বিশ্বখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নামকরণ যেভাবে হলো

পৃথিবীর বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশির ভাগেরই ইতিহাস পুরোনো। এসব প্রতিষ্ঠানের নামকরণের পেছনেও আছে বিচিত্র সব গল্প। খোঁজ নিয়েছেন জাহিদ হোসাইন খান

ইংরেজিভাষীদের সবচেয়ে পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়

১২০১ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম একজন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হন।
ছবি: পেক্সেলস

৩৯টি কলেজ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ১০৯৬ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। এটি ইংরেজিভাষী সবচেয়ে পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়। ১১৬৭ সালে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজ শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিষিদ্ধ হলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বেড়ে যায়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণের নির্ধারিত কোনো ইতিহাস জানা যায় না। তবে অক্সফোর্ড শব্দটি আদি ইংরেজি শব্দ অক্সানফোর্ডা থেকে উদ্ভূত। নদীর যে অংশ ষাঁড়সহ গবাদিপশুরা নিরাপদে পার হতে পারে, তাকে অক্সানফোর্ডা বলা হতো। টেমস নদীর গভীরতা এই এলাকায় কম বলে গবাদিপশুকে নদী পারাপারের জন্য এই এলাকায় পাঠানো হতো। ১২০১ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম একজন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হন। ১২৪৮ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি রাজা তৃতীয় হেনরির কাছ থেকে রাজকীয় সনদ পায়।

গণ্ডগোল থেকে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু

ক্যাম (পুরোনো নাম গ্রানটা) নামে একটি নদীকে অবলম্বন করে এই শহর গড়ে উঠেছিল।
ছবি: পেক্সেলস

১২০৯ সালে যাত্রা শুরু করে আরেক প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। শোনা যায়, স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক অক্সফোর্ড ছেড়ে কেমব্রিজ গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেন। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ শহরের নাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম করা হয়েছিল। তবে এখন উল্টো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই শহরটি পেয়েছে আলাদা পরিচিতি। ক্যাম (পুরোনো নাম গ্রানটা) নামে একটি নদীকে অবলম্বন করে এই শহর গড়ে উঠেছিল। ১২২৫ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করা হয়।

দানের জমি ও বই থেকে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু

হার্ভার্ড নামের এক ধর্মযাজকের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রাখা হয়
ছবি: পেক্সেলস

১৬৩৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে এটি ছিল চার্চ। ১৬৩৮ সালে আমেরিকা অঞ্চলের প্রথম ছাপাখানা স্থাপিত হয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে ১৬৩৯ সালে জন হার্ভার্ড নামের এক ধর্মযাজকের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রাখা হয়। তখনকার হিসাবে ৭৮০ পাউন্ড ও প্রায় ৪০০ বই বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করেন তিনি।

ভারতবর্ষে অর্জিত টাকায় গড়ে ওঠা মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়

ইয়েল ইউনিভার্সিটি
ছবি: ফ্রিপিক

যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় ১৭০১ সালে কলেজিয়েট স্কুল নামে যাত্রা শুরু করে। তখন এখানে শুধু ধর্মীয় নানা বিষয়ে পড়ানো হতো। ১৭১৮ সালে ইয়েল কলেজের যাত্রা শুরু। সেই সময়কার ব্যবসায়ী ইলিহু ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের অর্থ দেন। ব্যবসায়ী ইয়েল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মী হিসেবে ভারতের মাদ্রাজে দীর্ঘদিন অবস্থান করেছিলেন। তিনি মাদ্রাজের ফোর্ট সেন্ট জর্জেরও প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৭১৪ সালে ইংল্যান্ড থেকে ৫০০ বই ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়।

মৃত সন্তানের নামে বিশ্ববিদ্যালয়

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে অবস্থিত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: উইকিপিডিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে অবস্থিত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর ও রেল সড়ক ব্যবসায়ী লেল্যান্ড স্ট্যানফোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। লেল্যান্ড স্ট্যানফোর্ড ও তাঁর স্ত্রী জেনের একমাত্র সন্তান লেল্যান্ড স্ট্যানফোর্ড জুনিয়রের নামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম করা হয়। জানা যায়, মাত্র ১৫ বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে মারা যায় লেল্যান্ড স্ট্যানফোর্ড। ১৮৯১ সালের ১ অক্টোবর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শিক্ষার্থী ভর্তি হন।

আরও পড়ুন

জার্মান ধাঁচে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়

এমআইটির সিএসই ল্যাব
ছবি: উইকিপিডিয়া

১৮৫৯ সালে ম্যাসাচুসেটসের ব্যাক বে এলাকায় বিজ্ঞান ও কলাবিষয়ক একটি প্রতিষ্ঠান তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেই প্রস্তাব ভোট না পাওয়াতে নাকচ হয়ে যায়। পরে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক ও পদার্থবিদ উইলিয়াম বার্টন রজার্সের প্রস্তাব অনুসারে যাত্রা শুরু করে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বা এমআইটি। রজার্স প্রচলিত ধারার বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির পক্ষে ছিলেন না। জার্মান গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান তৈরির কাজ করেন তিনি। ১৮৬১ সালের ১০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেলেও যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় ১২ এপ্রিল। যুদ্ধের কারণে ১৮৬৫ সালে এমআইটিতে প্রথম ক্লাস শুরু হয়।

সূত্র: উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট