যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে দুই বাংলাদেশি

যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটি, কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, কর্নেল ইউনিভার্সিটি, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া, ডার্টমাউথ কলেজ ও ইয়েল ইউনিভার্সিটি—এই আট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আইভি লিগের অধীন পড়ে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, সারা পৃথিবীতেই আইভি লিগভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশেষ সুনাম আছে। অভিজাত এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা শুধু যে পড়ছেন, তা নয়, কোথাও কোথাও ছাত্র পরিষদের নেতৃস্থানীয় পদেও আছেন তাঁরা। যেমন কুষ্টিয়ার ফারহা জেসমিন ও নারায়ণগঞ্জের রামিসা ফারিহা। প্রথমজন ব্রাউন ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট, অন্যজন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভোকেসির চেয়ার। তাঁদের কাছ থেকে নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার অভিজ্ঞতা শুনেছেন তানভীর রহমান

সব বিষয়েই আমাকে সতর্ক থাকতে হয়: ফারহা জেসমিন

ফারহা জেসমিন, প্রেসিডেন্ট, গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট কাউন্সিল এবং পিএইচডি শিক্ষার্থী, ব্রাউন ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র
ছবি: সংগৃহীত

ব্রাউন গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট কাউন্সিলে প্রথম অংশ নিই বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে, ২০২১ সালে। এরপর গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী বোর্ড পজিশনে অংশগ্রহণ করি। সেখানে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিউনিকেশন চেয়ার পদে জয়ী হই। সর্বশেষ ২০২৩ সালের এপ্রিলে আরেকটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমি গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হই। ২০২৩ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমার মেয়াদকাল। এই সময়ের মধ্যে ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে ক্যারিয়ার প্রশিক্ষণ, ছাত্রছাত্রীদের সমতা নিশ্চিতকরণ, স্বাস্থ্যসচেতনতা ও ইউনিভার্সিটির পলিসিতে ছাত্রছাত্রীদের অন্তর্ভুক্তিকরণের মতো নানা বিষয়ে আমি কাজ করব। অন্যান্য দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে, গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী বোর্ডের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা, গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট কাউন্সিলের সভায় নেতৃত্ব দেওয়া, ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করা, বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে পদাধিকারবলে দায়িত্ব পালন করা ইত্যাদি। প্রেসিডেন্ট হওয়ায় স্টুডেন্ট কাউন্সিলের ফাইন্যান্স কমিটির সহসভাপতির দায়িত্বও আমাকে পালন করতে হয়।

গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচনে জিতে প্রথমে একটু নার্ভাস ছিলাম। নেতৃত্বের সঙ্গে আসে দায়িত্ব। আর গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট কাউন্সিলের সভাপতিত্ব একটি বিশাল দায়িত্ব। আমি যেটাই করি বা না করি, যেটাই বলি বা না বলি, সব বিষয়েই আমাকে সতর্ক থাকতে হয়। তা ছাড়া, বাঙালি মেয়ে হয়ে আইভি লিগ স্কুলের নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে কাজ করা অনেক চ্যালেঞ্জিং। কিছু মানুষ আছে, যারা গায়ের রং বা জন্মভূমি দেখে যোগ্যতা বিচার করে। আমার কাজ, যোগ্যতা বা দক্ষতা তারা দেখে না। তবে প্রতিটি কাজে পরিবার, বন্ধুবান্ধব, বোর্ড সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমর্থন পাচ্ছি।

ব্রাউনের গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট কাউন্সিলে যুক্ত হওয়ার আগে আমেরিকান রেডক্রসের দুর্যোগ বিভাগে ছিলাম। সেখানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সাত বছর কাজ করেছি। সেই অভিজ্ঞতাও আমার কাজে লাগছে।

আরও পড়ুন

ভোটের পর জানতে পারলাম, নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছি: রামিসা ফারিহা

রামিসা ফারিহা, চেয়ার অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি, গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট কাউন্সিল, পিএইচডি শিক্ষার্থী, ব্রাউন ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র
সংগৃহীত

সাধারণত দুই সেমিস্টারের জন্য আমরা নির্বাচিত হই। গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট কাউন্সিলের চেয়ার অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি হিসেবে আমার দায়িত্ব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের (স্নাতকপড়ুয়া) চাহিদা ও আগ্রহের প্রতিনিধিত্ব করা। আমি ব্রাউনের বিভিন্ন অফিসে প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করি। শিক্ষার্থীদের হয়ে তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা তুলে ধরি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক, গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট কাউন্সিলের আন্তর্জাতিক কমিটির সভাপতিত্ব করাসহ নানা কাজ আমাকে করতে হয়। এই পদে নির্বাচিত হওয়ার আগে আমি পরপর দুই বছর কমিউনিটি ফেলো হিসেবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন কাজ করেছি, একইভাবে গ্লোবাল ব্রাউন সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টসে গ্র্যাজুয়েট সহসমন্বয়ক হিসেবে এবং ২০১৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল অরিয়েন্টেশনে গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে কাজ করেছি।

গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট কাউন্সিলের সব পদ উন্মুক্ত। চাইলেই যেকোনো শিক্ষার্থী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারে। নির্বাচনের দিন প্রার্থীরা গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টদের (ইন্টারন্যাশনাল ও ডোমেস্টিক) সামনে নির্বাচনী বক্তব্য রাখে—তাদের কী কী অভিজ্ঞতা আছে, তারা নির্বাচিত হলে কী কী করবে, বক্তব্যে এসব থাকে। এরপর বিভাগের প্রতিনিধিরা নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা ঠিক করে। আমার আসলে নির্বাচনে দাঁড়ানোরই কথা ছিল না। বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। যখন বিভিন্ন পদের প্রার্থীদের দেখলাম, মনে হলো, তাদের চেয়ে আমি ভালো করতে পারব। ফলে, কোনো ধরনের পরিকল্পনা বা প্রস্তুতি ছাড়াই ওই মুহূর্তে নির্বাচনে অংশ নিই। ভোটের পর যখন জানতে পারলাম নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছি, অনেক ভালো লাগা কাজ করেছিল। খুবই উৎসাহের সঙ্গে পদ গ্রহণ করি।

নির্বাচনী বক্তব্য অনুযায়ী আমি ও আমার কমিটি নানা কাজ করে আসছি। যেমন সবার মধ্যে একটা সহযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন, নো ইয়োর পাওয়ার সিরিজ চালু, ক্যারিয়ার-সংক্রান্ত বিভিন্ন সুযোগ ও সহায়তা প্রদান ইত্যাদি। এর মধ্যে ‘নিজের ক্ষমতা জানো’ সিরিজ ব্রাউনে প্রথমবারের মতো হচ্ছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও ক্ষমতা সম্পর্কে তাদের জানানো হবে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে এসে প্রথম প্রথম বেশ হিমশিম খায়। একরকম ভয়ে থাকে, তাই নানা সমস্যায় পড়ে। এই ইভেন্ট সিরিজটির মূল উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। তাদের জানানো যে তারা একা নয়। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জননিরাপত্তা (পাবলিক সেফটি), স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি বিভাগের সঙ্গে আমরা কাজ করছি।

আরও পড়ুন