বাবর আলী বললেন, ‘এভারেস্ট সামিট করে নামার সময় তুষারঝড়ে পড়েছিলাম’
এভারেস্ট বেজক্যাম্প থেকে প্রথম আলোকে বাবর আলী বললেন, ‘ভালো আছি, সুস্থ আছি।’
আজ বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় হোয়াটসঅ্যাপে বাবর বলেন, ‘দুই কি আড়াই ঘণ্টা আগে বেজক্যাম্পে নেমে এসেছি। রেস্ট নিলাম। মা-বাবাসহ পরিবারের মানুষদের সঙ্গে কথা বললাম। আরও দুদিন এখানে থাকতে হবে। কয়েক দিন গোসল নেই, গোসলও করতে হবে।’
অভিযানে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং মুহূর্ত কোনটা ছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে বাবর বলেন, ‘এভারেস্ট সামিট করে নামার সময় তুষারঝড়ে পড়েছিলাম। এ ঝড়ের কারণে আমাদের দুই ঘণ্টা বিলম্ব হয়েছে। এ সময়ের কারণে ক্যাম্প ৪-এ পৌঁছাতে আমাদের দেরি হয়।’
বাবর জানান, ক্যাম্প ৪-এ তিনি অক্সিজেন ছাড়াই থেকেছেন। এভারেস্টের চূড়ায় উঠেও প্রায় পুরোটা সময় অক্সিজেন মাস্ক না পরেই ছিলেন। কেন এই ঝুঁকি নিলেন? বাবর বলেন, ‘অনেকে অক্সিজেন ছাড়াই এভারেস্ট অভিযানে যান। আমিও চেষ্টা করে দেখেছি, এটা কতটা কঠিন।’
১৯ মে নেপালের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটায় পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান বাবর আলী। দুই দিন পর গতকাল ২১ মে আরোহণ করেন লোৎসে পর্বতের শীর্ষে (৮ হাজার ৫১৬ মিটার)। একসঙ্গে আট হাজার মিটার উঁচু দুটি পর্বত জয়ের ইতিহাস দেশে আর কারও নেই।
৩৩ বছর বয়সী বাবর আলী নেপালের স্নোয়ি হরাইজন নামের ট্রেকিং ও পর্বতাভিযান পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে এভারেস্ট ও লোৎসে অভিযানে যান। তাঁর সঙ্গে আছেন শেরপা বীর বাহাদুর তামাং। স্নোয়ি হরাইজনের স্বত্বাধিকারী বুদ্ধরাজ ভান্ডারি গতকাল মঙ্গলবার রাত নয়টায় প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, লোৎসে পর্বতজয়ের পর বাবর আলীরা ক্যাম্প ৪ থেকে ক্যাম্প ২-এ নেমে এসেছেন।
ক্যাম্প ২ থেকে আজ বিকেলে তাঁরা পৌঁছান বেজক্যাম্পে।
এভারেস্ট ও লোৎসে অভিযানের জন্য গত ১ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে নেপালে যান বাবর আলী। প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে ৪ এপ্রিল কাঠমান্ডু থেকে উড়ে যান লুকলায়। এভারেস্ট বেজক্যাম্পে পৌঁছান ১০ এপ্রিল।
উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বেজক্যাম্প থেকে একাধিকবার উচ্চতায় ওঠানামা করেছেন বাবর। ২৬ এপ্রিল এভারেস্টের ক্যাম্প-২ পর্যন্ত ঘুরে এসে উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পর্ব সমাপ্ত করেন। এরপর অনুকূল আবহাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন তিনি।
১৪ মে মাঝরাতে বেজক্যাম্প থেকে শীর্ষ অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন বাবর। ১৫ মে সকালে পৌঁছে যান ক্যাম্প ২-এ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেখানে দুই রাত কাটিয়ে বাবর উঠে যান ক্যাম্প ৩-এ। সেখান থেকে ১৮ মে পৌঁছান ক্যাম্প ৪-এ। ২৬ হাজার ফুট উচ্চতার এই ক্যাম্পের ওপরের অংশকে বলা হয় ‘ডেথ জোন’।
১৮ মে মাঝরাতে আবারও শুরু হয় বাবরের যাত্রা। ১৯ মে ভোরের প্রথম কিরণে ২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে ওড়ান বাংলাদেশের পতাকা।
এরপর বাবর নেমে আসেন ক্যাম্প ৪-এ। সেখানে বিশ্রাম নিয়ে ২০ মে মধ্যরাতে লোৎসের চূড়ার উদ্দেশে পথ ধরেন। ২১ মে সকালে সফলভাবে সেখানে পৌঁছান তাঁরা।