সপ্তাহখানেক আগে কেরানীগঞ্জের বছিলায় মধু সিটি হাউজিং সোসাইটিতে গিয়ে মন খারাপ হলো। কাশবন আছে, কিন্তু প্রতিটি থোকায় যেন মানুষের জটলা! ছবি তোলার হিড়িক পড়েছে। একদলের ছবি তোলার সময় আরেক দল অপেক্ষায় থাকে। কাশফুলের ছবি তোলার জন্য ব্যাগে ক্যামেরা নিয়েছিলাম। সেটা আর বের করা হয়নি।
কেরানীগঞ্জের কাশবনের বিরক্তির কথা আলাপের সময় বলেছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তানভীর তুষারকে। তিনি শুনেই জাহাঙ্গীরনগরে আমন্ত্রণ জানালেন। গত শুক্রবার তাঁর আমন্ত্রণে যাই সেখানে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গিয়েও দেখি মানুষ আর মানুষ। করোনায় ঘরবন্দী থেকে মানুষ যেন হাঁপিয়ে উঠেছে। আমার বিরক্তি দেখে তুষার বললেন, ‘আসেন আমার সঙ্গে’।
তাঁর দেখানো পথে হাঁটতে শুরু করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের পাশ দিয়ে বড় মাঠ পেরিয়ে এগোতে থাকি। একসময় নিজেকে আবিষ্কার করি জনশূন্য একটি জায়গায়। ঘুঘুর ডাক, ডাহুকছানার ছোটাছুটি, রঙিন ফড়িংয়ের ওড়াউড়ি সেখানে। তবে সবচেয়ে অবাক হলাম সামনে তাকিয়ে। ধবধবে সাদা কাশফুলের বন বলতে যা বোঝায়, এটা সেই বন। নাগরিক কোলাহল নেই, মানুষের সেলফি তোলার তাড়া নেই, নেই কাশফুলে লেপ্টে থাকা ধুলা। কাশবনে গোড়ালি পর্যন্ত পানি, তারপর শুকনা। হালকা বাতাসে দোল খাচ্ছে কাশফুল। শেষ বিকেলের রোদ শুভ্র কাশফুলে পড়ে এক অদ্ভুত আলোর খেলা সেখানে। আর আকাশে তাকালেই রাশি রাশি সাদা মেঘ। কী দারুণ এক পরিবেশ সেখানে! অথচ কিছুক্ষণ আগেই ছিলাম মানুষের কোলাহলে। গাড়ির হর্ন আর মানুষের জটলা থেকে এসে এমন দারুণ একটা পরিবেশ পাব, কল্পনাতেও ছিল না। হাতের ক্যামেরায় বন্দী করি সে দৃশ্য!
আমার মুগ্ধতা দেখে পাশ থেকে তুষার বলেন, ‘শহুরে কাশফুলে ধুলা পড়ে শুভ্রতা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এখানে তা নেই। জায়গাটাও অনেকে চেনে না। তাই ফুলগুলো এত সুন্দর আর সাদা।’
সন্ধ্যা অবধি থাকলাম কাশবনের পাশে। নির্মল বাতাস আর নীরবতা মনকে চাঙা করে তুলল। বুক ভরে শ্বাস নিলাম কিছুটা সময়। এ-ই বা কম কী!