যে কারণে এখনকার ছেলেরা লম্বা চুল রাখছেন

ছেলেদের চুলেও বাঁধা যায় খোঁপা। স্থান কৃতজ্ঞতা: ক্যানভাস স্টুডিও
ছবি : কবির হোসেন

আমাদের দেশে সামাজিকভাবে একটি কথা বহু বছর ধরেই চালু আছে, ‘ভালো ছেলেদের চুল থাকে ছোট আর বখাটেদের লম্বা।’ এই ধারণা ভুল না ঠিক, সে তর্কে না গিয়েও বলা যায়, ছেলেদের লম্বা চুলের ইতিহাসটাও কিন্তু অনেক লম্বা। সেদিকে একটু নজর দেওয়া যাক। মধ্যযুগেও ইউরোপের পুরুষদের লম্বা চুলের চল ছিল। ভাইকিংস যোদ্ধা থেকে শুরু করে রাজদরবারের প্রধানেরাও লম্বা চুল রাখতেন।

এখন অনেক ছেলে ইচ্ছা করেই লম্বা চুল রাখছেন। মডেল: জীবন ও বিস্কুট, সাজ: পারসোনা, পোশাক: বিস্কুট ফ্যাক্টরি
ছবি : কবির হোসেন

অত আগের যুগের ইতিহাসে যাঁদের অনাগ্রহ, তাঁদের জন্য আধুনিক ইতিহাস থেকেও উদাহরণ দেওয়া যাবে। ১৯৬০ ও ৭০–এর দশককে বলা হয় চিন্তার বিপ্লবের দশক। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ সময় তরুণদের সামগ্রিক স্টাইলেও শুরু হয় নানা পরিবর্তন। নতুন পৃথিবীতে, নতুনভাবে নিজেদের সাজান হিপ্পিরা; যেখানে উল্লেখযোগ্য এক বড় পরিবর্তন ছিল ছেলেদের লম্বা চুল। সে সময়ের রকস্টার থেকে শুরু করে ফুটবল তারকা, অভিনেতা থেকে শিল্পী—অনেককেই দেখা গেছে লম্বা চুলে। বিশেষ করে সে সময়ের তুমুল জনপ্রিয় রক ব্যান্ড বিটলসের সদস্যদের ব্যাংগস ও ক্ল্যাসিক লেয়ার স্টাইলের লম্বা চুল ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের নানা দেশের তরুণদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

পরবর্তী কয়েক দশক পর্যন্ত ছিল এর প্রভাব। যেমন আশির দশকের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ম্যাকগাইভার-এ নামভূমিকায় অভিনয় করা রিচার্ড ডিন অ্যান্ডারসনের স্লিক মব স্টাইলের লম্বা চুলও ভীষণ জনপ্রিয়তা পায়। আমাদের দেশেও আজম খান থেকে শুরু করে জনপ্রিয় অনেক রক তারকাকেই দেখা যায় লম্বা চুলে।

তরুণদের মধ্যে এখন দারুণ জনপ্রিয় এই চুল বাঁধার স্টাইল
ছবি : কবির হোসেন

চলতি ধারা মেনে শুধু লম্বা চুল রাখলেই চলবে না। নিতে হবে সঠিক যত্ন। অবশ্য ‘যত্ন’ শব্দটির প্রতি ছেলেদের বড় অনীহা। হোক তা পোশাক–পরিচ্ছদ বা নিজের যত্ন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই ধারণাটিকে ভুল প্রমাণ করেছেন। বিশেষ করে চুলের ক্ষেত্রে। কারণ, কোনোভাবেই চুল হারাতে রাজি নন ছেলেরা। তাই ত্বকের যত্নের ব্যাপারে অনীহা থাকলেও চুলের যত্নের ব্যাপারে তাঁরা কিন্তু বেশ সচেতন।

যাঁরা লম্বা চুল রাখতে পছন্দ করেন, তাঁরা কেবল শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করলেই চুলের যত্ন শেষ হয়ে যায়, এমন কিন্তু নয়। কারণ, ছেলেদের চুল মেয়েদের তুলনায় বেশি রুক্ষ। তাই চুলের ডগা ফেটে ভাঙার আশঙ্কাও বেশি। ছেলেদের চুলে এ কারণে যত্নের প্রয়োজনও হয় বেশি। এ ক্ষেত্রে মেনে চলতে হবে বেশ কিছু নিয়ম। এ বিষয়ে অ্যাডোনিস মেনজ স্যালনের মার্কেটিং প্রধান সামরিন হাসান দিয়েছেন বেশ কিছু পরামর্শ।

অনেকে স্টাইল করে লম্বা চুলে বেণিও করেন
ছবি : কবির হোসেন

চুল খুব ঘন ঘন পরিষ্কার করা যাবে না

প্রথমেই চুলের যত্নে যেসব সাধারণ ভুল রয়েছে, সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, চুল অতিরিক্ত পরিষ্কার করা। সপ্তাহে দুই বা তিনবার চুল পরিষ্কার করলেই চলে। যাঁদের চুল তৈলাক্ত, তাঁরা এক দিন পরপর চুল পরিষ্কার করতে পারেন। অন্য দিনগুলোয় শুধু পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিলেই চলবে। এতে মাথার ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য, দুটোই ভালো থাকবে।

 সঠিকভাবে চুল শুকানো

গোসলের পর ছেলেদের সবচেয়ে খারাপ অভ্যাস হচ্ছে, গামছা বা তোয়ালে দিয়ে জোরে জোরে চুল মোছা। এতে লম্বা চুল ভেঙে যায়, চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়। কারণ, ভেজা চুল থাকে বেশ দুর্বল। তাই বেশি জোরে ঘষে মুছলে চুল পড়তে শুরু করে। সুতরাং চুল ধোয়ার পর গামছা বা তোয়ালে দিয়ে আলতো করে মুছে ফেলতে হবে। তাই হালকা করে ঘষে ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নিতে হবে।

কখনো খোলা আবার কখনো বাঁধা চুল, চলতি পথে এমন ক্যাজুয়াল স্টাইলে দেখা যায় এখনকার ছেলেদের
ছবি : কবির হোসেন

চুলের ক্রিম বা জেলের বিকল্প

চুলের স্টাইলিংয়ের জন্য ছেলেদের সবচেয়ে পছন্দের পণ্য হচ্ছে চুলের ক্রিম বা জেল। বাজারে নানা ধরনের চুলের ক্রিম বা জেল পাওয়া যায়, যাতে থাকে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। তাই এই পণ্য দীর্ঘদিন ব্যবহার না করে বিকল্প খুঁজে নেওয়া জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভালো বিকল্প হচ্ছে অ্যালোভেরা জেল, যা চুলের জেলের মতোই কাজ করে।

তেল দেওয়া

সুস্থ ও সুন্দর চুল চাইলে অবশ্যই চুলে তেল ব্যবহার করতে হবে, যা ছেলে ও মেয়ে সবার জন্যই প্রযোজ্য। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন তেল দেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে শুধু নারকেল তেলই হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। চুলের যত্নে আরও অনেক ধরনের তেল ব্যবহার করা যায়। যেমন জলপাই তেল, কাঠবাদাম তেল, আর্গান তেল। চুলে পুষ্টি জোগাতে এগুলোও বেশ ভালো ভূমিকা রাখে।

ছেলেদের চুলে যত্নের প্রয়োজন হয় বেশি
ছবি : কবির হোসেন

খুশকি থেকে সমাধান

ছেলেদের চুলের প্রধান শত্রু হচ্ছে খুশকি। কারণ, ছেলেরা দীর্ঘ সময় বাইরে থাকেন এবং চুল ঢেকে রাখতে চান না। খুশকি থেকে রক্ষা পেতে বর্তমানে টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে টি ট্রি অয়েল জীবাণু ও প্রদাহরোধী উপাদানে ভরপুর, যা খুশকি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

 চুল বাঁধা ও ক্যাপ না পরা

লম্বা চুলের ছেলেরা রোদে বাইরে গেলে অবশ্যই ক্যাপ ব্যবহার করা উচিত। তবে এই ক্যাপ খুব শক্ত করে পরা যাবে না। এতে ‘ট্র্যাকশন অ্যালোপেশিয়া’ হয়ে চুল পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।