ফিলিপাইনের তরুণেরা আর কেন ধান চাষ করতে চাচ্ছেন না
ফিলিপাইনে একটি কথা চালু আছে, ‘বিগাস এই বুহায়’ যার অর্থ ‘ভাতই জীবন’। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। প্রতিবেলার খাবারেই তাঁদের ভাতের আধিপত্য দেখা যায়। ভাতের পদগুলোতেও থাকে বৈচিত্র্য। পোড়া ভাত, আধা সেদ্ধ ভাত, সেদ্ধ ভাত, এমনকি আমাদের মতো পান্তা ভাতও খেয়ে থাকেন ফিলিপাইনের মানুষেরা। পান্তাকে তাঁরা বলে বাহাও।
ফিলিপাইনের প্রায় ২৪ লাখ মানুষ ধান উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। যাঁরা খাড়া পাহাড়ের মধ্য দিয়ে প্রখর রোদে পুড়ে কিংবা কাদামাটি মাড়িয়ে সাড়ে ১১ কোটি ফিলিপাইনবাসীর খাবার টেবিলে ভাত পৌঁছে দেন। তবে চিন্তার বিষয় হলো বর্তমান প্রজন্মের তরুণেরা কৃষিকাজে আগ্রহ হারাচ্ছেন। কৃষকের হাড়ভাঙা খাটুনি আর দারিদ্র্য তরুণদের কৃষিকাজের প্রতি অনীহার অন্যতম কারণ। বংশপরম্পরায় যাঁরা কয়েক প্রজন্ম ধরে কৃষিকাজ করছেন, তাঁরাও এখন তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কৃষিকাজে দেখতে আগ্রহী নন।
একদিকে ফসলের মৌসুমে (বছরে দুবার) একজন কৃষকের প্রতি হেক্টর জমিতে আয় হয় ২৯৪ ডলার, বাংলাদেশি টাকায় যা ৩৪ হাজার টাকা। অন্যদিকে বেড়েই চলেছে কৃষিজমির দাম। সরকার কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকায়নের চেষ্টা করলেও মুদ্রাস্ফীতি ঠেকাতে চাল বিক্রি হচ্ছে কম দামে, যা কৃষকের জন্য অলাভজনক। বর্তমানে ফিলিপাইনের কৃষকদের গড় বয়স ৫৬ বছর। ফিলিপাইন সেন্টার ফর পোস্টহারভেস্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড মেকানাইজেশনের জেট সুবাবা বলেন, ‘আগামী ২০ বছরে যদি আমাদের কৃষকেরা মারা যায়, তাহলে ফিলিপিনোদের কে খাওয়াবে?’
তরুণদের কৃষিকাজ থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলে ফিলিপাইনে খুব শিগগিরই খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ইতিমধ্যেই ফিলিপাইন অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি চাল আমদানি করছে। বসন্তে চালের মূল্যস্ফীতি গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল। গত সপ্তাহে দেশটির রাষ্ট্রপতি মার্কোস জুনিয়র চালের শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনেন। যদিও এটিকে অবহেলা হিসেবেই দেখছেন কৃষকেরা।
বিজ্ঞানীদের মতে, জিনোম সম্পাদনার মাধ্যমে এমন ধানের জাত তৈরি হয়েছে যা খরা, শীত ও বন্যার মতো প্রতিকূল পরিবেশেও টিকে থাকতে সক্ষম। ফিলিপাইনের সরকার যদি কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকীকরণের পাশাপাশি কৃষকের আর্থিক বিষয়ের দিক বিবেচনা করেন এবং তরুণেরাও এতে যোগদান করে তবেই ফিলিপাইনের এই খাদ্যসংকট কাটানো সম্ভব।
সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট