গাছ লাগানো যখন ‘অ্যাসাইনমেন্ট’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তারিফুল ইসলামের উদ্যোগটা বেশ অভিনব। বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের একটি কোর্সে শিক্ষার্থীদের ৩২টি গাছ লাগানোর ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ দিয়েছেন তিনি।
তারিফুল ইসলাম বলেই দিয়েছিলেন, এমন গাছ লাগাতে হবে, যেটা পরিবেশগত উন্নয়ন ও পুষ্টির চাহিদা—দুটিই পূরণ করবে। সেই জায়গা থেকে শিক্ষার্থীদের ফলদ বৃক্ষের পাশাপাশি দু-একটা ঔষধি ও ফুলের গাছ লাগানোর নির্দেশনা দেন। এর ফলে শিক্ষার্থীদের লাগানো গাছের মধ্যে ২৮টি ছিল ফলগাছ (আমড়া, কাঠবাদাম, বরই, আম, কাঁঠাল ইত্যাদি), ২টি ঔষধি গাছ এবং ২টি ছিল ফুলের গাছ।
ক্যাম্পাসের অধিকাংশ জায়গায় নির্মাণকাজ চলছে। তাই শিক্ষার্থীদের বেশ ভেবেচিন্তে জায়গা নির্বাচন করতে হয়েছে। এমন জায়গাতে তাঁরা গাছ লাগিয়েছেন, যেখানে ভবিষ্যতেও নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে ক্যাম্পাসের ব্যবসায় প্রশাসন ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওয়ার স্টেশনের পাশে গাছ লাগিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচে শিক্ষার্থী ৫০ জন। ৫০ সদস্যের ব্যাচে কেন ৩২টি গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত হলো? এ প্রশ্নের উত্তরে তারিফুল ইসলাম বলেন, ‘একটা করে গাছ লাগিয়ে আবার বেড়া দিতে হয়, সে ক্ষেত্রে ব্যয় বেশি হয়ে যাবে। এটা যেন শিক্ষার্থীদের জন্য বোঝা হয়ে না যায়, সে জন্য বলেছিলাম, তোমরা গাছের সংখ্যাটা কমিয়ে বরং রক্ষণাবেক্ষণে জোর দাও। আমরা যে কয়টি গাছ লাগাচ্ছি, সব যেন সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে।’
এই অ্যাসাইনমেন্টে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর খরচ হয়েছে ১০০ টাকা। তারিফুল ইসলাম বলেন, যেকোনো অ্যাসাইনমেন্টেই কিন্তু কিছু টাকা খরচ হয়ে যায়। যেমন কাগজ–কলম কেনা, স্পাইরাল বাইন্ডিং। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের ৮০-৯০ বা ১০০ টাকা খরচ হয়েই যায়।
সমাজ ও পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান তারিফুল ইসলাম। একই অ্যাসাইনমেন্ট তিনি প্রথম ব্যাচ ও তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীদেরও দিয়েছেন। তাঁর এই উদ্যোগ বছরব্যাপী চলতে থাকবে বলেও জানান তিনি।