বছরের শুরু থেকেই খরচ বাঁচানোর এই ৭ পরামর্শ মেনে চলুন
অনেকেই হিসাব রাখার ক্ষেত্রে খুব বেখেয়ালি। মাসের অর্ধেকটা যেতে না যেতেই তাঁদের পকেট ফাঁকা হয়ে যায়। আবার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে নির্দিষ্ট আয়ের ওপর নির্ভরশীল মানুষদেরও জীবনযাপন হয়ে পড়ে কষ্টের। তাই ভেবেচিন্তে খরচ করা দরকার। এতে অর্থসংকটে পড়ার আশঙ্কা যেমন কমে আসে, ভবিষ্যতের জন্যও কিছু টাকা জমানো যায়। নতুন বছরের শুরুতেই তাই ব্যক্তিগত বাজেট হালনাগাদ করে নিন।
১. আয় বুঝে ব্যয় করুন
উপার্জনের পুরো অর্থ খরচ করে ফেলা যেমন উচিত নয়, তেমনি পুরোটা জমিয়ে রেখে কষ্ট করে দিনাতিপাত করাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তাই ব্যক্তিগত বাজেট নির্ধারণের সময় ৫০-৩০-২০ পদ্ধতি মেনে চলুন। কেমন এই পদ্ধতি? এ ক্ষেত্রে আপনার মোট আয়ের ৫০ শতাংশ খরচ করুন বাড়িভাড়া ও আর মাসিক নিত্যপণ্য কেনাকাটায়। ৩০ শতাংশ খরচ করুন বিনোদনসহ জামাকাপড় কিনতে। যদি কোনো ঋণ থাকে, সে ক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধ এবং সঞ্চয় খাতে রাখুন অবশিষ্ট ২০ শতাংশ অর্থ।
২. বড় অঙ্কের খরচ কমিয়ে আনুন
অনেক সময় আমাদের আয়ের একটা বড় অংশ চলে যায় বাড়িভাড়া, বিদ্যুৎ বিল কিংবা যাতায়াতে। এই বড় অঙ্কের খরচগুলো কিছুটা কমাতে পারলে অর্থ ব্যবস্থাপনা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। যেমন বাড়িভাড়া বাঁচাতে তুলনামূলক কম ভাড়ার বাসা বেছে নিন। ব্যাচেলর হলে এক বা একাধিক জনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে থাকতে পারেন। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হোন। যানবাহনের ক্ষেত্রেও সাশ্রয়ী বাহনটি বেছে নিন, যাঁরা নিয়মিত মেট্রোরেল ব্যবহার করেন, তাঁরা এমআরটি পাস ব্যবহার করে ভাড়ার ওপর ১০ শতাংশ ছাড় পেতে পারেন।
৩. নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যয় কমিয়ে আনুন
প্রতি মাসেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পকেট থেকে চলে যায়। এই খরচ কমিয়ে আনতে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ছাড় ও কুপনের ব্যবহার অন্যতম। যেমন নানা সময়ে নানা উপলক্ষে পোশাকের দোকানে ছাড় দেয়, সে সময় প্রয়োজনীয় জামাকাপড় কিনে রাখতে পারেন।
৪. শখের কেনাকাটায় সচেতন হোন
এবার আসি আমাদের শখের কেনাকাটায়। যেমন কেউ বই পড়তে পছন্দ করেন, কেউ সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন, কেউ বাইরে খেতে যেতে পছন্দ করেন আবার কেউ পছন্দ করেন সুন্দর স্টেশনারি সংগ্রহ করতে। তবে কম খরচে শখ পূরণেরও কিছু উপায় আছে। সব সময় বই না কিনে লাইব্রেরির সদস্য হয়ে সেখান থেকে সংগ্রহ করেও পড়া যেতে পারে। সব সময় সিনেপ্লেক্সে না গিয়ে অনলাইনে সাবস্ক্রিপশন নিয়ে সিনেমা দেখা যেতে পারে। হুটহাট বাইরে খেতে না গিয়ে সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট দিনে বাইরে খেতে যাওয়া যেতে পারে।
অনেক সময় আমরা দোকানে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় অনেক কিছু কিনে ফেলি। এমন কেনাকাটা বন্ধ করতে বাইরে যাওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় জিনিসের একটি তালিকা তৈরি করার পরামর্শ দেন আর্থিক বিশেষজ্ঞরা।
৫. ঋণ পরিশোধের পরিকল্পনা প্রস্তুত করুন
ঋণের চক্রে বাঁধা পড়লে তা থেকে নিস্তার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ঋণ পরিশোধে যথাযথ পরিকল্পনা করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। ঋণ পরিশোধবিষয়ক দুটি পদ্ধতি রয়েছে।
প্রথমে আপনি আপনার সর্বোচ্চ সুদের ঋণটি আগে পরিশোধ করুন এবং পরবর্তীকালে ধাপে ধাপে অন্য ঋণগুলো পরিশোধ করুন। আবার অনেকে বলেন, প্রথমে অল্প অঙ্কের ঋণগুলো শোধ করুন, এতে ঋণ পরিশোধের অগ্রগতি আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে।
তবে যে পদ্ধতিই অনুসরণ করুন না কেন, পরিকল্পনামাফিক চললে ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হবে।
৬. জরুরি মুহূর্তের জন্য সঞ্চয় করুন
আমরা অনেক সময় নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মুখোমুখি হই। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ঘটনার মোকাবিলায় তিন মাস চলার মতো খরচ জমিয়ে রাখা উচিত। এ ছাড়া জন্মদিনসহ নানা বার্ষিকীর ও ভ্রমণের মতো খাতে প্রতিবছর কিছু অর্থ খরচ হয়ে থাকে। এসব খরচের জন্য প্রতি মাসে অল্প অল্প করে সঞ্চয় করুন।
৭. যথাস্থানে বিনিয়োগ করুন
জমানো টাকা সঠিকভাবে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার অর্থ বৃদ্ধি করতে পারেন। আমাদের দেশের জনপ্রিয় কিছু বিনিয়োগ ক্ষেত্র হলো সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ড, সঞ্চয়পত্র, জমি কেনা ইত্যাদি।
সূত্র: ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও