ছোটবেলার আমিকে ধরে এনে আজকের আমিকে যদি দেখাতে পারতাম
ম্যাডাম ওয়েব চলচ্চিত্রে অভিনয় করে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন সিডনি সুইনি। হলিউডে জেন–জিদের কণ্ঠস্বর হিসেবেও পরিচিতি আছে এই মার্কিন অভিনেত্রীর। বছর দুই আগে সিডনিকে ‘দ্য ইয়ংগেস্ট ওম্যান ইন হলিউড’ স্বীকৃতি দিয়েছিল এল ম্যাগাজিন। সেই অনুষ্ঠানে একটি বক্তৃতাও দিয়েছিলেন তিনি। পড়ুন তাঁর সেই বক্তব্যের অনুবাদ।
ধন্যবাদ এল। এই পুরস্কার আমার জন্য সম্মানের। আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ। উপস্থিত অনুপ্রেরণাদায়ী নারীদের নিয়ে আপনারা যেভাবে উদ্যাপন করছেন, অতীতেও ধারাবাহিকভাবে করে এসেছেন, সে জন্য ধন্যবাদ। সমাজের বেড়াজাল ও প্রত্যাশার চাপ ভেঙে নিজেকে আবিষ্কার করতে আপনারা সবাই আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। আমার বড্ড ইচ্ছে, ছোটবেলাকে আমিকে ধরে এনে যদি আজকের আমিকে দেখাতে পারতাম। কারণ, এখানে যেসব নারী আমাকে ঘিরে আছেন, তাঁরা সবাই সেই ছোট্ট মেয়েটিকে অভিনেত্রী হতে অনুপ্রাণিত করেছেন।
বক্তব্য দেওয়ায় আমি খুব পারদর্শী নই। মঞ্চভীতিও কাজ করে প্রচণ্ড। আমি বরং সিনেমার চরিত্রেই স্বাচ্ছন্দ্য। এই ভয় কাটানোর উপায় অবশ্য এখনো খুঁজে পাইনি। তাই ভেবে দেখলাম, ছোট্ট সিডকে (সিডনি) চিঠি লিখে নিজেকে প্রকাশ করলে মন্দ হয় না। এমন কিছু লিখতে চেয়েছিলাম, যা ছোট্টবেলার ‘আমি’র শোনা প্রয়োজন ছিল। অন্যদের মধ্যেও যাঁদের দরকার, তাঁদের কাছে এই লেখা পৌঁছে যাবে বলেই আশা করি।
আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত শক্তিশালী, প্রাজ্ঞ ও নির্ভীক মানুষগুলোর মতো যাঁরা হতে চান, তাঁদের জন্য এই চিঠি।
প্রিয় ছোট্ট সিড,
যা যা এখন আমরা করছি, শুনলে তুমি বিশ্বাসই করতে চাইবে না। তাই তোমাকে ধন্যবাদ জানানো দরকার। কখনোই হাল ছেড়ে না দেওয়া বা ‘না’কে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানানোর জন্য। নিজেকে বিশ্বাস করা এবং স্বপ্ন দেখা থেকে দমানোর সুযোগ তুমি কখনোই কাউকে দাওনি। এমনকি যখন একজনও তোমাকে বিশ্বাস করেনি, তখনো না। জীবনের এই সময়ে এসে মনে হয়, তিনটি বিষয়ে আমরা আগেই শিখতে পারতাম। এখন তোমাকে সেগুলোই জানাতে চাই।
পাঠ ১: নিজেকে এবং অন্যদেরকে ক্ষমা করতে ও সহানুভূতি দেখাতে কখনোই ভুলবে না। আমি জানি, তোমার ছোট শহর ছাড়ার সময় তুমি ভীত ছিলে। কারণ, মানুষ সাধারণত শেকড় ছেড়ে যেতে চায় না। তুমি কোথা থেকে এসেছ বা কোথায় যাচ্ছ, সবাই বুঝবেও না। কেউ এমন থাকবে যে স্বাভাবিকভাবে তোমাকে দেখবে না, সময়ে সময়ে নিষ্ঠুর হবে। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তাঁরা তোমার স্বপ্ন পূরণ হওয়া নিয়ে ভয় দেখাবে। কিন্তু সেই ব্যথা এবং নেতিবাচকতাকে প্রেরণায় রূপান্তর কোরো। বড় হতে হতে নিজের প্রতি সদয় হও। ব্যর্থ হলে ক্ষমা কোরো।
পাঠ ২: বর্তমান নিয়ে বাঁচো। মা সব সময় বলতেন, সুযোগ পেলেই দড়ি লাফাবে। আমরা ভাবতাম, মা এ কথা বলেন, যেন আমাদের শারীরিক গড়ন ভালো হয়। পরে বুঝেছি, এর গুরুত্ব তার চেয়েও বেশি। এই যে ছোটার জন্য একধরনের তাড়না, আরও পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, এসব তুমি ভালোবাসবে। কিন্তু সময়টা উপভোগ করতে হলে তোমাকে গতি কমাতেও হবে। অনেক কঠিন কঠিন কাজ করলেই–বা কী লাভ, যদি জীবনের মুহূর্তগুলো উপভোগ করতেই না পার? দুনিয়াটা বড্ড কঠিন।
পাঠ ৩: যত কিছু সম্ভব, সবকিছুকেই ভালোবাসো। শিল্প, গান, ভ্রমণ, গাড়ি, খেলাধুলা, শিক্ষা এবং আরও নানা কিছুর পাশাপাশি নিজের প্রেমেও পড়ো। মন খোলা রেখে কৌতূহলকে বাঁচিয়ে রাখো। সব সময় নতুন সম্ভাবনার খোঁজে থাকো। ভালোবাসার ব্যান্ডউইথকে সীমায় বাঁধবে না, বরং সবার সঙ্গে ভাগ করে নেবে। কারণ, পৃথিবীতে আরও ভালোবাসা থাকা প্রয়োজন।
আমি আজও শিখছি এবং আগামীকালও শিখে যাব। এতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, কেউই সবকিছুর সমাধান শিখে ফেলেনি। তোমাকে মানুষ প্রশ্ন করবে, বড় হয়ে কী হতে চাও? আশা করি, বর্তমানের আমিকে নিয়ে তুমি গর্বিত হবে।
ভালোবাসা নিয়ো, সিড।
ধন্যবাদ।