ডায়াবেটিস রোগীরা রাতে কী খাবেন

যাঁদের শেষ রাতে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার (রক্তে হঠাৎ শর্করা কমে যাওয়া) ঝুঁকি থাকে, তাঁরা সম্ভব হলে ঘুমানোর আগে টুকটাক স্ন্যাকস খেতে পারেন।
ছবি: পেক্সেলস

ডিনার বা নৈশভোজ ডায়াবেটিসের রোগীদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। ডায়াবেটিসের রোগীরা রাতে কী খাবেন, তা নিয়ে প্রায়ই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন তাঁরা। অনেকে মনে করেন রাতের বেলা খুব কম খাবার খেতে হবে, আবার অনেকে মনে করেন রাতের খাবার বাদ দেওয়াই ভালো। রাতের খাবারে রুটিই খেতে হবে, এমন ধারণা পোষণ করেন কেউ কেউ। কিন্তু রুটি তো কোনো ওষুধ নয়, এটাও ভাতের মতোই কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার। ডায়াবেটিসে শর্করা বেছে ও পরিমাপ মতো খেতে হয়। সে রুটিই হোক, বা ভাত।

খেতে হবে পরিমাপ বুঝে
ছবি: পেক্সেলস

কখন খাবেন রাতের খাবার

রাতের খাবার কখন খাচ্ছেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই রাতের খাবার খেতে রাত ১০টা থেকে ১১টা বাজিয়ে ফেলেন। অনেকে আরও দেরিতে খান। এটা একদমই উচিত নয়। খাবার হচ্ছে আমাদের শরীরের জ্বালানি। খাবার খাওয়ার পর যদি ওই খাবার শরীরে খরচ না হয়, মানে ক্যালরি বার্ন না হয়, তাহলে পরে ডায়াবেটিস বেড়ে যাবে। রাতের খাবার গ্রহণের পরপরই শুয়ে পড়া বা ঘুমিয়ে পড়ার কারণে সারা রাত ও সকাল পর্যন্ত রক্তে শর্করা বাড়তে থাকে, কারণ, এই খাবারের ক্যালরি আমাদের শরীরে খরচ হওয়ার সুযোগ পায় না। তাই অবশ্যই রাত আটটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে রাতের খাবার শেষ করুন।

আরও পড়ুন

খাওয়ার অন্তত তিন ঘণ্টা পর ঘুমাতে যাবেন। তাহলে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ক্যালরি খরচ হয়ে যাবে। বাকি ক্যালরি ঘুমের মধ্যে খুব ধীরে ধীরে খরচ হবে। যাঁরা ইনসুলিন বা সালফোনিল ইউরিয়া ওষুধ খান এবং যাঁদের শেষ রাতে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার (রক্তে হঠাৎ শর্করা কমে যাওয়া) ঝুঁকি থাকে, তাঁরা সম্ভব হলে ঘুমানোর আগে টুকটাক স্ন্যাকস খেতে পারেন। যেমন এক কাপ দুধ।

কতটুকু খাবেন

সারা দিনের মোট ক্যালরির ২০ শতাংশ খাবার রাতের খাবার হিসেবে নিতে হবে। অর্থাৎ এই হিসাবে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ কিলোক্যালরি কোনো খাদ্যতালিকার ৩০০ থেকে ৩৫০ কিলোক্যালরি খেতে হবে রাতে।

লাল আটার রুটি খেতে পারেন রাতে
ছবি: প্রথম আলো

কী খাবেন

ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার বাছাইয়ে একটু সতর্ক হতে হবে। একই সঙ্গে কোনো খাবার যদি লো-গ্লাইসিমিক ইনডেক্স এবং লো-গ্লাইসিমিক লোড যুক্ত হয়, তাহলে এটা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অতি উত্তম। এমন খাবার থেকে খুব ধীরে ধীরে গ্লুকোজ তৈরি হয়। তাই এমন খাবারগুলোই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশি উপযোগী। যেমন মোটা সেদ্ধ লাল চাল, লাল আটা, জবের আটা, ওটস, চিবিয়ে খেতে হয় এমন ফল, সব ধরনের শাক, গাজর, লাউ, পেঁপে, চালকুমড়া, দুধ, টক দই ইত্যাদি খাবারের গ্লাইসিমিক ইনডেক্স তুলনামূলকভাবে বেশ কম (লো)।

আরও পড়ুন

আসুন রাতে খাবারের কিছু আদর্শ মেনু জেনে নিই।
১. লাল আটা বা জবের আটার ২টি রুটি + ৬০ গ্রাম মাছ বা মাংস + রান্না করা ১ কাপ পাঁচমিশালী সবজি + ১ কাপ পাতলা ডাল।
ক্যালরি: মোট ৩২৫ কিলোক্যালরি।
২. মোটা চালের ১ কাপ ভাত + ৬০ গ্রাম মাছ বা মাংস + পাঁচমিশালী ১ কাপ সবজি + ১ কাপ মাঝারি ঘন ডাল।
ক্যালরি: মোট ৩৪৫ কিলোক্যালরি।
৩. ২০০ মিলি সর ছাড়া দুধ + ২ টেবিল চামচ ওটস + ১ চা চামচ চিয়া সিডস + ১টি ছোট আপেল বা কলাকুচি করে মিশিয়ে নেবেন।
ক্যালরি: মোট ৩৪০ কিলোক্যালরি।
৪. ২০০ গ্রাম লো-ফ্যাট টক দই + ২৫ গ্রাম বার্লিফ্ল্যাক্স + ২ চা–চামচ চিয়া সিডস।
ক্যালরি: প্রায় ৩১০ কিলোক্যালরি।
রাতের খাবারে অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার না খাওয়া উত্তম। রাতে খিচুড়ি, পোলাও বা বিরিয়ানি খাওয়া যাবে না। এগুলো খেলে ডায়াবেটিস, প্রেশার, কোলেস্টেরল এবং ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়, সঙ্গে অ্যাসিডিটির সমস্যাও বেড়ে যায়।