পোল্যান্ড থেকে পুরস্কার আনল ব্র্যাকের শিক্ষার্থীদের তৈরি ড্রোন
‘স্থলের জন্য রোভার, আর আকাশের জন্য ড্রোন—এই দুইয়ের সমন্বয়ে চ্যালেঞ্জিং সব উদ্ধার অভিযানে সাহায্য করতে সক্ষম আমাদের প্রকল্প’, বলছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাদিকুল আলীম।
গত ২৫ জুন শেষ হলো ইউরোপিয়ান রোবোটিকস লিগ (ইআরএল)। পোল্যান্ডের পোজনান শহরে ২০ জুন শুরু হয়েছিল প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব। প্রতিযোগিতাটির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো দুর্যোগে কিংবা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রোবটকে কাজে লাগানোর উপায় খুঁজে বের করা।
‘ইআরএল ইমার্জেন্সি লোকাল কম্পিটিশন’ শিরোনামের এই প্রতিযোগিতার যৌথ আয়োজক ছিল ইউরোপিয়ান স্পেস ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড অ্যারোস্পেস টেকনোলজিস ও পোজনান ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি। দুই ধাপের বাছাইপর্ব শেষে মোট পাঁচটি দলকে পোল্যান্ডে আমন্ত্রণ জানানো হয়। দুই ধাপ উতরে প্রতিযোগিতার ফাইনালে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির দল ‘ব্র্যাকইউ দ্বিচারি’। রোবট আর ড্রোনের কঠিন লড়াই শেষে চতুর্থ হন বাংলাদেশের এই শিক্ষার্থীরা। প্রথম রাউন্ডে ভালো ফল করতে না পারলেও পরের রাউন্ডগুলোতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ব্র্যাকের শিক্ষার্থীদের দল। পুরস্কার হিসেবে তাঁদের দেওয়া হয়েছে পারসিভারেন্স অ্যাওয়ার্ড।
দলের অন্যতম সদস্য গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান সাদিকুল আলীম বললেন, ‘দেশের হয়ে আমরাই প্রথম এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিলাম। সেরা হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই পোল্যান্ড গিয়েছিলাম। সেটা সম্ভব হয়নি। প্রস্তুতির জন্য খুব বেশি সময় পাইনি। তবু যে ফল পেয়েছি, তা-ও মন্দ নয়। অংশগ্রহণকারী অন্য দলগুলোকে দেখেছি, ওরা নানা রকম সুযোগ-সুবিধা পায়। ওদের ল্যাবগুলোও বেশ আধুনিক। ল্যাবে বসেই নিজেদের নকশার হার্ডওয়্যার কাঠামো বানানো যায়। সে সুযোগ আমাদের নেই।’
এই প্রকল্প দেশে বিভিন্ন গবেষণায় কাজে লাগানো সম্ভব বলে জানালেন দলের সদস্যরা। ব্র্যাকইউ দ্বিচারির ব্যবস্থাপনা ও গণসংযোগ প্রধান আমান্তু আমিন বলছিলেন, ‘এই প্রতিযোগিতার আগেই বন বিভাগের সঙ্গে আমাদের প্রাথমিক আলাপ হয়েছিল। আশা করছি, শিগগিরই আমাদের প্রকল্পের বিস্তারিত তাঁদের সামনে উপস্থাপনের সুযোগ পাব। বন বিভাগ ড্রোন দিয়ে বন পর্যবেক্ষণ করে, এ জন্য অনেক টাকা খরচ করে তাদের ড্রোন কিনতে হয়। আমরা এই ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারি। আমাদের স্বয়ংক্রিয় ড্রোন একটা নির্দিষ্ট জায়গা থেকে উড়ে, নির্ধারিত এলাকা ঘুরে আবার একই জায়গায় ফেরত আসবে। এতে কাজটা যেমন সহজ হবে, নিজেদের বানানো ড্রোন হওয়ায় খরচও কমে যাবে। দুর্যোগের সময় রোভার ও ড্রোন কাজে লাগিয়ে কীভাবে উদ্ধার কার্যক্রমে সাহায্য করা যায়, সেটা নিয়েও আমরা গবেষণা করছি।’
ব্র্যাকইউ দ্বিচারির উপদেষ্টা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গবেষণা সহযোগী আবদুল্লা হিল কাফি। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তৈরি বাংলাদেশের প্রথম ক্ষুদ্রাকৃতির কৃত্রিম উপগ্রহ ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ নির্মাণের পেছনেও ছিল তাঁর বিশেষ ভূমিকা। কয়েক বছর ধরেই মহাকাশ গবেষণা নিয়ে কাজ করছেন কাফি। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনটিক্যাল ফেডারেশন (আইএএফ) সম্প্রতি ২০২২ সালের সেরা ৩০ ‘ইমার্জিং স্পেস লিডার’–এর নাম ঘোষণা করেছে। সেখানেও স্থান পেয়েছেন এই গবেষক। সবকিছু ঠিক থাকলে, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে পুরস্কার গ্রহণ করতে প্যারিসে যাবেন তিনি। নিজ দেশে মহাকাশ নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন, নতুন প্রজন্মকে এ ব্যাপারে আগ্রহী করতে ভূমিকা রাখছেন, তাঁদেরকেই মূলত এ পুরস্কার দেওয়া হয়। বাংলাদেশ থেকে তিনিই প্রথম এ পুরস্কার পাচ্ছেন।
আবদুল্লা হিল কাফি বলছিলেন, ‘ব্র্যাক অন্বেষা ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর থেকেই মূলত অনেকের মধ্যে মহাকাশ নিয়ে কাজ করার আগ্রহ বেড়েছে। এ ধরনের গবেষণার জন্য যে রকম ল্যাব থাকা উচিত, আমাদের দেশে সে রকম নেই। তা ছাড়া এ ধরনের গবেষণা বেশ ব্যয়বহুল। তাই খুব কম লোকজন এই খাতে কাজ করে। গবেষণার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আরও আগ্রহী করতে আমরা নিয়মিত স্যাটেলাইট মিশন আইডিয়া প্রতিযোগিতা, ছোট আকারে স্যাটেলাইট নকশা তৈরি প্রভৃতি প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। সামনে আরও বড় পরিসরে এই প্রতিযোগিতাগুলো আয়োজন করতে পারলে গবেষণার ব্যাপারে আগ্রহ বাড়বে।’
‘ব্র্যাকইউ দ্বিচারি’ দলের অন্য সদস্যরা হলেন মাহবুব উল হক, জহির উদ্দিন, ফিরোজ ওয়াদুদ, শামস ফেরদৌস, সিহাব সাহারিয়ার, তানজিমুল আলম ও মুনতাসীর আহাদ।