জুলাই–আগস্টজুড়ে অনেক ছবি তুলেছি, কিন্তু এই কিশোরের ছবিটি ভুলতে পারি না
২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পাঠকের কাছে ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানের সময়কার ছবি ও ভিডিও আহ্বান করেছিল প্রথম আলো। ‘ক্যামেরায় বিদ্রোহ’ নামের এই আয়োজনে সাড়া দেন বহু পাঠক। বিচারকদের দৃষ্টিতে তৃতীয় সেরা হয়েছে আব্দুল্লাহ আল যুবায়েরের এই ছবিটি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরুর দিকেই আমার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়ি। পরীক্ষা শেষ, তাই গ্রামে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি দেখে ঢাকাতেই থেকে যাই। ১০ জুলাই থেকে প্রায় দিনই ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়ি। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, মতিঝিল, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর, বিজয় সরণিসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ছবি তুলি। চোখের সামনে যা দেখি, তাই ক্যামেরাবন্দী করি।
পুরস্কার বিজয়ী ছবিটি ৪ আগস্টে তোলা। কারফিউ তুলে নেওয়ার পর সেদিনও ক্যামেরা নিয়ে ক্যাম্পাসে ছবি তুলছিলাম। বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখি মিছিল বের হয়েছে। মিছিলকারীরা হাসপাতাল থেকে চারজনের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাচ্ছেন। আমিও তাঁদের সঙ্গে শহীদ মিনারে যাই। সেখানে যাওয়ার পর রক্তাক্ত, গুলিবিদ্ধ মরদেহগুলো রাখা হয়। বেশ কয়েকজন আহত ব্যক্তিকেও দেখলাম। মৃতদেহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সীর চেহারা দেখে মনে হলো কিশোর, বয়স কত হবে, পনেরো কি ষোলো। জাতীয় পতাকায় ঢাকা তার রক্তাক্ত শরীর।
আন্দোলনের সময় প্রায় প্রতিদিনই মানুষকে গুলিবিদ্ধ হতে দেখেছি। কিন্তু সেদিন শহীদ মিনারে রাখা মৃতদেহগুলোর মধ্যে কেন যেন কিশোর ছেলেটাকে দেখে থমকে যাই। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ কেউ একজন পাশ থেকে ছবি তুলতে বলল। তখনই ছবিটি তুলি।
আন্দোলনের ছবিগুলো ফেসবুকে শেয়ার দিতাম। এ কারণে ৫ আগস্টের আগে পরিবারের সবাই আমাকে নিয়ে বেশ আতঙ্কে ছিলেন। আমিও কিছুটা ভয় পেয়ে জুলাইয়ের মাঝামাঝি আজিমপুরে আমার বাসা ছেড়ে ধানমন্ডিতে এক ভাইয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলাম।
জুলাই–আগস্টজুড়ে অনেক ছবি তুলেছি। অনেক মানুষকে আহত ও নিহত হতে দেখেছি। কিন্তু এই কিশোরের ছবিটি কেন জানি এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারি না।
অনুলিখন: আবৃতি আহমেদ