তোমাকে ধরে রাখতে পারলাম না
পাঠকের সুখ–দুঃখ, হাসি–আনন্দ, পছন্দ, ভালোলাগা, ভালোবাসাসহ যে কোনো না বলা কথা শুনতে চায় মনের বাক্স। প্রতি সপ্তাহে পাঠকের পাঠানো সেসব লেখা থেকে নির্বাচিত কিছু লেখা আজ প্রকাশিত হলো এখানে
মুখ ফুটে বলা হলো না
খোদার কিছু সৃষ্টি খুব বেমানান লাগে—এই যে সক্রেটিসের মতো জ্ঞানী পিতার ঘরে আমার মতো অঘারাম সন্তান! আব্বু, আমি জীবনে আপনার কোনো ইচ্ছে পূরণ করতে পারিনি, তবু আপনি বারবার শুনিয়েছেন—
মুক্ত করো ভয়
আপনা মাঝে শক্তি ধরো
নিজেরে করো জয়...।
এই পৃথিবীতে অনেক কষ্ট আছে, তার মধ্যে একটা বড় কষ্ট আব্বুকে কোনো দিন জড়িয়ে ধরতে না পারা। পরীক্ষায় কোনো দিন ভালো ফল করতে পারিনি, যার দরুণ আপনাকে কখনো বোঝাতে পারিনি অন্য সবার চেয়ে আমি আপনাকে বেশি ভালোবাসি। জীবনের সব কঠিন সময়ে যখন কেউ পাশে ছিল না, একমাত্র আপনি পাশে ছিলেন। আব্বু, আমি আপনার মনের মতো সন্তান হতে পারিনি, এটা যে কী কষ্টের, তা কাউকে বোঝানো যাবে না। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। জীবন হয়তো ফুরিয়ে যাবে, মুখ ফুটে কোনো দিন বলতে পারব না, ভালোবাসি, আব্বু।
নাবিলা নওরিন, মির্জাগঞ্জ, পটুয়াখালী।
এক আকাশ অপেক্ষা
প্রিয় সিগমা, জানি তুমি অনেক ব্যস্ত। আমার এসএমএসগুলো দেখার সময় পর্যন্ত তোমার হয় না। নিজের মনকে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু মন তো এগুলো শুনতে চায় না। সে চায় তোমার সান্নিধ্য। তার চাওয়া পূরণের চেষ্টা বহুবার করেছি। কিন্তু সফল হতে পারিনি। তুমি আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা। তাই চাইলেও তোমায় ভুলে থাকতে পারি না। আমি তোমার অনেক কাছে থেকেও যেন অনেক দূরে। তোমাকে ভালো লাগে সেই কলেজজীবন থেকে। আর এখন তো আমরা দুজন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। কিন্তু কষ্টের বিষয় হচ্ছে, তুমি এখনো আমাকে চেনো না, আর আমার মনের কথা তুমি বুঝবে, সেটা কীভাবে মনে করি, বলো?
অব্যক্ত কথাগুলো বলার জন্য আজ তাই মনের বাক্সকে বেছে নিয়েছি। আর কোনো দিন তোমায় বিরক্ত করব না। টেক্সট দিয়ে আর বলব না তোমাকে নিয়ে দেখা আমার স্বপ্নগুলোর কথা। তোমার জীবনসঙ্গী হয়তো হতে পারব না, কিন্তু তুমি ভালো থাকলে ভালো থাকব আমি। কখনো যদি আমার কথা মনে পড়ে, তাহলে একবার ডেকো। পুরো পৃথিবী ফেলে দিয়ে তোমার কাছে চলে আসব। বিনিময়ে কোনো কিছু আশা করব না। সারা জীবন তোমাকে দেখার নেশাতেই ডুবে থাকতে চাই। আমার পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা শুধু তোমার জন্যই বরাদ্দ রইল। ভালো থেকো।
আফ্রিদি, কুমিল্লা।
তোমাকে ধরে রাখতে পারলাম না
প্রিয় মিম, তোমাকে হারানোর পাঁচ বছর। ঠিক পাঁচ বছর আগে তোমাকে বলেছিলাম, পুরো পৃথিবী হারিয়ে গেলেও তোমাকে হারাতে দেব না। হারাইনি দেখ। আজও আমার স্মৃতির দেয়ালে দেয়ালে ঝুলছে তোমার মুখোশ। হয়তো কোনো ভোরের প্রথম আলোয় কিংবা সন্ধ্যার শেষ সূর্যাস্তের বেলায় তুমি ফিরে আসবে। তুমি বলেছিলে, আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না—সবই তো দেখি মিথ্যা। এরপরও বলি, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য যেদিন তোমার বোঝা শেষ হবে, রাত্রির শেষ ট্রেনে তুমি সেদিন বাড়ি ফিরে এসো। সেদিনের অপেক্ষায় রইব। তোমায় নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। কেবলই অপেক্ষা রইল। মন থেকে মানুষ যা চায়, তা একদিন নাকি পেয়েও যায়। আশা করছি, আমিও পাব।
ইতি
তোমার একসময়ের কেউ, চট্টগ্রাম।
আব্বুর স্বপ্ন পূরণ
আব্বুর খুবই ইচ্ছে ছিল বড় ভাইয়াকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর। কিন্তু ভাইয়া আব্বুর স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি। আব্বু লুকিয়ে কেঁদেছিলেন। সেদিন মনে হয়েছিল, সবকিছুর বিনিময়ে হলেও যদি আব্বুর স্বপ্নকে পূরণ করতে পারতাম! শেষে বড় আপু আর দুলাভাইয়ের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিলাম। ফল প্রকাশ করলে জানতে পারলাম দুটি বিশ্ববিদ্যালয়েই সুযোগ পেয়েছি। এটা শোনার পর দেখি আব্বু আবারও কাঁদছেন। তবে এবার লুকিয়ে নয়, প্রকাশ্যে। এ কান্না দুঃখের নয়, আনন্দের। সেদিনের মতো খুশির দিন আমার জীবনে আর আসেনি। আব্বুর ইচ্ছে পূরণ করতে পারায় কী যে আনন্দ হয়েছিল সেদিন।
আল মামুন হোসেন, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
লেখা পাঠানোর ঠিকানা
অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ই-মেইল: [email protected], ফেসবুক: facebook.com/adhuna.PA খামের ওপর ও ই-মেইলের subject–এ লিখুন ‘মনের বাক্স’