ঈদের ছুটিতে ভ্রমণ পরিকল্পনা–৫
ভারত: যেখানে পর্যটন মৌসুম কখনো শেষ হয় না
নতুন বছরের শুরুতেই ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে অনেকেই যে কাজটা সবার আগে করেন, তা হলো কোন মাসে কত দিন ছুটি, তা খুঁজে দেখা। সাধারণত বছরের সবচেয়ে বড় ছুটিটা পাওয়া যায় দুই ঈদের সময়। এবারও তা-ই। পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পয়লা বৈশাখের ছুটি। এই লম্বা ছুটিতে ভ্রমণে না বের হলে কি হয়! তবে কোথায় যাবেন, কীভাবেই-বা যাবেন, তা নিয়ে যাঁরা ভাবনায় আছেন, তাঁদের জন্যই আমাদের এই ধারাবাহিক আয়োজন: ঈদের ছুটিতে ভ্রমণ পরিকল্পনা। এ আয়োজনে থাকছে পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন আকর্ষণীয় দেশভ্রমণবিষয়ক পরিকল্পনার বিস্তারিত তথ্য।
আজ যে গন্তব্যের কথা বলছি, সেটি একটু ভিন্ন। কারণ, বছরের সবচেয়ে বড় ছুটিও যথেষ্ট নয় দেশটি পুরোপুরি ঘুরে দেখার জন্য। বলছি ভারতের কথা, যেখানে পর্যটন মৌসুম কখনো শেষ হয় না! হোক বন্ধুদের সঙ্গে অ্যাডভেঞ্চার বা পরিবার নিয়ে ভ্রমণ, ভারতে রয়েছে সবার জন্যই বিশেষ কিছু। এমনকি আপনার যদি অন্য কোনো দেশে যাওয়ার সুযোগ না থাকে, তাহলে ভারত থেকেই নিতে পারবেন বিশ্ব দেখার অভিজ্ঞতা। তাই ভারত ঘুরতে যাওয়ার প্রথম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় কোথায় যাবেন, তা ঠিক করা।
ভারতে ঘুরতে যাওয়ার প্রসঙ্গ উঠলে প্রথমেই যেটার কথা বলতে হবে, তা হলো ‘পৃথিবীতে স্বর্গ’খ্যাত কাশ্মীর। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর জায়গার মধ্যে একটি কাশ্মীর, যে জায়গার সৌন্দর্য লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। কাশ্মীরে আপনার যাত্রা শুরু হবে শ্রীনগরে। এখানে আপনি হোটেলে রাত্রি যাপন করতে পারেন অথবা যেতে পারেন ডাল লেকে, যেখানে থাকতে পারবেন নৌকায়।
গুলমার্গ পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় গন্তব্য। গুলমার্গে গিয়ে আপনি গন্ডোলায় উঠে আকাশ থেকে কাশ্মীরের সৌন্দর্যে হারিয়ে যাবেন। কিন্তু অবশ্যই গন্ডোলা আগে থেকে বুক করে যেতে হবে। আকাশে আরও মুক্তভাবে উড়তে চাইলে চলে যেতে হবে আরু ভ্যালি, যেখানে আছে প্যারাগ্লাইডিংয়ের সুযোগ। কাশ্মীর ভ্রমণ অপূর্ণ থেকে যাবে যদি পেহেলগামে না যান। সেখান থেকে ঘোড়ায় চড়ে বা ট্রেক করে যেতে হবে বাইসারন ভ্যালি, যার আরেক নাম ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’। আবার ক্যাম্পিং বা মাছ ধরার ইচ্ছা হলে চলে যেতে হবে সোনমার্গ।
আপনার উদ্দেশ্য যদি হয় রোড ট্রিপ, তাহলে গন্তব্য হতে পারে ভারতের লাদাখ। যেখানে প্রতি বাঁকে বাঁকে রোমাঞ্চ। জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’ যাঁরা দেখেছেন, তাদের অনেকেই হয়তো জানেন, প্যাংগং তসো বা প্যাংগং হ্রদের কথা, যেখানে সিনেমাটির শেষ দৃশ্যের শুটিং করা হয়েছে। জায়গাটির সৌন্দর্য ঠিকমতো উপভোগ করতে চাইলে এক রাত ক্যাম্পিং করতে পারেন হ্রদের পাশে। প্রাচীন মঠ বা প্রাসাদ দেখতে চাইলে যেতে হবে নুব্রা ভ্যালি। মানবতৈরি প্রাচীন স্থাপনার পাশাপাশি এখানে দেখতে পাবেন অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য আর ঘুরে বেড়াতে পারবেন উটের পিঠে চড়ে।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বাদ নিতে চাইলে অবশ্যই ঘুরে দেখবেন লেহ প্রাসসই, থিকসে মনেস্ট্রি, হেমিস মনেস্ট্রি। আর যদি আপনি রাস্তার দুই পাশের দৃশ্যে হারিয়ে যেতে চান, তাহলে ঘুরে আসতে পারেন খারদুং লা। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মোটরযান চলাচলযোগ্য রাস্তা। যেখানে সারা বছরই থাকে ৫ থেকে ৬ ফুট বরফ।
প্রকৃতির শিল্পকর্ম দেখতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে সিকিম। লাদাখ ও কাশ্মীরের তুলনায় জায়গাটি বাংলাদেশ থেকে কাছে হওয়ায় যাতায়াতের সময় ও খরচ একটু সাশ্রয় করতে পারবেন। সিকিমে চাইলে আপনি কাটাতে পারবেন আরামদায়ক ও বিলাসবহুল সময়। প্রিয়জনের সঙ্গে জমাতে পারবেন রোমাঞ্চকর স্মৃতি। এ ক্ষেত্রে আপনার প্রথম গন্তব্য হবে গ্যাংটক, সিকিমের রাজধানী এবং সবচেয়ে জনবহুল শহর। পূর্ব সিকিমে অবস্থিত এই শহরের কাছেই আছে সিল্ক রোড, প্রাচীন ইউরেশীয় বাণিজ্য রুট। আপনি যদি এই ছুটিতেই সিকিমে যান, তাহলে গুরুডংমার লেক (১৭ হাজার ৮০০ ফুট) পর্যন্ত যেতে পারবেন, যা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু হিমবাহী হ্রদগুলোর একটি। এই হ্রদের রাস্তা শুধু গ্রীষ্মকালে প্রবেশযোগ্য।
ওপরে যাওয়ার পথে আপনি ইউমেসামডং এবং ইউমথাং ভ্যালি দেখতে পাবেন। ইউমথাং ভ্যালিতে অবশ্যই ঘুরে যাবেন। ফ্লায়ার ভ্যালি হিসেবে পরিচিত এই ভ্যালিতে গিয়ে হারিয়ে যাবেন মনোরম দৃশ্যে। ট্রেক করার ইচ্ছা থাকলে অবশ্যই যেতে হবে কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যান। এখানকার গোয়েচা লাকে ভারতের অন্যতম রোমান্টিক ট্রেক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সিকিমের ধর্মীয় ঐতিহ্য দেখতে চাইলে আছে ২০০-র বেশি দেয়ালচিত্র, ম্যুরালপূর্ণ মঠ। পেলিংয়ে আছে শতাব্দী-প্রাচীন মঠ সাঙ্গাচোয়েলিং ও পেমায়ান্সগটসে। কিছু কিছু মঠে মিলবে রাত্রি যাপন করার সুযোগ।
যেকোনো বাজেট নিয়ে আপনি ঘুরে আসতে পারেন ভারত। সব ধরনের পরিকল্পনার জন্যই কিছু না কিছু আপনি পাবেন। ভারতে যেতে পারেন বাস, ট্রেন বা বিমানে। ভারতে প্রবেশ করতে আপনার অবশ্যই ভিসা থাকতে হবে। ফ্লাইট বুকিং বা হোটেল বুকিং করতে অনলাইন ট্রাভেল প্ল্যাটফর্ম গোযায়ান ব্যবহার করতে পারেন। হোটেল এবং ফ্লাইট ঠিক করে ফেলতে পারলে কাজ অনেকখানি এগিয়ে যায়। এর মাধ্যমে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হওয়া শুরু করে। এ ছাড়া গোযায়ান থেকে কিন্তু কাশ্মীরসহ অনেক জায়গার অ্যাকটিভিটিসহ ট্যুর পরিকল্পনা করাও সম্ভব। একটু ঘেঁটে দেখলেই অনেক রকম বিকল্প সহজেই পেয়ে যাবেন।
বছরের সবচেয়ে বড় ছুটি কিন্তু দেখতে দেখতে চলেই এসেছে। আপনার পছন্দমতো যেকোনো দেশ থেকে ঘুরে আসার এটাই উপযুক্ত সময়। পরিবার, বন্ধু বা প্রিয়জনদের নিয়ে তাই সাজিয়ে ফেলুন আপনার মনমতো ভ্রমণ পরিকল্পনা।