২০২৪ সালে ভ্রমণ ও অ্যাডভেঞ্চারে বাংলাদেশ
রেকর্ড গড়া ঝাঁপ থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক বাংলাদেশির অ্যান্টার্কটিকা সফর, আছে আরও যত ঘটনা
এভারেস্ট থেকে অ্যান্টার্কটিকা—কোথায় না ছুটে গেছেন আমাদের তরুণেরা। ৪২ হাজার ফুট ওপর থেকে শূন্যে ঝাঁপ দিয়েছেন কেউ; কেউ হেঁটেই বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে পড়েছেন, কেউ আবার সাইকেল নিয়েই পৌঁছে গেছেন হিমালয়ে। ২০২৪ সালে ভ্রমণ ও অ্যাডভেঞ্চারে বাংলাদেশিদের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অর্জন ফিরে দেখা।
একঝাঁপে বিশ্ব রেকর্ড
বাংলাদেশের পতাকা হাতে উড়ন্ত বিমান থেকে ঝাঁপ দিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম তুলেছেন আশিক চৌধুরী। ‘গ্রেটেস্ট ডিসট্যান্স ফ্রিফল উইথ আ ব্যানার/ফ্ল্যাগ’ শাখায় রেকর্ডটির আগের মালিক ছিলেন ভারতের জিতিন বিজয়ানা। এই রেকর্ড নিজের করে নেওয়ার জন্য গত ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসে ৪১ হাজার ৭৯৫ ফুট উঁচু দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমান থেকে লাফ দেন এই বাংলাদেশি স্কাইডাইভার। আশিক চৌধুরীর এই প্রচেষ্টায় সহযোগী ছিল প্রথম আলো।
এভারেস্টের পর লোৎসে
২০১৩ সালের পর বাংলাদেশি পর্বতারোহীদের এভারেস্ট অভিযানে ভাটা পড়ে। ছোট–বড় বেশ কয়েকটি পর্বতাভিযান পরিচালিত হলেও এভারেস্ট অধরাই থেকে যায়। ১৯ মে ১১ বছরের সেই খরা কাটিয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা ওড়ান বাবর আলী। এভারেস্টে আরোহণের দুই দিন পর পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বত লোৎসেও (৮ হাজার ৫১৬ মিটার) জয় করেন ৩৩ বছর বয়সী বাবর। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে একই অভিযানে একসঙ্গে দুটি আট হাজার মিটার উচ্চতার পর্বত জয়ের নজির গড়েন বাবর।
হেঁটে বিশ্বভ্রমণ
হেঁটে হেঁটে সবার কাছে ‘হাঁটাবাবা’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছেন সাইফুল ইসলাম। দেশের ৬৪ জেলায় হাঁটার কৃতিত্ব তাঁর আগেই ছিল। এ বছরের ২২ মার্চ শুরু করেছেন হেঁটে বিশ্বভ্রমণ। জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে থেকে ভারতের উদ্দেশে হাঁটা শুরু করেন তিনি। তাঁর বিশ্বভ্রমণের ষষ্ঠতম দেশ থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন এখন সাইফুল। এ পর্যন্ত সাইফুল পাড়ি দিয়েছেন বাংলাদেশ, ভারত, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, নেপাল ও থাইল্যান্ড। আগামী মাসে থাইল্যান্ড থেকে কম্বোডিয়ায় প্রবেশ করবেন। ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১০৪ দিন হেঁটেছেন তিনি। অবশ্য অনেক দেশ থেকে স্থলপথে সীমান্ত অতিক্রমের অনুমতি না পাওয়ায় তাঁকে বিমানে উঠতে হয়েছে।
সাইকেল নিয়ে এভারেস্ট বেজক্যাম্পে
হেঁটে পৌঁছানোই যেখানে চ্যালেঞ্জিং, সেখানে সাইকেল সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া দুঃসাহিক কাজই বটে। সেই কাজেই সফল হয়েছেন বাংলাদেশের তাম্মাত বিল খয়ের। ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশ থেকে নেপালে যান তাম্মাত। কাঠমান্ডু থেকে বাইসাইকেলে এভারেস্ট বেজক্যাম্পের উদ্দেশে যাত্রা করেন ২৯ অক্টোবর। এভারেস্ট বেজক্যাম্পের পথে চারটি পর্বতচূড়ায় আরোহণ ও তিনটি গিরিপথ অতিক্রম করেছেন তাম্মাত। এর মধ্যে ৫ নভেম্বর সফরের অষ্টম দিনে ৪ হাজার মিটার উচ্চতার পিকে পর্বতে প্রথম সামিট করেন। ২০তম দিনে ৫ হাজার ৫৪৬ মিটার উচ্চতার চুখুং রি পর্বত, ২১তম দিনে কংমা লা পাস অতিক্রম করেন। আর ২০ নভেম্বর নিজের প্রিয় সাইকেল নিয়ে পৌঁছান এভারেস্ট বেজক্যাম্পে।
প্রথম নারী রেসার
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে সবে পেরোলেন উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি। এরই মধ্যে ২০ বছর বয়সী কাশফিয়া আরফা অর্জন করেছেন বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র নারী রেসারের খেতাব। ২০২৩ সালের ১৯-২২ সেপ্টেম্বর ভিয়েতনামে আয়োজিত ‘এশিয়ান অটো জিমখানা চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৪’-এ মিক্সড ডাবল বিভাগের দ্বিতীয় পর্বে কাশফিয়া হয়েছেন ষষ্ঠ। গত ১৭ অক্টোবর মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ‘ফেস্টিভ অব স্পিড’ নামের আরেকটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৬ নারী রেসারের মধ্যে প্রথম হন কাশফিয়া।
অ্যান্টার্কটিকায় ২৭ বাংলাদেশি
দূর মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকায় এ বছর সর্বোচ্চসংখ্যক বাংলাদেশি ভ্রমণ করেছেন। শুরুটা করেছিলেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাংলাদেশি জহির ইসলাম। তিনি অ্যান্টার্কটিকা ঘুরে আসেন নভেম্বরে। আর চলতি ডিসেম্বরেই অ্যান্টার্কটিকা ঘুরে এলেন আরও ২৭ জন। বাংলাদেশি অভিযাত্রীদের এই দলের ১০ জন ছিলেন নারী। এই দলের কনিষ্ঠতম সদস্যের বয়স আবার ১১ বছর, আর সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির বয়স ৮০ বছর। অভিযাত্রীদের ১৩ জন গেছেন সরাসরি বাংলাদেশ থেকে, অন্যরা প্রবাসী বাংলাদেশি। দলটির সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো অ্যান্টার্কটিকায় যান লেখক ও পাখিবিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক। আর্জেন্টিনার সর্বদক্ষিণের উশুয়াইয়াহ বন্দর থেকে যাত্রা করে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ ও দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপ ঘুরে অ্যান্টার্কটিকায় যান তাঁরা।
সুলতানার স্বপ্ন
হিমালয়ের বিভিন্ন পর্বতারোহণে নারী পর্বতারোহীদের অংশগ্রহণও ছিল উল্লেখ করার মতো। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের লেখা বিখ্যাত উপন্যাস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘সুলতানাস ড্রিম আনবাউন্ড’ বা ‘সুলতানার স্বপ্ন অবারিত’ স্লোগানে ২১ ডিসেম্বর হিমালয়ে প্রথমবারের মতো কোনো শীতকালীন অভিযানে যান বাংলাদেশি পাঁচ নারী। এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী নিশাত মজুমদারের নেতৃত্বে দলের অন্য সদস্যরা হলেন ইয়াসমিন লিসা, এপি তালুকদার, অর্পিতা দেবনাথ ও তহুরা সুলতানা। তাঁদের অভিযানের লক্ষ্য বাংলাদেশের নারীদের দৃঢ়তা, কল্পনাশক্তি ও সাহসিকতা উদ্যাপন। ২৫ দিনের অভিযানে পর্বতারোহীরা নেপালের নয়া কাঙ্গা পিক (৫ হাজার ৮৪৪ মিটার), ব্যাডেন পাওয়েল পিক (৫ হাজার ৭১০ মিটার) ও ইয়ালা পিক (৫ হাজার ৫০০ মিটার) নামের তিনটি পর্বতের শিখরে আরোহণের চেষ্টা করবেন।