বিশ্বের একমাত্র গণতান্ত্রিক দেশ, যার রাজধানী নেই
রাজরাজড়াদের সময় নতুন নতুন শহর, রাজধানী গড়ে তোলার ঘটনা আকছারই ঘটত। সুবিধামতো তাঁরা পাল্টে নিতেন রাজধানী। আমাদের রাজধানী ঢাকার কথাই ধরুন। ১৫৯৫ খ্রিষ্টাব্দে রাজা মানসিংহ রাজমহলকে সুবাহ বাংলার রাজধানী প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পরই ইসলাম খান চিশতি সেখান থেকে রাজধানী স্থানান্তর করে নিয়ে আসেন ঢাকা। আধুনিক সময়েও কিন্তু রাজধানী বদলের ঘটনা কদাচিৎ ঘটে। যেমন যানজটে নাকাল রাজধানীবাসীকে মুক্তি দিতে রাজধানী পাল্টে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটির সরকার ঘোষণা দিয়েছে, জাকার্তার বদলে তারা যে নতুন রাজধানী তৈরি করতে যাচ্ছে, তার নাম হবে ‘নুসানতারা’। প্রতিবেশী দেশে মিয়ানমারও ২০০৫ সালে ইয়াঙ্গুন (আগের রেঙ্গুন) থেকে রাজধানী সরিয়ে নেপিডোতে স্থানান্তর করেছে। আবার এমন অনেক দেশ রয়েছে, যাদের একটি নয়, রয়েছে দুটি করে রাজধানী। একাধিক রাজধানীর দেশগুলোরই একটি শ্রীলঙ্কা—কলম্বো দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী, আর শ্রী জয়াবর্ধনেপুরা কোট্টে প্রশাসনিক রাজধানী।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহরটিই হয়ে থাকে সেই দেশের রাজধানী। কিন্তু বিশ্বে এমন দেশও আছে, যার কোনো রাজধানী নেই! যেমন—নাউরু। এটিই পৃথিবীর একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যার কোনো রাজধানী নেই। শুধু তা-ই নয়, এর নিজস্ব কোনো সেনাবাহিনীও নেই। নাউরু পৃথিবীর তৃতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ। দেশটিকে একসময় ‘প্লেজেন্ট আইল্যান্ড’ নামেও ডাকা হতো।
দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র নাউরু ওশেনিয়ায় অবস্থিত। অস্ট্রেলিয়া থেকে আকাশপথে নাউরুতে যেতে লাগে পাঁচ ঘণ্টা। দেশটির মোট আয়তন মাত্র ২১ বর্গকিলোমিটার। ২০২৩ সালের হিসাবে এর মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার ৪০০। এই দেশের প্রায় ৯৬ শতাংশ মানুষই শিক্ষিত।
১৯৭০-৮০-র দশকে দেশটিতে ছিল ফসফেট খনির রমরমা ব্যবসা। বর্তমানে নাউরুর অর্থনীতির মূল উৎস হলো ফসফেট মাইনিং, অফসোর ব্যাংকিং, মৎস্য শিকার ও বৈদেশিক সহায়তা। বর্তমানে দেশটির মাথাপিছু আয় ১৭ হাজার ৮৭০ ডলার। নাউরুর সরকারি মুদ্রা অস্ট্রেলিয়ান ডলার। দেশটির জাতীয় ভাষা নাউরুয়ান। তবে ব্যবসা ও সরকারি দাপ্তরিক কাজে ইংরেজির চল আছে। স্বীকৃত রাজধানী না থাকলেও নাউরুর সরকারি দপ্তরগুলো অবস্থিত ইয়ারেন জেলায়।