যে ৭টি লক্ষণ দেখে মিথ্যাবাদী চেনা যায়
একটা কথা আমরা প্রায়ই শুনি, ‘মিথ্যাবাদীরা কখনো আপনার চোখের দিকে তাকাবে না।’ বিশেষজ্ঞরা আরও কিছু লক্ষণের কথা উল্লেখ করেন, যেসব দেখলে বোঝা যায়, কেউ মিথ্যা বলছে কি না। জেনে রাখুন বিস্তারিত।
শরীরের ভাষা কি কথার সঙ্গে মিলছে
একজন মানুষের হাবভাব সামগ্রিকভাবে বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো একটি লক্ষণ দেখেই চট করে কাউকে মিথ্যাবাদী বলে ধরে নেওয়া আদতে অসম্ভব। একজন মানুষ সত্য বলছে কি না, সেটি তার আচরণগুলোর পারস্পরিক সামঞ্জস্য দেখে বোঝা যায়। তার দেহভঙ্গি, মুখের অভিব্যক্তি, গলার স্বর ইত্যাদি একটা আরেকটার সঙ্গে মানানসই কি না, সেদিকে খেয়াল করুন। অধিকাংশ বুনো প্রাণী শিকারির সামনে ধরা দিতে চায় না। এ ক্ষেত্রে ওরা একটা কৌশল মেনে চলে। লুকানোর সময় নিজেকে গুটিয়ে ফেলে, যাতে ওদের দেখতে ছোট লাগে, যাতে কারও নজরে না পড়ে। ঠিক একই ব্যাপার ঘটে মিথ্যাবাদীর বেলায়। মিথ্যাবাদীও ঠিক একই নিয়মে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে চায়, কারও সামনে ধরা দিতে চায় না। এ কারণে দেখবেন, মিথ্যা বলার সময় মানুষের হাত থাকে পেছনে কিংবা হাত-পা গুটিয়ে রাখে, নয়তো নড়াচড়া কমিয়ে দেয়।
চোখেমুখেই কি মিথ্যা ফুটে উঠছে
কেউ মিথ্যা বলছে কি না, তা বোঝার জন্য কিছু মাইক্রো এক্সপ্রেশন বা ক্ষুদ্র অভিব্যক্তির প্রতি গভীর মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। মাইক্রো এক্সপ্রেশন হলো চেহারায় ফুটে ওঠা সেসব অভিব্যক্তি, যেসব এক সেকেন্ডের কয়েক ভাগের এক ভাগ সময়ের জন্য স্থায়ী হয়। এসব অভিব্যক্তির ওপর ব্যক্তির কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। আর তা শনাক্ত করা প্রায়ই এত কঠিন যে প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞরাও হিমশিম খান। তবে যিনি কথা বলছেন, তাঁর গালে ফুটে ওঠা লাল আভা দেখলে সন্দেহ করতেই পারেন। কারণ, উদ্বেগের সময় মানুষের গাল লাল হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া আরও কিছু চিহ্ন দেখে মিথ্যাবাদীদের শনাক্ত করা যায়। যেমন নাকের ছিদ্র প্রশস্ত হয়ে যাওয়া, ঠোঁট কামড়ানো, জোরে জোরে শ্বাস নেওয়া এবং ঘন ঘন চোখ পিটপিট করা ইত্যাদি।
মানুষটা কীভাবে হাসছে
অনেক সময় ব্যক্তির হাসি খেয়াল করলেই বোঝা যায়, মিথ্যা বলছে কি না। অট্টহাসি হেসে অনেক সময় মনের আসল অনুভূতি লুকিয়ে ফেলা সম্ভব। তাই ব্যক্তিটি কীভাবে হাসছে, সেটি খেয়াল করুন। হাসি ছাড়াও কথা বলা বা প্রশ্ন শোনার সময় তার মুখের নড়াচড়া খেয়াল করুন। ভয়, বিরক্তি, রাগ ইত্যাদি যেসব অনুভূতি তিনি লুকানোর চেষ্টা করেন, আপনি হয়তো সেসব ধরে ফেলতে পারবেন। মনে রাখবেন, প্রাণবন্ত হাসি শুধু ঠোঁটেই নয়, চোখেও ফুটে ওঠে।
মানুষটা কীভাবে কথা বলছে
কথা বলার সময় মানুষের কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন সাধারণত মিথ্যার ইঙ্গিত দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ব্যাপারটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই ব্যক্তির ‘স্পিচ রেট’ বা কথা বলার গতি ও শ্বাসপ্রশ্বাসের গতিবিধি খেয়াল করতে হবে। শ্বাসপ্রশ্বাস খুব দ্রুত বা খুব বেশি ধীর হয়ে গেলে কথাগুলো মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা কিংবা আশঙ্কাই বেশি।
মানুষটা কী বলছে
মানুষটার শব্দচয়নের দিকে লক্ষ রাখুন। মিথ্যা বলার সময় মানুষ ‘কিন্তু’, ‘সেটাও না’, ‘ছাড়া/ব্যতীত’, ‘যেখানে/পক্ষান্তরে/অন্য দিকে/যেহেতু’র মতো শব্দগুলো এড়িয়ে চলে। কারণ, তারা তখন জটিলভাবে চিন্তা করতে পারে না। মিথ্যাবাদীরা তাদের বানানো বা মিথ্যা কথা থেকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে নিজেদের দূরে রাখতে চায়। এ কারণে আলোচনার বিষয়বস্তু থেকে নিজেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে চায়। এ কারণে কথা বলার সময় ‘আমি’, ‘আমাকে’, ‘আমরা’-জাতীয় শব্দও তারা কম ব্যবহার করে।
চেনা মানুষ কি অচেনা আচরণ করছে
বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, মিথ্যা বলার সময় একজন মানুষের স্বাভাবিক আচার-আচরণে পরিবর্তন আসে এবং মিথ্যাবাদী শনাক্ত করতে তা খেয়াল করা জরুরি। আপনাকে তার ‘রেট অব স্পিচ’ খেয়াল করতে হবে। এক মিনিটে মানুষের উচ্চারিত শব্দসংখ্যার গড়কে বলে ‘স্পিচ রেট’। তাই সন্দেহভাজন কেউ কথা বলার সময় খেয়াল করুন, তার গলার স্বর, দেহভঙ্গি, হাতের ইশারা ইত্যাদি ঘটনার প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কি না। এ ছাড়া ঘটনা সম্পর্কে আপনি যা যা জানেন, সেসবের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ মনে হচ্ছে কি না। ধরুন, একজন স্বামী তাঁর স্ত্রীকে বলছেন, ‘আমার জন্য তোমার কেনা টাইটা খুব পছন্দ হয়েছে।’ কিন্তু কথাটি বলার সময় তাঁর মুখে যদি একটা শুষ্ক হাসি লেগে থাকে এবং হাসিটার ব্যাপ্তি যদি চোখ পর্যন্ত না পৌঁছায়, তাহলে নিশ্চিত থাকুন, টাইটা আদতে তাঁর পছন্দ হয়নি।
প্রশ্নটি কি তার কাছে স্বাভাবিক নাকি বিব্রতকর
কাউকে কঠিন কোনো প্রশ্ন করলে দৃষ্টি অন্য দিকে ফিরিয়ে নিতেই পারে এবং এটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ যদি একটা সাধারণ প্রশ্নেও আপনার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তাকে সন্দেহ করা উচিত।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট