আবরার ফাহাদ ফিরলেন আবু হয়ে

রুম নম্বর ২০১১ ছবির পোস্টার

২২ আগস্ট রাত ১০টা। হঠাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে চিৎকার, কান্নার আওয়াজ। বিভিন্ন রুম থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে এলেন, তাঁদের চোখে-মুখে আতঙ্ক, কী হলো! তড়িঘড়ি কয়েকজন হলের নিচতলায় নেমে দেখতে পেলেন, সিঁড়িতে একটা নিথর দেহ পড়ে আছে। ঠিক তখনই কেউ একজন বলে উঠলেন, ‘কাট!’ হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন সবাই। বোঝা গেল, শুটিং চলছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ জিসান আহমেদ একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণ করছেন। নাম রুম নম্বর ২০১১। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছে গল্প। তারই শুটিং।

২০১৯ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শিবির সন্দেহে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে ছবিটি মুক্তি দেওয়ার কথা চলছে। সম্পূর্ণ শূন্য বাজেটে শুরু করা চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী। ‘জিসু এন্টারটেইনমেন্ট’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে, যার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও জিসান। এর আগে মনপুরা, আয়নাবাজি, পিকে, থ্রি ইডিয়টস, জোকার, নাইনটি সিক্স (৯৬), ছিচোড়ে, ইত্যাদি খ্যাতনামা চলচ্চিত্রের বিশেষ কিছু অংশ ‘রিমেক’ (পুনর্নির্মাণ) করে আলোচনায় এসেছিলেন এই তরুণ।

চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, রুম নম্বর ২০১১–র নির্মাণকাজ শেষ দিকে। বর্তমানে সম্পাদনার কাজ চলছে। আবরার ফাহাদের পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব ও আসামিদের জবানবন্দি থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে চিত্রনাট্য সাজানো হয়েছে। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ শুভ। গল্পে তাঁর চরিত্রের নাম আবু। সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন তপুচন্দ্র দাস, রাইয়ান মিয়া ও এইচ এম এরশাদ। সবাই জাহাঙ্গীরনগরের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থী।

শুটিংয়ের দৃশ্য
ছবি: সংগৃহীত

কোন ভাবনা থেকে এই ছবির কাজ শুরু করেছিলেন? জানতে চাইলে জিসান বলেন, ‘অনেকগুলো বিখ্যাত চলচ্চিত্রে বিশেষ অংশ রিমেক করেছি। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি একটা সময় মৌলিক কাজ করার প্রেরণা থেকেই মূলত আবরার ফাহাদের ঘটনাটি মাথায় আসে। তখন কিছু বন্ধু ও সিনিয়রের সঙ্গে আলাপ করি। আমি যেহেতু হলে থাকি, তখন বিষয়টা খুব ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তাই সিনিয়ররা স্বাভাবিকভাবেই আমাকে নিরুৎসাহিত করেছিলেন। তবে আমার মধ্যে কাজটা করার প্রবল বাসনা ছিল। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের দিন রাতেই মাথায় আসে, এবার কাজটা শুরু করব। তখন আমার সহকারী পরিচালকদের বিষয়টি জানালাম, তাঁরাও আগ্রহ দেখালেন। পরদিনই কাজ শুরু করে দিই। আবরার ফাহাদ ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি, পত্রপত্রিকা ঘেঁটে আসামিদের জবানবন্দিগুলো পড়ে একটা গল্প দাঁড় করাই। তারপর তাঁর পরিবারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি।’

আরও পড়ুন

শুটিংয়ের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে জাহাঙ্গীরনগরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও শেখ রাসেল হল। শেখ রাসেল হলের ৬০৪ নম্বর রুমেই হয়েছে একটা বড় অংশের শুটিং। জিসান বলেন, ‘বুয়েটে যেমন একটা টর্চার সেল ছিল, সে বিষয়টা মাথায় রেখেই আমরা ওই রুমটা বেছে নিই। গল্পে দর্শকদের জন্য একটি টুইস্ট রাখা হয়েছে।’

ছবির পেছনের কলাকুশলীরা
ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান সময়ে এই ছবির একটা আলাদা গুরুত্ব তৈরি হয়েছে, সেটিও মনে করিয়ে দিলেন জিসান। বলছিলেন, ‘বুয়েটের মতো একটি ক্যাম্পাসে আবরারকে যেভাবে মারা হয়েছিল, এমন ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। একই সঙ্গে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগরেও কিন্তু গণপিটুনিতে দুজন মারা গেছেন। দেশসেরা তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। সিনেমাটি এসব বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করবে বলে আমার বিশ্বাস। আবরারকে যেন আমরা ভুলে না যাই। এ রকম বর্বরতা যেন আর কখনো আমাদের কোনো ক্যাম্পাসেই দেখতে না হয়।’

আবরার চরিত্রে অভিনয় করা সাজ্জাদ শুভ বলেন, ‘আবরার ফাহাদ দেশে যেহেতু আলোচিত নাম, তাঁর চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে প্রথম দিকে একটু ভয় কাজ করছিল। ধীরে ধীরে সেটা উতরাতে পেরেছি। সিনেমাটিতে আমরা নিজেদের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’