জাপানের এই তিন সূত্রে লুকিয়ে আছে সুখের রহস্য
একেক দেশে জীবনযাপনের একেক নিয়ম। কেউ হয়তো জীবনকে এক রকমভাবে ছকে ফেলে এগিয়ে যেতে পছন্দ করেন। কেউবা বিশ্বাস করেন, জীবন একটাই, নিয়মে বেঁধে কী লাভ! জাপানের বাসিন্দারা জীবনকে ভালোবাসেন পূর্ণভাবে। প্রতিদিন সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলেন তাঁরা। শুধু জাপানেই নয়, এসব নিয়ম বিভিন্ন দেশের অসংখ্য মানুষকে প্রভাবিত করেছে। ধারণাগুলো অনুসরণ করে জীবনের অনেক সমস্যার যেমন সমাধান পাওয়া যায়, আবার মানুষ হিসেবেও সুখী থাকা সম্ভব।
ইকিগাই
জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করা। ‘ইকি’ মানে বাঁচা, ‘গাই’ মানে কারণ। বেঁচে থাকার কারণ লাগে জীবনে। কারণ না থাকলে, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতেও আলসেমি লাগে। চাকরি হোক, স্কুল হোক, সন্তানের কারণে হোক—নারী, পুরুষ সবার জীবনেই কোনো না কোনো কারণ লাগে, প্রতিদিন নিজেকে চালিয়ে নেওয়ার জন্য। ‘ইকিগাই: দ্য জাপানিজ সিক্রেট টু আ লং অ্যান্ড হ্যাপি লাইফ’ বইয়ের লেখক হেক্টর গার্সিয়া জীবনের এই বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরেছেন। ২০১৬ সালে বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত তিন মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে। লেখক মনে করেন, শুধু বয়স্ক নয়, তরুণদের জীবনেও প্রয়োজন ইকিগাইয়ের ধারণা। ২০২১ সালে ইউনিসেফের করা একটি জরিপে দেখা গেছে, ১৫ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে বয়স এমন জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশ প্রায়ই ভীত বোধ করে এবং ১৯ শতাংশ মানুষ বিষণ্নতায় ভোগে। লেখক এ কারণেই মনে করেন যে খুব ছোটবেলা থেকেই ইকিগাই অনুসরণ করা উচিত। ইকিগাইয়ে চারটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ—আপনি কী ভালোবাসেন, আপনি কোন কাজটিতে পারদর্শী, আপনার আশপাশে বা পৃথিবীতে মানুষের চাহিদা এবং আপনার পেশা কী। এই চারটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই যে কেউ জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে বের করতে পারে।
পোমোদোরো
২৫ মিনিট একনাগাড়ে কাজ করুন কোনো বাধা ছাড়া। ৫ মিনিটের বিরতি নিন। এরপর আবার কাজ করতে শুরু করুন। এ পদ্ধতিতে কম সময়ে অনেক কাজ করা সম্ভব। এই পদ্ধতিকে বলা হয় পোমোদোরো পদ্ধতি। উদ্যোক্তা ফ্রান্সেসকো সিরিলো ১৯৮০ দশকের শেষ দিকে পোমোদোরো পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি অধ্যয়নের সময়সূচি ঠিক করার জন্য টমেটো আকৃতির রান্নাঘর টাইমার ব্যবহার করতেন। অনেক হিসাব-নিকাশ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর ২৫ মিনিটকেই বেছে নেন একনাগাড়ে পড়া বা অন্য যেকোনো ধরনের কাজ করার জন্য। তবে চারটি পোমোদোরো করার পর ১৫ থেকে ৩০ মিনিটের বিরতি নেওয়া ভালো। যাঁরা প্রায়ই কাজ করতে গিয়ে মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন, সময়ের আগে কাজ শেষ করতে পারেন না, এক দিনের মধ্যে নির্ধারিত কাজগুলো করা হয়ে ওঠে না যাঁদের, পোমোদোরো পদ্ধতিটি তাঁদের জন্য সমাধান।
হারা হাচি বু
এই ধারণা বিশ্বাস করে যে একসঙ্গে বেশি না খাওয়াই ভালো। খেতে খেতে পেট যখন ভরে যাবে ৮০ শতাংশ, তখন খাওয়া বন্ধ করে দিন। এতে করে শারীরিকভাবে কর্মক্ষম থাকা সম্ভব। অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে অনেক সময় শরীর খারাপ করতে পারে। মানুষকে সচেতনতার সঙ্গে মনোযোগ দিয়ে খাবার খাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করে হারা হাচি বু। খাবারের স্বাদ ও টেক্সচারের দিকে যদি মনোযোগ থাকে, তাহলে পেট পুরোপুরি ভরে যাওয়ার আগেই বোঝা যায়। খাওয়ার সময় অল্প অল্প করে খাওয়া ভালো। অনেক দেশেই ছোট ছোট বাটিতে খাবার পরিবেশন করা হয়। এতে করে খাওয়ার সময় পরিমাণ থাকে পরিমিত। এ ছাড়া ধীরে ধীরে খাবার চিবানোর ওপর গুরুত্ব দেয় হারা হাচি বু। খাওয়ার সময় চামচ ব্যবহার করলে সেটি মাঝখানে প্লেটের ওপরও রাখতে পারেন। এই ধারণায় যাঁরা বিশ্বাস করেন, তাঁরা খাওয়ার সময় একে অপরের সঙ্গে কথা বলা ও সামাজিকীকরণ করে থাকেন। এতে করে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া হয় না বলে মনে করেন জাপানের মানুষেরা।
সূত্র: কিজুনা, সিক্স সিগমা, লিঙ্কডইন, স্টেডলার, সাইকি