শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি অবশ্যই থাকা উচিত না: রুয়েটের নবনিযুক্ত উপাচার্য
দীর্ঘ এক বছর পর উপাচার্য পেয়েছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)। দায়িত্ব পেয়েছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম। এর আগে তিনি চুয়েট এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাঈদ চৌধুরী
দীর্ঘদিন রুয়েটে উপাচার্য ছিল না। যোগ দিয়েই আপনি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন। এই চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করবেন বলে ভাবছেন?
শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী—সবাইকে নিয়েই তো একটা বিশ্ববিদ্যালয়। অতএব সবার অংশগ্রহণে, সবার সহযোগিতাতেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করব।
কোন দিকটির ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিতে চান?
একাডেমিক দিকে বেশি জোর দিতে চাই। রুয়েট একটি একাডেমিক বিশ্ববিদ্যালয়। এটিকে একাডেমিক এবং গবেষণামুখী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তৈরি করতে হবে। ভিশন ২০৪১-এর জন্য দক্ষ প্রকৌশলী গড়ে তুলতে শিক্ষকদের যে ধরনের পরামর্শ দেওয়া প্রয়োজন, সেদিকেই আমার বেশি নজর দিতে হবে।
শিক্ষার্থীদের পড়ানো, নাকি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন, কোনটা বেশি উপভোগ করেন?
আমার সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো এবং তাদের গবেষণায় সম্পৃক্ত করা।
আপনি যখন ছাত্র ছিলেন, সেই সময়ের কোনো শিক্ষকের কথা কি বলতে পারেন, আপনার ওপর যাঁর প্রভাব আছে?
দু-তিনজন শিক্ষকের কথা বলতে পারি। এর মধ্যে আছেন তৎকালীন চট্টগ্রাম প্রকৌশল কলেজের অধ্যক্ষ আ ক ম রেজাউল করিম স্যার, যাঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। এ ছাড়া অধ্যাপক সৈয়দ মতিনুর রশিদ স্যার নিজে আমাকে পড়িয়েছেন। অধ্যাপক মোজাম্মেল হক স্যারকেও খুব কাছ থেকে পেয়েছি। আমার ওপর প্রভাব বলতে গেলে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী স্যারের কথা বলতে পারি। আমি তাঁর ছাত্র ছিলাম না, একসঙ্গে চাকরিও করিনি। তবে বেশ কয়েকটি সরকারি প্রকল্পে পেশাগত কাজ করেছি অনেক দিন। জাপান-বাংলাদেশ একটি প্রকল্প ছিল, জামিলুর রেজা স্যার সেটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর জাপান সরকার আমাকে সেই দায়িত্ব দিয়েছিল।
কিছুদিন আগে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা শপথ নিলেন, তাঁরা ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত রাখবেন। আপনার কী মনে হয়? ক্যাম্পাসে রাজনীতি থাকা উচিত, নাকি উচিত না?
পৃথিবীর যেকোনো দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাই না কেন, সেখানে রাজনীতি বলতে কিছু নেই। আমাদের এখানে যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি অবশ্যই থাকা উচিত না। শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করবে, প্রকৃতির সঙ্গে মিশবে, সেখান থেকে শিখবে এবং পেশাগত দক্ষতা অর্জন করবে। শিক্ষকেরা প্রতি সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে নিয়ে যাবেন। শিক্ষকেরা থিওরি পড়াচ্ছেন, ল্যাবে ছোটখাটো কাজ করাচ্ছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের নিয়ে যেতে হবে সরাসরি ইন্ডাস্ট্রিগুলোর ল্যাবে। এগুলো অনেক ব্যয়বহুল, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে তৈরি সম্ভব নয়। তাই সেখানে গিয়েই শিক্ষার্থীদের এসব দেখাতে হবে। তাহলে তাঁরা নিজেরাই এসব শেখার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করবে এবং ২০৪১ সালের জন্য আমরা দক্ষ প্রকৌশলী গড়ে তুলতে পারব।
র্যাঙ্কিংয়ে রুয়েটকে এগিয়ে নিতে কোনো বিশেষ ভূমিকা কি রাখবেন?
প্রাথমিকভাবে লক্ষ্য হবে পৃথিবীর প্রায় ১০ থেকে ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করা। পরের কাজ হলো দেশে ও বিদেশে শিক্ষক বিনিময় করা। যেমন এখান থেকে কিছু শিক্ষক বাইরের কোনো দেশে যাবেন এবং বাইরের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বা দুই সপ্তাহের জন্য কোনো শিক্ষক এ দেশে আসবেন। এতে করে দেশের শিক্ষক বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বমানের উন্নত ল্যাবগুলো দেখে ধারণা নেবেন এবং দেশে এসে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন। বহির্বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি হবে। এরপর দরকার যৌথ প্রকল্প, যেখানে দেশ ও বিদেশের অধ্যাপকেরা একত্রে গবেষণা করবেন। বিভিন্ন ফান্ডও পাবেন। স্নাতকোত্তর, স্নাতক শিক্ষার্থীরাও গবেষণাকাজে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন। বিদেশের ভালো র্যাঙ্ক করা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকের সঙ্গে যখন দেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একত্রে গবেষণা করবেন, বিভিন্ন জার্নালে সেটি প্রকাশ করবেন, তখন র্যাঙ্কিংয়ের কি-ফ্যাক্টরগুলো বাড়বে। শুধু তা-ই নয়, ক্যাম্পাসকে ছয় মাস কিংবা এক বছরের মধ্যে ‘স্মার্ট ক্যাম্পাস’ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। ছাত্রছাত্রীদের মাঠে-ময়দানে গবেষণার জন্য নামিয়ে দিতে হবে।
রুয়েটে চলে যাওয়ার পর চুয়েটের কী সবচেয়ে বেশি মিস করবেন?
আমার ছাত্রছাত্রীকে আমি সবচেয়ে বেশি মিস করব। চুয়েট ছেড়ে আসার দিন গত বুধবারও দ্বিতীয় বর্ষের একটি ক্লাস নিয়েছি এবং এই ক্লাস না নিতে পারলে অনেক বেশি আফসোস করে যেতাম। আমি স্নাতকোত্তরেরও একটি ক্লাস নিতাম। সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে বলেছি, সম্ভব হলে তাদের সঙ্গে আমাকে অনলাইনে যুক্ত করে দিন, আমি অনলাইনে ক্লাস নেব। আমি চাই আমার ছাত্রছাত্রী আমার সঙ্গে সব সময় ফোনে, ই-মেইলে কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে, যেভাবেই হোক যোগাযোগ রাখুক। শেখার জন্য, পরামর্শের জন্য।