কান বন্ধ হয়ে গেলে কী করবেন
কানের মধ্যভাগ বা মধ্যকর্ণ আমাদের নাকের পেছনের দিকে ইউস্টেশিয়ান টিউব নামের নল দিয়ে সংযুক্ত থাকে। তাই এর মধ্যে প্রতিবন্ধকতা ঘটলে কান বন্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে কানে ভারী ভাব বা চাপ অনুভূত হয়। বিভিন্ন কারণে এ নল বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যার মধ্যে কানে খইল জমা থেকে শুরু করে কানের সংক্রমণ অন্যতম। আবার কানের ভেতর চাপের আকস্মিক পরিবর্তন থাকতে পারে।
উপসর্গ
মাথাঘোরা, কাশি, কানে ব্যথা ও কান ভারী লাগা, আক্রান্ত কানে চুলকানি, কান থেকে তরল নির্গমন বা দুর্গন্ধ বের হওয়া, বহিরাগত শব্দের উৎস ছাড়াই কানে গুঞ্জন (ভোঁ ভোঁ) বা ফড়ফড় শব্দ হওয়া, শ্রবণে অসুবিধা বা কম শোনা।
কারণ
কানের নালির বাইরের দিকটি ত্বক দিয়ে আচ্ছাদিত থাকে, যার মধ্যে খইল নিঃসরণের গ্রন্থি রয়েছে। কানের গভীর অংশ, যেমন কর্ণপটকে এ খইল ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চুল ধুলা এবং অন্যান্য বাইরের কণার
ক্ষতি থেকে সুরক্ষিত রাখে। খইলের একটি সামান্য পরিমাণ নিয়মিত কানের বাইরের অংশের দিকে বের হয় আর নতুন খইল তার স্থান নেয়। তবে এ খইল অতিরিক্ত পরিমাণে নিঃসরণ হলে বা উপযুক্তভাবে পরিষ্কার করা না হলে তা জমতে শুরু করে।
ফলে কানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। যাঁরা কান নিজেরাই কটনবাড, বলপেন, পিন ইত্যাদি দিয়ে পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন, তাঁদেরই এ সমস্যা বেশি হয়।
অন্যান্য সাধারণ কারণ
সাইনাস, সংক্রমণ, ঠান্ডা লাগা বা অ্যালার্জির কারণে ইউস্টেশিয়ান টিউবে প্রদাহ।
পানি জমা।
গাড়ি চালানো, বিমানে ভ্রমণ, অতি উচ্চতা ও খনির ভেতর বায়ুর চাপের পরিবর্তন।
অটোমাইকোসিস বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন।
কানে কিছু ঢুকে যাওয়া।
রোগনির্ণয়
কান বন্ধ হওয়া নির্ণয়ে সাধারণত অটোস্কোপ নামের একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।
চিকিৎসা
যদি ঠান্ডা লাগা বা উচ্চতার কারণে ইউস্টেশিয়ান টিউব অবরুদ্ধ থাকে, তবে নিম্নোক্ত উপায়ে কান খোলার চেষ্টা করা যেতে পারে:
চিনিমুক্ত চুইংগাম চিবানো।
নাক ও মুখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া।
খইল জমার কারণে কানের নল বা গহ্বর বন্ধ হলে নিচের পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়:
কান বন্ধ হওয়ার ঘটনা বারবার ঘটলে চিকিৎসক ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। চিকিৎসক অতিরিক্ত খইল ফরেন বডি হুক বা অন্য যন্ত্র দিয়ে পরিষ্কার করেন।
সাকশানের ব্যবহার।
অটোমাইকোসিসের চিকিৎসা নিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যেসব রোগীর অ্যালার্জি আছে, তাঁদের অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ দিয়ে রোগের চিকিৎসা করা হয়। এটি নাকে স্প্রে করা হয়। সংক্রমণের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন হয়।
অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী: বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি, আনোয়ার খান, মডার্ন মেডিকেল কলেজ, ধানমন্ডি, ঢাকা