ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি ‘ভাইরাল’
‘পরদিন সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। একটু পড়াশোনা করে, আমার গাওয়া একটা গানের ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পরদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি সেই ভিডিও ভাইরাল,’ বলছিলেন অংমোক্য মারমা। ক্যাম্পাসে কিংবা ফেসবুকে তিনি অং অং নামেই পরিচিত বেশি। পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কে বিভাগে।
যে গানের কথা অং বলছিলেন, সেটি হলো চিরকুট ব্যান্ডের বিখ্যাত গান—‘জাদুর শহর’। এমনকি চিরকুটের ভোকাল শারমিন সুলতানা সুমিরও গানটির কভার নজর কেড়েছিল। ফেসবুকে অংয়ের গান শেয়ার করে সুমি লিখেছিলেন, ‘আমার শোনা সেরা “জাদুর শহর” কভার। কানে, প্রাণে এত আরাম লাগল!...পাহাড়ি বুক আর কণ্ঠ থেকে আসা গান বলে কথা। অদ্ভুত! আমি কি কোনোভাবে তাঁর ফোন নম্বর পেতে পারি? জানতে পারলাম সে আমার ডিপার্টমেন্টের ছাত্র।’
ব্যস। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র-জুনিয়রের দেখা হতে সময় লাগেনি। তারপর? ৩১ জানুয়ারি ফ্যান্টাসি কিংডমে আয়োজিত ‘শিখো-প্রথম আলো জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে দেখা গেল দারুণ এক দৃশ্য। অংকে সঙ্গে নিয়েই মঞ্চে উঠলেন সুমি। চিরকুট ব্যান্ডের সঙ্গেই ‘জাদুর শহর’ গাইলেন অং।
কেমন ছিল সে অনুভূতি? অং বললেন, ‘এর আগে বান্দরবানে কনসার্টে গান গেয়েছি। ক্যাডেট কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনুষ্ঠানেও গাই। কিন্তু এত এত মানুষের সামনে গান গাওয়া এই প্রথম। এটা আমার জন্য বিশাল পাওয়া। চিরকুটের মতো আলোচিত ব্যান্ড, সুমি আপুর মতো খ্যাতিমান শিল্পীর পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ আমার জন্য অনেক কিছু। এই অভিজ্ঞতা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।’
জগন্নাথ হলে থাকেন অং। পরীক্ষা আর জীবনের নানা অঙ্ক মেলাতে এই প্রাঙ্গণ ঘিরেই চলে তাঁর আড্ডা-গান-ঘোরাঘুরি। একদিন এভাবেই ক্যাম্পাসের কাছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পান্থ প্রাঞ্জলের সঙ্গে পরিচয়। মাগুরা থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন পান্থ। পথ হারিয়ে অংয়ের সামনে এসে পড়ে ছিলেন তিনি। অং বলেন, ‘আমরা কয়েকজন এমনিই বসেছিলাম। সঙ্গে ছিল আমার গিটার। হুট করে একটা ছেলে এসে বলল, সে পথ হারিয়ে ফেলেছে। আলাপের এক ফাঁকে জানলাম, ছেলেটা গিটার বাজাতে পারে। একসময় আমার গিটারটা নিয়ে টুংটাং শুরু করল পান্থ। সেই টুংটাংয়ের মধ্যেই জাদুর শহর গাওয়া শুরু করি। এক বন্ধু গানটা ভিডিও করে। এরপর তো সবার জানা।’
অংয়ের জন্ম বান্দরবানে। ছেলেবেলায় গান শেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন মা-বাবা। তবে শাস্ত্রীয় গান অংকে খুব একটা টানেনি। কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার পর সেখানকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিয়মিতই গান গাইতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর আর দশজন শিক্ষার্থীর মতো হাকিম চত্বরের গান, টিএসসির আড্ডায় সময় কেটে যাচ্ছিল। হঠাৎ এক ভাইরাল ভিডিওতে ক্যাম্পাসে তাঁর কদর বেড়ে গেছে।
সুমির সঙ্গে অংয়ের গান নিয়ে কথা হলো। বললেন, ‘অং সুন্দর গায়। ওর গলায় আমি পাহাড়ের বিশালতা, পাহাড়ের ভাষা খুঁজে পেয়েছি। আমি নিজে পাহাড়ে ঘুরতে পছন্দ করি। পাহাড়ের ভাষা অনন্য আর অন্য রকম। অংয়ের গান দেখে ওকে আমাদের কনসার্টে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমার জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের গুরুত্ব অনেক। অং সেই বিভাগে পড়ছে, বলা যায় আমাদের পরম্পরা তৈরি হচ্ছে।’
অংকে নিজের ভাষার গানও গাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সুমি। পাহাড়ের এই তরুণ এরই মধ্যে নিজের লেখা চারটি গান তৈরি করছেন। ভবিষ্যতে গানের দুনিয়ায় আরও বড় মঞ্চে নিজেকে দেখতে চান তিনি।