ব্যাংকিং ও বিমা বিভাগে কেন পড়বেন?
বিশ্বের সবচেয়ে নিয়ন্ত্রিত শিল্পগুলোর একটি আর্থিক শিল্প। পৃথিবীর সর্বত্র এই শিল্প পরিচালিত হয় প্রধানত তিনটি মাধ্যমে—ব্যাংকিং ব্যবস্থা, ক্যাপিটাল মার্কেট ও বিমা ব্যবস্থা। আমাদের দেশে বিমা এখনো খাত হিসেবে ততটা সমাদৃত না। অথচ বিমার রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব সুদূরপ্রসারী। বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় যেভাবে দুর্ঘটনা বাড়ছে, তা মোকাবিলায় শিল্পোদ্যোক্তারা বিমার ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলেও বিভিন্ন ধরনের বিমার প্রচলন হচ্ছে। একটা সময় আসবে যখন বিমা আমাদের দেশেও একটি সর্বজনীন বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কেন্দ্রে প্রয়োজন একঝাঁক দক্ষ, চৌকস ও মেধাবী ব্যাংকার। এই দক্ষ ও পেশাজীবী ব্যাংকার বা আর্থিক ব্যবস্থাপনায় যোগ্য কর্মী প্রস্তুত করার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে যাত্রা শুরু করে ব্যাংকিং বিভাগ। পরে ২০১২ সালে ব্যাংকিং বিভাগের সঙ্গে যুক্ত করা হয় বিমা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিভাগ চালু আছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ একসঙ্গে প্রচলিত আছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং অথবা ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগ আছে।
ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের বেশির ভাগ কোর্সে মুদ্রা বাজার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার ওপর আলোকপাত করা হয়। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিমা কোম্পানি ব্যবস্থাপনার ওপর।
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে বর্তমানে চাকরির বাজারের একটা বড় অংশ দখল করে আছে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এই খাতে উচ্চ বেতন-বোনাসের পাশাপাশি নানা রকম আর্থিক ও অনার্থিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা ছাড়াও কর্মপরিবেশ, ব্যক্তিগত উন্নয়ন ও পদোন্নতি, সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা, নানা কারণে তরুণদের কাছে ব্যাংকিং পেশা বেশ সমাদৃত।
বিসিএসসহ সরকারি বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রেও ভালো করছে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা। বিসিএসে ট্যাক্স ও অডিটে এই বিভাগের অনেক শিক্ষার্থী জায়গা করে নিয়েছে। যাঁরা শিক্ষকতায় আগ্রহী, তাঁরা ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স নিয়ে পড়ে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে পারেন। এ ছাড়াও বিআইবিএম, বিআইসিএমসহ বিভিন্ন ব্যাংকের ট্রেনিং ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ আছে।
চাইলে এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষাও নিতে পারেন। অনেক শিক্ষার্থীই স্নাতক শেষ করে জিম্যাট বা জিআরই এবং আইইএলটিএস বা টোয়েফল দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া বা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বৃত্তিসহ উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে ব্যাংকারদের জন্য বিশেষায়িত ও পেশাগত ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ আছে। যেমন দ্য চার্টার্ড ব্যাংকার ইনস্টিটিউট (ইউকে) থেকে ‘চার্টার্ড ব্যাংকার সার্টিফিকেট’ অর্জন করা যায়।