ড্যাফোডিলকে শিরোপা জেতানো মাহবুবুরের এই গল্প জানতেন?
ছোট্ট ছেলেটির মন পড়ে থাকত ফুটবল মাঠে। কখন মাঠে যাবে সে, কখন অনুশীলন করবে, তর আর সইত না।
ঢাকার আরামবাগ বালুর মাঠের (বর্তমানে বাফুফের টার্ফ) পাশে বাবা মোহাম্মদ জহির আলী ছোট একটা ভাতের হোটেল দিয়েছিলেন। নিজেই বাসা থেকে রান্না করে নিয়ে আসতেন। তাঁর বড় ছেলে হাবিবুর রহমান তখন বিকেএসপির ছাত্র। ফলে ছোট ছেলে মাহবুবুর রহমানের (জুয়েল) হোটেলে না বসে উপায় ছিল না। ‘আব্বু বাজার করার জন্য বাইরে যেতেন। তাঁকে বলতাম তাড়াতাড়ি দোকানে আসতে। অনেক সময় আসতে পারতেন না। আমি বিল নিতাম, কাস্টমার ডাকা লাগত।’ পেছনে ফিরে বলে যান ২৩ বছরের যুবক।
‘কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না’—এই আপ্তবাক্য মনে রেখেই এগিয়ে চলা তরুণ মাহবুবুর আজ সফল। করোনাকালের আগে নেপালে ত্রিদেশীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ২৩ জনের স্কোয়াডে থাকলেও খেলা হয়নি। তবে কাতারে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৭ মিনিট, ওমানের বিপক্ষে ১২ মিনিট খেলার সুযোগ হয়েছে ব্রিটিশ কোচ জেমি ডের অধীনে। মাহবুবুর ২০২২ সালে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন পরিবেশবিজ্ঞানে। প্রতিষ্ঠানটির ২২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে এই মুহূর্তে সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় তিনিই। কেন? ৯ ডিসেম্বর শেষ হওয়া ইস্পাহানি-প্রথম আলো দ্বিতীয় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলে ড্যাফোডিল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে যে তাঁর দুরন্ত নৈপুণ্যেই। চ্যাম্পিয়ন ড্যাফোডিলের ৬ ম্যাচের সব কটিই খেলে মাহবুবুর ৩টিতেই হয়েছেন ম্যাচসেরা। দুটি হ্যাটট্রিকসহ করেছেন টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ১০ গোল। টুর্নামেন্টে–সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা তাঁর হাতেই উঠেছে।
উজ্জ্বল এই সময়ের দেখা তিনি পেয়েছেন অনেক বাধা পেরিয়ে। মা মনোয়ারা বেগম চাইতেন ছেলে ভালো পড়াশোনা করবে, খেলবে না। কিন্তু বাবা ছিলেন ছেলের পাশে। যতভাবে সম্ভব ছেলেকে সহায়তা করেছেন। বাসা থেকে ব্যাগে লুকিয়ে ছেলের খেলার সরঞ্জাম পার করেছেন।
পৈতৃক বাড়ি সুনামগঞ্জের চুনারুঘাট। তবে চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় মাহবুবুরের জন্ম ঢাকার আরামবাগে। এই আরামবাগ থেকে উঠে আসেন জাতীয় দলের মিডফিল্ডার সোহেল রানা, জাতীয় দলে ডাক পাওয়া দুই ভাই গোলকিপার পাপ্পু হোসেন ও সুজন হোসেন। বাফুফে ভবনসংলগ্ন বালুর মাঠের পাশেই বাসা মাহবুবুরের। তৃণমূলের ফুটবল কোচ ইব্রাহিম খলিল তখন ছোটদের অনুশীলন করাতেন বালুর মাঠে। সেখান থেকেই উঠে আসা মাহবুবুরের।
চোটের কারণে ইস্পাহানি-প্রথম আলো প্রথম টুর্নামেন্টে খেলতে পারেননি। তাঁর দল বাদ পড়ে গ্রুপেই। মাহবুবুর বলছিলেন, ‘তখন শুনতাম আমাদের দলে গোল করার কেউ নেই। জয় ভাই (ড্যাফোডিলের কর্মকর্তা) বলেন, তুই থাকলে আমরা হারতাম না। এবার আমি তাঁকে কথা দিয়েছি, আন্তবিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্টে সব ম্যাচ খেলব এবং খেলেছি। দলকে গোলও এনে দিয়েছি।’
টুর্নামেন্টের প্রশংসা ঝরছে তাঁর কণ্ঠে, ‘আগে ইউনিভার্সিটির খেলা মূল্যায়ন করত না মানুষ। এখন করছে, খোঁজ রাখছে। এ নিয়ে কথা বলছে। আমি খুবই অভিভূত। স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর যেভাবে অভিনন্দন পেয়েছি দর্শক-সমর্থকের কাছ থেকে, ইস্পাহানি-প্রথম আলোর টুর্নামেন্টেও সেভাবে অভিনন্দন পেয়েছি।’এমন অভিনন্দন মাহবুবুরের প্রাপ্যই।