকে মেজ সন্তানদের। এটাকে কেতাবি ভাষায় বলে ‘মিডল চাইল্ড সিনড্রোম’। অনেকে ‘মিডল চাইল্ড’ না হয়েও এ ধরনের বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে পারেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেজরা এসব প্রতিবন্ধকতা বা নেতিবাচক এনার্জির তোয়াক্কা না করে বেড়ে ওঠেন নিজেদের মতো। প্রাথমিক অবস্থায় মানিয়ে নিতে কিছুটা অসুবিধা হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা মা–বাবা, পরিবার ও পরিস্থিতির মাধ্যমে তৈরি অসমতার বেড়া ডিঙিয়ে, নিজের ওপর ভর করে এগিয়ে যান স্বাচ্ছন্দ্যে। ফলে তাঁরা হন স্বাধীনচেতা, স্বাবলম্বী, আত্মনির্ভরশীল, আত্মবিশ্বাসী, মিশুক আর আন্তরিক। চট করে জেনে নেওয়া যাক পরিবারের মেজ সন্তানের কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।
১. পরিবারের মেজ সন্তানেরা বড় বা ছোট সন্তানের মতো মা–বাবার সময় বা মনোযোগ না পেলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা বঞ্চিত বা অবমূল্যায়িত বোধ করেন না। তাঁরা বরং ছোটবেলা থেকেই অবচেতনে নিজের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার শিক্ষা পান। স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার চেষ্টা করেন।
২. মেজ সন্তানদের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার দক্ষতা বেশি। যেকোনো বিপর্যয় সহজে সামাল দিতে পারেন।
৩. মেজ সন্তানদের ব্যক্তিত্ব অন্য কারও দ্বারা প্রভাবিত হয় না। তাই তাঁরা নিজেরাই নিজেদের ব্যক্তিসত্তা খুঁজে পান, শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের অধিকারী হন। মানসিকভাবে অধিক শক্তিশালী ও সফল হওয়ার প্রবণতাও তাঁদের ভেতর বেশি।
৪. কানাডিয়ান মনোবিদ, লেখক ক্যাথেরিন স্যামন ও জার্মান লেখক ক্যাটরিন শুমানের ‘দ্য সিক্রেট পাওয়ার অব মিডল চিলড্রেন’ বইটি বেশ আলোচিত। এই বইয়ে লেখকদ্বয় বলেছেন, প্রাথমিকভাবে মেজ সন্তানেরা পরিবারে তাঁদের ভূমিকা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। তবে সময়ের সঙ্গে নিজেরাই সেটি কাটিয়েও ওঠেন। সংসারে শান্তি ও যোগাযোগে ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে মেজ সন্তানদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বড় ও ছোট সন্তান উভয়ের সঙ্গেই শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজার রাখার সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করেন তাঁরা। সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকার প্রবণতাও তাঁদের মধ্যে বেশি। এসব কারণে পরিবারের মেজ সন্তানকে বলা হয় ‘দ্য পিসকিপার’।
৫. ছোটবেলা থেকেই আধিক্যের সঙ্গে পরিচয় না থাকায় মেজ সন্তানেরা অল্পে তুষ্ট থাকেন। খুঁতখুঁতে স্বভাবের হন না। তাঁদের মধ্যে অভিযোগ করার প্রবণতাও কম।
৬. নিজ উদ্যোগে যোগাযোগদক্ষতা অর্জন করার ফলে তাঁরা সাধারণত বহির্মুখী, মিশুক ও পরোপকারী হন।
৭. একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মা–বাবার শেষ বয়স কাটে মেজ সন্তানের সঙ্গে। বড় ও ছোট সন্তানেরা যখন পরিবার থেকে বেরিয়ে নিজেদের পেশা ও পরিবার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তখন দেখা যায় মেজ সন্তানেরাই শেষমেশ মা–বাবার দায়িত্ব নেন। এর একটা কারণ হতে পারে, মেজ সন্তানেরা ছোটবেলায় মা–বাবার সঙ্গে সবচেয়ে কম সময় কাটান। বড় হয়ে সেটি পুষিয়ে নেওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়।
আপনি মেজ সন্তান হলে কাকে বিয়ে করবেন
৮১ বছর বয়সী মার্কিন মনোবিদ ও লেখক ডা. কেভিন লেম্যানের মতে, এক পরিবারের মেজ সন্তান ও আরেক পরিবারের ছোট সন্তানের দাম্পত্যজীবন অসাধারণ হয়ে থাকে। একাধিক গবেষণায়ও তার প্রমাণ মিলেছে। এ ধরনের জুটির বিচ্ছেদের হারও সবচেয়ে কম।
দেখা যায় বিপরীত চিত্রও
অনেক পরিবারের মেজ সন্তান ছোটবেলা থেকে অবজ্ঞা ও অবহেলার শিকার হয়ে নিজেদের নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগেন। তৈরি হয় ‘কনফিডেন্স ইস্যু’। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করেন তাঁরা। খেই হারিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হন। তাঁদের মনে হতে পারে, ‘আমি যথেষ্ট নই।’ যোগাযোগের দক্ষতাও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
সবাই একরকম নন
তবে সব পরিবার একরকম নয়। আবার প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিসত্তাও আলাদা। তাই সব পরিবারের মেজ সন্তানের ক্ষেত্রে কথাগুলো পুরোপুরি খাটে না। তবে মা–বাবার দায়িত্ব—প্রত্যেক সন্তানকেই যথাযথ মনোযোগ ও প্রচেষ্টা নিয়ে বড় করে তোলা।
সূত্র: ওয়েব এমডি ও হেলথলাইন