স্টাইল
ছোট চুলের বড় সাজ
বেশ কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে ছোট চুলের জনপ্রিয়তা। করোনার পর থেকে আরও বেগবান হয়েছে এ ধারা। আরামদায়ক ও যত্ন নেওয়া সহজ বলে অভিনেত্রী, মডেল থেকে শুরু করে সাধারণ চাকরিজীবী—অনেক নারীরই প্রথম পছন্দ এখন ছোট চুল। অন্য ধরনের স্টাইল করা যায় বলেও অনেকে এখন ছোট চুলপন্থী। মূল রচনায় জানুন ছোট চুলের কায়দাকেতা
অনেক দিনের যত্ন আর ভালোবাসায় বড় করা চুলগুলো যখন কচকচ করে কাটতে থাকে কাঁচি, অনেকের মনেই তখন কাজ করে সংশয়। কাজটা কি ঠিক হলো? এত ছোট চুলে কি আমাকে মানাবে? কেউ আবার আনন্দে ভাসতে থাকে, অপেক্ষা করে কখন শেষ হবে কাটা। তবে নতুনরূপে নিজেকে আবিষ্কার করার পর দুই দলের কেউ অবশ্য মন খারাপ করেননি। বরং চুল ছোট করে ফেলার পর নিজের ভেতরে অনুভব করেছেন আত্মবিশ্বাস আর আরাম।
সাজের যে পরিবর্তন প্রতিদিনের রুটিনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে, সেটা প্রাধান্য পাবে, এই তো স্বাভাবিক। চুল কেটেছেঁটে একদম ছোট করে ফেলাটা এখন এ কারণেই বাড়ছে। ছোট চুলের জনপ্রিয়তা বেশ কয়েক বছর ধরেই চোখে পড়ছে। করোনার মধ্যে এবং পরে এটি আরও বেড়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় হওয়ায় আমাদের দেশেও এখন অনেকেই বব কাটে ছেঁটে ফেলছেন চুল। কাজের ব্যস্ততায় পিক্সি কাটও প্রাধান্য পাচ্ছে।
এই যেমন সম্প্রতি চুল কেটে ফেলেছেন মডেল ও উপস্থাপক পিয়া জান্নাতুল। বেশ স্টাইলের সঙ্গেই এখন তিনি চুলে বহন করছেন প্রিন্সেস ডায়ানা কাট বা পিক্সি কাট নামে পরিচিত স্টাইলটি। ছোট চুলের কাটও যে সব ধরনের পোশাকের সঙ্গে সাবলীলভাবে মানিয়ে যায়, পিয়ার প্রতিদিনের সাজ তারও প্রমাণ। বলছিলেন, ‘লুক পরিবর্তন করতে চাইলে চুল অসম্ভব ছোট করে ফেলতে হয় এবং এটা একটা সাহসী সিদ্ধান্ত। আমি চেহারায় পরিবর্তন আনতে চাচ্ছিলাম। পাশাপাশি আমার ছেলে চুল ধরে টানাটানি করত, পরীক্ষাও চলছিল আমার। এ সময় চুল সব সময় সেট করে রাখতে একটু ঝামেলা বোধ করছিলাম। কিছুটা দ্বিধায় ছিলাম কামিজের সঙ্গে যাবে কি না। কিন্তু মানিয়ে গেছে। ছোট চুলের এই স্টাইলটিকে এখন পর্যন্ত আমি উপভোগ করছি।’
পিক্সি স্টাইলে চুল ছেঁটে ফেলেছেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা তানিয়া আফরোজও। পিঠাপিঠি দুই সন্তান হওয়ার পর চুলের যত্ন নিতে পারছিলেন না। প্রচুর চুল পড়ছিল। তাই ধুম করে সিদ্ধান্ত নিয়ে চুল কেটে ফেললেন। জীবনে প্রথম এত ছোট করে চুল কেটেছেন। চুল নিয়ে যত সমস্যা হচ্ছিল, সমাধান পেয়ে গেছেন। তবে কাটা চুলগুলো সযত্নে বাক্সবন্দী করে রেখে দিয়েছেন। আর যদি কখনো বড় করা না হয়, রেখে দেবেন স্মৃতিস্বরূপ।
ছোট চুলের কাট যে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে, পরিসংখ্যানও তাই বলছে। সৌন্দর্যচর্চা কেন্দ্র পারসোনায় জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত চার হাজার জন চুল একদম ছোট করে কেটেছেন। মিউনি’স ব্রাইডালে দিনে প্রতি ২০ জনের ৫ জন ছোট চুল বেছে নিয়েছেন। রেড বিউটি পারলারে গত সাত মাসে ৬০ শতাংশ নারী চুল ছোট করে কেটেছেন।
রূপবিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমীন জানালেন, ক্ল্যাসিক বব, স্ট্রেট বব বা অ্যাঙ্গেল ববের দিকেই বেশি ঝোঁক। গোল আকারের চেহারায় অ্যাঙ্গেল বব মানায়। লং ববও ভালো লাগে। পিক্সি কাট মানায় ডায়মন্ড আর ওভাল চেহারায়।
নিজের চেহারায় খানিকটা পরিবর্তন আনতেই চুল ছোট করেছেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। গরমেও বেশ স্বস্তিদায়ক এ ধরনের চুলের ছাঁট, বললেন এই অভিনেত্রী। বিশেষ কোনো নাম নেই এই ছাঁটের। রেড বিউটি স্যালন থেকে কাটিয়েছিলেন। চেহারার সঙ্গে মানিয়ে যাবে এমন ছাঁটে চুল কেটে দেন তাঁরা।
একাত্তর টেলিভিশনের সহযোগী বার্তা সম্পাদক নিলুফা জাহান আরেকজনের ছোট চুল দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। নিজের লুক বদলানোর জন্য তিনিও চুল ছোট করে ফেলেন। এমনিতেও সব সময় তাঁর ছোট চুলই ভালো লাগে। ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, ব্লেজারের সঙ্গে বড় চুল মানায় না। ব্লান্ট কাটে চুল কেটে ফেলার এটাও আরেকটা কারণ। নিলুফা জাহান বলেন, ‘আমরা যারা প্রতিদিন কাজ করি, নিয়মিত বাইরে বের হতে হয়, তাদের জন্য ছোট চুলই ভালো, আরাম পাওয়া যায়। সপ্তাহে ছয় দিনই শ্যাম্পু করতে এখন আর অসুবিধা হয় না। সৌন্দর্যচর্চা কেন্দ্রে যাওয়ার সময় হয় না, বাড়িতে চুলে প্যাক লাগাতে পারি না। ছোট চুলের আরেকটি বড় সুবিধা বাঁধার প্রয়োজন হয় না।’
ছোট চুল কিন্তু বহুমুখী স্টাইল তৈরি করতেও সক্ষম। পিয়া জান্নাতুল যেমন জেল লাগিয়ে ব্যাকব্রাশ করেন অধিকাংশ সময়। প্রিন্সেস ডায়ানার মতো চুল সেট করে রাখেন। উপস্থাপক ও চরকির অফিসার পার্টনারশিপ নীল হুরেজাহানও তাঁর পিক্সি কাট স্টাইলে কাটা চুলকে নানাভাবে সাজান। কখনো ছোট ছোট টুইস্ট করে বেঁধে ফেলেন। কখনোবা পুরো চুলকে কোঁকড়া করে ফেলেন। আবার কখনো চুল ফুলিয়ে আঁচড়ান। নানা ধরনের ক্লিপের সহায়তায়ও সাজানো সম্ভব চুলকে।
আরাম আর স্টাইল, দুটো বিষয়ই সমানতালে পাওয়া যায় ছোট চুল থেকে। চুল কেন ছোট রাখছেন বা কেন কেটে ফেলেছেন জিজ্ঞেস করাতে এই উত্তর পাওয়া গেছে প্রত্যেকবার। ব্যস্ত সময়ে ছোট চুলের কাট সহায়তা করছে সময় বাঁচাতেও। তবে চুল কাটার পর সেটা স্বাচ্ছন্দ্যে বহন করার জন্য প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস। তাহলেই যেকোনো পোশাকের সঙ্গেই তৈরি করে ফেলতে পারবেন নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট।