মাটির ঘরটা হারিয়ে ফেরদৌস আরা বললেন, ‘এখন আমরা কই থাকব?’
ফেনী সদরের পূর্বালী গ্রামে ফেরদৌস আরার বাড়ি। ষাটোর্ধ্ব এই নারীর স্বামী মারা গেছেন বছর পাঁচেক আগে। কয়েক বছর আগেই দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন ছেলের সঙ্গে থাকেন। ২১ আগস্ট রাতে তাঁর গ্রামে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে বন্যার পানি। রাত যত গভীর হয়, পানিও তত বাড়তে থাকে। পানির প্রবল তোড়ে একপর্যায়ে তাঁর মাটির ঘরটার দেয়াল ধসে পড়ে। জমিজমা, সঞ্চয়, গরু-ছাগল—কিছুই তাঁর নেই। সম্বল বলতে ছিল ৫০ বছর আগে স্বামীর বানানো একচালা এই মাটির ঘর।
ঘর তলিয়ে যাওয়ার পর এক কাপড়ে স্থানীয় একটা মাদ্রাসায় আশ্রয় নেয় ফেরদৌস আরার পরিবার। মাদ্রাসায় আশ্রয় নেওয়ার পর তিন দিন তাঁদের পেটে কোনো খাবার পড়েনি। শুধু পানিটা পেয়েছিলেন। পরে ত্রাণ খুঁজে আনেন স্থানীয় লোকজন।
২৬ আগস্ট খাবারের খোঁজে বেরিয়েছিলেন ফেরদৌস আরা। তখন দুপুর ১২টা। একবুক পানিতে হেঁটে এক কিলোমিটার দূরের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। বুকপানিতে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, এত পানি আর কখনো দেখেননি। হঠাৎ করে গোড়ালি থেকে হাঁটু, হাঁটু থেকে বুক পর্যন্ত পানি উঠে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘরের দেয়াল ধসে পড়ে।
শেষের কথাটা বলতে গিয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেন এই নারী। কিছুটা সামলে নিয়ে বলতে থাকেন, ‘এখন আমরা কোথায় যাব, কই থাকব?’