তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সেরা সময় কখন

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে প্রতিবছর দেখতে পাওয়া যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া, ভ্রমণপিপাসুদের কাছে যা খুবই আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে
ছবি: ফিরোজ আল সাবাহ

প্রতিবছর অক্টোবর মাস এলেই মনটা আনচান করতে থাকে। মন চলে যায় উত্তরে, দেশের সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ায়। এই বুঝি পাহাড়-পর্বত দেখা দিল। এই বুঝি আকাশ ফুঁড়ে উঁকি দিল শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা। দার্জিলিংয়ের কার্শিয়াং পাহাড়ের ওপরে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় রূপ দেখার আশায় বারবার ছুটে যাই তেঁতুলিয়া।

পঞ্চগড়ের বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে সেই ছোট থেকে দেখে আসছি কাঞ্চনজঙ্ঘা, পান্ডিম, কুম্ভকর্ণ, সিনিওলচুসহ আরও অনেক পর্বতশৃঙ্গ। প্রতিবছর দেখেও মন ভরে না। কখনোই পুরোনো হয় না সমতল থেকে পর্বত দেখার আনন্দ।

অক্টোবরের এমনই একদিন তেঁতুলিয়া থেকে বন্ধু লেমন ফোন করলেন। পর্বত দেখা দিয়েছে। শুনেই মন উথালপাতাল। ভ্রমণসঙ্গী শরীফ ও তুষারকে নিয়ে রওনা দিলাম। তেঁতুলিয়া পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেল। রাতে ঠাঁই নিলাম জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে। তেঁতুলিয়ায় অক্টোবরেই ঠান্ডা নেমে যায়। পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শীতের কাপড় নিতে ভুলিনি।

বাড়ির পাশেই যেন কাঞ্চনজঙ্ঘা। তেঁতুলিয়ার রওশনপুর থেকে তোলা
ছবি: ফিরোজ আল সাবাহ

মহানন্দার পাড়ে হিমেল হাওয়া গায়ে লাগিয়ে আড্ডা দিতে দিতে অনেক রাত হয়ে গেল। উঠতে হবে সেই ভোরে। ভোর ঠিক নয়, তারও আগে। ডাকবাংলো থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে রওশনপুরের দিকে যেতে হবে সূর্য ওঠার আগেই। এই ভেবে আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম। চারটায় হুট করে ঘুম ভেঙে ধড়ফড় করে উঠি অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দে। মহামারির দিনে একি জ্বালা! পরক্ষণে বুঝলাম, এটা অ্যাম্বুলেন্স নয়, শরীফের মোবাইলের অ্যালার্ম। ছেলেটা পারেও বটে!

ওদিকে মননেরাও বন্ধুদের নিয়ে উঠে পড়েছে। সবাই মিলে বের হলাম। আলো ফুটতে ঢের বাকি। ছয়টা বাজল বলে, কাঞ্চনজঙ্ঘা ধরা দিচ্ছে পুরো রুপালি রঙে। এ এক অবর্ণনীয় সৌন্দর্য, কাঞ্চনজঙ্ঘা, সিনিওলচু নার্সিং, পান্ডিম শৃঙ্গ সব যেন রুপা দিয়ে মোড়া! ধীরে ধীরে ভোরের সোনালি আলোর জাদুর ছোঁয়ায় রুপার পর্বত সোনায় পরিণত হলো। একদম কাঁচা সোনা যেন।

হেমন্তে কয়েক প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে পঞ্চগড়ে। তেঁতুলিয়ার তুলসিয়া বিলে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা। পেছনে শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা
ছবি: ফিরোজ আল সাবাহ

ততক্ষণে হলুদ–সবুজের ধানখেতের বুকে বকের চেয়ে অলস পাখিরাও ঘুম থেকে উঠে কিচিরমিচির শুরু করেছে। উত্তর আকাশে সুবিশাল কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে বিস্তীর্ণ সবুজের মাঝে কয়েকজন স্থানীয় প্রবীণ ফজরের নামাজ শেষ করে এসেছেন ভালোবাসা দিয়ে বোনা খেত দেখতে। কেউ কোদাল ও গরু নিয়ে মাঠে আসছেন। কেউ যাচ্ছেন মাছ ধরতে।

আমরা এদিক-সেদিক দৌড়ে ছবি তুলতে লাগলাম। ফটোগ্রাফি জীবনের সব অভিজ্ঞতা এই ১০-১৫ মিনিটে কাজে লাগাতে হয়। কারণ, সোনালি আভা ১৫-২০ মিনিটের বেশি থাকে না। ছবি কেমন পেলাম জানি না। দেখলাম প্রাণভরে, অনুভব করলাম সৃষ্টিকর্তার মোহনীয় সৃষ্টিকে। এই প্রকৃতিতেই তো বেঁচে থাকা, এই প্রকৃতিতেই তো জীবন!