অফিসে বা কাজের জায়গায় যেমন পোশাক আরাম দেবে

কর্মক্ষেত্রের প্রতিদিনের পোশাকে থাকা চাই নিজস্বতা।
ছবি: সুমন ইউসুফ

কর্মক্ষেত্রের সাজসজ্জা কেতাদুরস্ত না হলেও ফুটে ওঠা চাই পেশাদারত্ব। সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছয় দিন অফিসে পরার জন্য প্রয়োজন বেশ কয়েক সেট পোশাক। পরার পর প্রতিবারই সেগুলো ধুয়ে, শুকিয়ে, ইস্ত্রি করে আবার পরার উপযোগী করে রাখতে হয়। প্রতিদিনের এই ঝামেলা, তার ওপর গরম—সব মিলিয়ে ইচ্ছা থাকলেও হাল ফ্যাশনের নানা নকশা-কাটের পোশাক বেছে নিতে যেন খানিকটা দ্বিধাই হয়।

কিন্তু প্রতিদিনের পোশাকে থাকা চাই নিজস্বতা। আবহাওয়া আর ফ্যাশন, দুটির সমন্বয়ে নিজের মতো করে কর্মক্ষেত্রে পরিধানের জন্য পোশাক বেছে নিতে পারলে ভালো। পরামর্শ দিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার আফসানা ফেরদৌসী।

কম নকশার এক রঙের কাপড়ের পোশাকগুলো যেমন টেকসই, দেখায়ও স্মার্ট।
ছবি : নকশা

কাপড় কেনার আগে

নিয়মিত পরিধানের পোশাকের কাপড় হওয়া চাই টেকসই। এমন কাপড় কিনতে হবে যেন বারবার ধোয়ার পরও সহজে নষ্ট না হয়। এখনকার আবহাওয়ায় সুতি কাপড়ই সেরা। এ ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে তৈরি বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব কাপড় যেমন ভিসকস ও লিনেন খুব আরামদায়ক এবং গরমের জন্য বেশ উপযোগী। কর্মক্ষেত্রে নিয়মিত জর্জেট এবং সিল্কের কাপড় না পরাই ভালো। কারণ, সংবেদনশীল হওয়ায় এগুলো সব সময় ধোয়া যায় না। তবে সিল্ক বা জর্জেটের স্কার্ফ বা ওড়না পরা যেতেই পারে।

সময়োপযোগী নকশা-কাট

হালকা, সহজ, আরামদায়ক এবং পরিপাটি—এই চারের সমন্বয় হচ্ছে কো-অর্ড সেট। চলতি ধারায় এর জনপ্রিয়তাও ব্যাপক। এগুলো কর্মক্ষেত্রে যেমন পরা যায়, তেমনি অফিস শেষে যেকোনো অনুষ্ঠান বা বন্ধুদের আড্ডায় পরা যায়। এ ছাড়া নারীদের ফরমাল প্যান্টে দেখা মিলছে নানা সময়োপযোগী নকশা। যেমন ফ্লেয়ার, ফিশ কাট, বুট কাট, সিগারেট প্যান্ট, হাই-ওয়েস্টেড ইত্যাদির সঙ্গে শার্ট কিংবা টপস মানানসই। ঢিলেঢালা লম্বা শর্ট ছাড়াও লম্বা কামিজ বেছে নিতে পারেন।

আজকালকার ফ্যাশন ট্রেন্ডগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মক্ষেত্রের পোশাকে যুক্ত করা যেতে পারে ব্লেজার, লং বা সেমি লং এ লাইন ড্রেস, শ্রাগ, কোটি ইত্যাদি। আফসানা বলেন, আরামকে প্রাধান্য দিয়ে এখন আনুষ্ঠানিক থেকে ক্যাজুয়াল লুক বেশি পছন্দ করছেন সবাই।

কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ বুঝে পোশাকের রং বাছাই করতে হবে।
ছবি : কবির হােসেন

রঙের দিকে নজর

রঙের বিষয়টা একান্তই ব্যক্তিগত, জানান আফসানা ফেরদৌসী। তিনি বলেন, নিয়মিত পরিধানের পোশাকের রং নিয়ে কোনো বিধিনিষেধ নেই। তবে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ বুঝে পোশাকের রং বাছাই করতে হবে। খুব উজ্জ্বল রং; যেমন টকটকে লাল, নিয়ন সবুজ বা গোলাপি, গাঢ় হলুদ, কমলা ইত্যাদি এড়িয়ে চলা ভালো।

কর্মক্ষেত্রের পোশাকে সাদা, হালকা গোলাপি, নীল, ধূসর, কালো, ছাই এবং বাদামি, এই রংগুলো থাকলে ভালো। তবে যে রংই পরুন না কেন, খুব বেশি হিজিবিজি ছাপ বা প্যাটার্নের নকশার বদলে হালকা, এক রকম ছাপার কাপড় বেছে নিন।

আবহাওয়া আর ফ্যাশন, দুটির সমন্বয়ে কর্মক্ষেত্রের পোশাক বেছে নিতে হবে।
ছবি: সুমন ইউসুফ

তৈরি জামায় সহজ সমাধান

তৈরি পোশাকে ফিটিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই কেনার আগে ভাবতে হবে আপনি কেমনটা চান। খুব আঁটসাঁট চান নাকি একেবারেই ঢিলেঢালা? কেনার আগেই পরে দেখুন। আফসানা ফেরদৌসী বলেন, তৈরি জামা কিনে সবচেয়ে বেশি ধরা খেতে হয় কাপড়ের মানে। তাই কেনার সময় শুধু সুন্দর নকশা না দেখে কাপড়ের গুণমান যাচাই করতে হবে।

প্রতিদিন অফিসে পরার জন্য কাপড়ের ওপর সুতা-পুঁতির নকশা করা জামা যত কম কেনা যায়, ততই ভালো। কম নকশার এক রঙের কাপড়ের পোশাকগুলো যেমন টেকসই, দেখায়ও স্মার্ট।

অফিসে পরার জন্য তাঁতের শাড়ি বেছে নিতে পারেন
ছবি: কবির হোসেন

যাঁরা শাড়ি পরেন

শাড়ির একঘেয়েমি দূর করতে ভিন্ন ভিন্ন নকশার ব্লাউজ পরা যেতে পারে। গলার নকশায় বোট, হাই-নেক, হল্টার এবং শার্ট কলার আর হাতের নকশায় বেলবটম, থ্রি-কোয়ার্টার, ফ্লেয়ার, স্ট্রেইটকাট ইত্যাদি নকশা থাকতে পারে। দীর্ঘ সময় পরিধানে অস্বস্তি এড়াতে ব্লাউজ খানিকটা ঢিলা করে তৈরি করুন। তৈরির ঝক্কি না পোহাতে চাইলে বিকল্প হিসেবে ক্রপ টপস কিংবা শার্ট দিয়েই শাড়ি পরে ফেলতে পারেন। আফসানা ফেরদৌসী বলেন, আজকাল নানা উপায়ে শাড়ি পরছে মেয়েরা।

যেমন আঁচল সামনে দিয়ে, বেল্ট দিয়ে, আরও কত কি! সেগুলো আয়ত্ত করে নিয়ে কর্মক্ষেত্রেও সেভাবে শাড়ি পরা যেতে পারে। নিয়মিত পরার জন্য সুতি বা তাঁতের শাড়ি ছাড়াও পরতে পারেন প্রাকৃতিক টাই-ডাই এবং ওজনহীন সিল্ক বা জর্জেটের শাড়ি।