নিঃসংকোচে আজ হাতে মোমবাতি ধরিয়ে দিতে পারেন

প্রাচীনকাল থেকেই মোমবাতির বহুমুখী ব্যবহার চলে আসছে
ছবি: ডেজ অব দ্য ইয়ার

রাস্তার পাশে, শহীদ মিনারের বেদিতে কিংবা ধীরপায়ে হাঁটা মিছিলের প্রতিটি হাতে জ্বলছে মোমবাতি। চলছে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে নীরব ও অহিংস প্রতিবাদ। ছিমছাম ছোট্ট সাজানো ঘর। সার বেঁধে মোমবাতি জ্বলছে। বাইরে ঘনিয়ে আসছে অন্ধকার। স্নিগ্ধ আলো আর মোহনীয় সুঘ্রাণ ছড়িয়ে আছে ঘরময়। অদ্ভুত মুগ্ধতায় ভালোবাসার মানুষের চোখে চোখ রেখে বসে আছেন পরস্পর। মোমের নরম আলোয় বসে রাতের খাবার সারছেন শৌখিন কেউ কেউ, যাকে বলে—ক্যান্ডেল লাইট ডিনার।

প্রাচীনকাল থেকেই মোমবাতির বহুমুখী ব্যবহার চলে আসছে। আধুনিক বিজ্ঞানের এই রমরমা যুগেও মোমবাতি তার কদর হারায়নি। বিয়েবার্ষিকী, জন্মদিন, শোক প্রকাশ, পূজা-উপাসনা, প্রেম, প্রতিবাদ, অনুষ্ঠান উদ্বোধন—কোথায় নেই এর ব্যবহার! বিদ্যুৎ–বিভ্রাট হলে পাড়া–মহল্লা, গলি-কলোনি কিংবা বহুতল ভবনের জানালার ফাঁক দিয়ে দেখা যায় টিমটিমে মোমের আলো। সে এক স্বর্গীয় দৃশ্য! মনস্কামনা পূরণে দরগায় মোমবাতি মানতের রেওয়াজ তো বহু পুরোনো।

আরও পড়ুন

বিভিন্ন সূত্র বলছে, প্রাচীনকালে দৃশ্যমান আলোর তীব্রতা পরিমাপের একক হিসেবে ব্যবহৃত হতো মোমবাতির আলো। এমনকি ঘড়ি আবিষ্কারের আগে মোমবাতি দিয়ে সময় নির্ণয় করা হতো। ক্যান্ডেল ক্লক বিষয়ে সবচেয়ে পুরোনো নিদর্শন পাওয়া যায় ৫২০ খ্রিষ্টপূর্ব ইয়ো জিয়াঙ্গু নামক এক চীনা কবির কবিতায়। ও হ্যাঁ, কবিতার কথায় মনে পড়ল মোমবাতি নিয়ে কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের লেখা বাংলা সাহিত্যের সর্বাধিক পঠিত পঙ্‌ক্তি—‘যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি/আশু গৃহে তার দেখিবে না আর নিশীথে প্রদীপ ভাতি।’

বেশ তত্ত্বকথা বটে। এই মওকায় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর একটাই মোমবাতি কবিতার দুয়েকটা পঙ্‌ক্তি পড়া যাক—‘একটাই মোমবাতি, তুমি তাকে কেন দু’দিকে জ্বেলেছ?/খুব অহংকারী হলে তবেই এমন কাণ্ড করা যায়।/তুমি এত অহংকারী কেন?’

কেন অহংকারী—সে প্রসঙ্গ অমীমাংসিতই থাক; বরং জানা যাক মোমবাতির কিছু উপকারী দিক। ঘরের স্যাঁতসেঁতে ভাব দূর করতে কিংবা পোকামাকড়ের উপদ্রব কমাতে এটি দারুণ কার্যকর। বিষণ্ন মনকে ভালো করে দিতে পারে মোমের গন্ধময় আলো।

আজ ডিসেম্বরের ২ তারিখ, মাসের প্রথম শনিবার, মোমবাতি দিবস। বাথ অ্যান্ড বডি ওয়ার্কস নামের একটি আমেরিকান কোম্পানির উদ্যোগে ২০১৩ সালে দিবসটি চালু হয়।

সূত্র: ডেজ অব দ্য ইয়ার