কখন ‘না’ বলবেন, কীভাবে ‘না’ বলবেন
শিরোনাম দেখে কেউ ভেবে বসতে পারেন, এ আবার কেমন কথা? দন্ত্য ন-আকারে ‘না’ বলতে না পারার কী আছে? কিন্তু বাস্তবতা হলো, এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা ‘না’ বলতে পারেন না, ফেলতে পারেন না কারও অনুরোধ। যাকে ‘না’ করা হবে, তিনি কষ্ট পেতে পারেন কিংবা বিষয়টাকে খারাপভাবে নিতে পারেন—এই আশঙ্কা থেকেই অনেকে অনুরোধে ঢেঁকি গেলেন।
আপনিও যদি এই অনুরোধে ঢেঁকি গেলা দলের মানুষ হয়ে থাকেন, তাহলে খুব সহজেই অনুধাবন করতে পারবেন এর মর্মবেদনা। এমন কিছু পরিস্থিতির উদাহরণ দেওয়া যাক। আপনার হয়তো সেদিন পারিবারিক অনুষ্ঠানে থাকার কথা, কিন্তু হঠাৎ অফিস থেকে ফোন আসায় ‘না’ করতে পারলেন না কিংবা কাজের প্রচণ্ড চাপের মাঝেও কাছের বন্ধুকে ‘না’ বলতে পারলেন না। এই ছোট্ট একটা ‘না’ বলতে না পারায় আপনার সময়, শক্তি ও শ্রম—সবটারই অপচয় হলো। সঙ্গে ‘ফ্রি’-তে পেয়ে গেলেন একরাশ ‘টেনশন’! কখন, কাকে সময় দেবেন, কখন সারবেন কাজ—এ ভাবনার জালে জড়িয়ে হয়তো কোনোটাই শেষ পর্যন্ত ঠিকভাবে করতে পারলেন না।
কেউ কেউ আবার ‘না’ বলতে পারেন ঠিকই, কিন্তু এমনভাবে বলেন যাতে অপরপক্ষ কষ্ট পান না। তাই ‘না’ বলতে পারাটা যেমন জরুরি, তেমনি সুন্দরভাবে বলার কায়দা রপ্ত করাটাও জরুরি। ‘না’ বলার অভ্যাস না থাকলে প্রথম প্রথম ‘না’ বলতে গিয়ে জড়তা কাজ করতে পারে, তবু প্রয়োজনমাফিক শুরু করুন ‘না’ বলা। এতে জীবনের নানা দিকের মধ্যে ভারসাম্য রাখাটা সহজ হবে। কখন ‘না’ বলবেন, কীভাবে ‘না’ বলবেন, জেনে নিন আজ।
কখন ‘না’ বলবেন
যখনই দেখবেন, আপনাকে কাছাকাছি সময়ে একাধিক তরফের অনুরোধ রক্ষা করতে হচ্ছে কিংবা দায়িত্ব নিতে হচ্ছে, তখন যেকোনো এক পক্ষকে আপনার ‘না’ বলতেই হবে। দুই নৌকায় পা দিয়ে চলতে চেষ্টা না করাই ভালো। নিজের দায়বদ্ধতার প্রতি যত্নশীল হোন। সেই অনুযায়ী সময় বণ্টন করে নিন। কাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত, সেই বিচারের ভার আপনার ওপর। ছুটির দিনে পরিবারের জন্য বরাদ্দ সময়ে কাজের ডাক আসতেই পারে। এমন ক্ষেত্রে আপনি পরিবারকে বঞ্চিত করে অনাগত দিনের পদোন্নতির হাতছানিতেই সাড়া দেবেন নাকি পরিবারই প্রাধান্য পাবে আপনার কাছে, সেই সিদ্ধান্ত একান্তই আপনার।
কীভাবে ‘না’ বলবেন
‘না’ বলুন নম্রভাবে। যিনি আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন কিংবা কাজের প্রস্তাব দিচ্ছেন, তাঁকে ‘না’ বলতে হলে অবশ্যই ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নেবেন। আপনি আগে থেকেই ওই একই সময়ে অন্য কোথাও সময় দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সেটাও তাঁকে জানিয়ে দিন। এবার আর হচ্ছে না, নিশ্চয়ই পরেরবার হবে—এমন ইতিবাচক কথাও বলতে পারেন। কথা বলার সময় আপনার স্বর, মুখভঙ্গি ও দেহভঙ্গি রাখুন ইতিবাচক, যাতে কোনোভাবেই ওই ব্যক্তি নিজেকে উপেক্ষিত বা বঞ্চিত মনে না করেন। তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। আপনি যে তাঁর আমন্ত্রণে বা প্রস্তাবে খুশি হয়েছেন, সেটিও উল্লেখ করে নিতে পারেন শুরুতে। দুটি ইতিবাচক কথার মাঝে বলতে পারেন ‘না’-সূচক বাক্যটি। আমন্ত্রণকে ‘না’ বলতে হলেও আপনার কথা শুরুই করতে পারেন এভাবে—‘আরেহ! এ তো দারুণ ব্যাপার!’
‘না’ বলতে হলে অবশ্যই খেয়াল রাখুন
‘না’ বলতে খুব বেশি সময় নেবেন না। হয়তো বন্ধুরা সবাই মিলে কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আপনি ধারণা করছেন, হয়তো যেতে পারবেন না। ‘দেখি’, ‘চেষ্টা করব’—এসব বলে সবাইকে আশা দিয়ে একেবারে শেষ মুহূর্তে ‘না রে দোস্ত, সময় ম্যানেজ করতে পারলাম না’ বলাটা খুবই খারাপ আচরণ।
হুট করে ‘না’ বলে দেওয়াটাও ঠিক না। হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকলে ‘না’ বলার জন্য ২৪টা ঘণ্টা সময় আপনি নিতেই পারেন।
কেন ‘না’ বলছেন, অল্প কথায় বুঝিয়ে বলুন। বিশদভাবে ব্যাখ্যা করতে যাবেন না। ‘না’ বলার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তর্কে জড়াবেন না।
যা মন থেকে চাচ্ছেন না, তা বলবেন না। হয়তো এমন একজন সহকর্মী অফিসের পর কফির নিমন্ত্রণ জানালেন, যাঁর সঙ্গে আপনি আসলে কোনো দিনই বাইরে দেখা করতে চান না। তাঁকে বলবেন না—‘আজ নয়, আরেকদিন’। বরং নম্রভাবে জানিয়ে দিন, আপনি অফিস ও ব্যক্তিগত জীবনকে আলাদা রাখতেই পছন্দ করেন।
অনেকেই ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানা প্রশ্ন করে বসেন। তাঁদের দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিন, ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলাটা আপনি পছন্দ করেন না।
সূত্র: রিডারস ডাইজেস্ট