মধু খেতে ভালোবাসে না, এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। কারণ, পুষ্টিগুণের তালিকায় প্রথম সারিতেই থাকবে মধুর নাম। এটি শরীরের জন্য উপকারী এবং নিয়মিত মধু সেবন করলে অসংখ্য রোগবালাই থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
মৌমাছির চাক থেকে সংগ্রহ করা ষোলো আনা খাঁটি মধুর স্বাদ থাকে আলাদা। মধুর বিভিন্ন ধরনের ওপর নির্ভর করে এর স্বাদও হয় ভিন্ন। তবে সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে মধুর পুষ্টিগুণ কমে যায় অনেকাংশে। তাই মধু সংরক্ষণ করার জন্য চাই সচেতনতা। বিভিন্ন ধরনের মধু থাকলেও তার সংরক্ষণের উপায় একই।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের খোলা মধু পাওয়া যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব মধু সংরক্ষণ করা হয় অপরিষ্কার হাতে। রাখা হয় অস্বাস্থ্যকর পাত্র ও নোংরা পরিবেশে, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারের চেয়ে ক্ষতি করে বেশি। আবার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মধুর পরিবর্তে চিনি বা গুড়ের শিরা বোতলে ভরে বিক্রি করছেন মধু হিসেবে। আমাদের মধ্যে অনেকেই খাঁটি মধু চেনার উপায় না জানায় প্রায়ই সম্মুখীন হন বিড়ম্বনার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুষ্টিবিদ ইশরাত জাহান জানান, মধু কিনে অনেকেই প্রতারিত হন। কিন্তু কীভাবে বুঝবেন মধুটি খাঁটি বা আসল মধু? মধু কেনার সময় ব্র্যান্ডের মধুই কেনা উচিত। খোলা মধুতে ক্ষতিকর অনেক উপকরণ মেশানো হয় এবং এর শুদ্ধতা নিয়ে সংশয় থেকে যায়। এর ফলে ক্রেতাকে সহজেই প্রতারিত করা যায়। কিন্তু বোতলজাত বিশ্বস্ত ও ভালো কোম্পানির মধু কিনে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক অনেক কম থাকে। কারণ, বোতলজাত মধুতে ক্ষতিকারক কোনো উপকরণ মেশানোর সুযোগ নেই। এসব মধু সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন এবং সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ করা বাধ্যতামূলক হয়ে থাকে।
এ ছাড়া খাঁটি মধু চেনার উপায় জানা থাকা সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষতি থেকে বাঁচতে জেনে নিতে হবে খাঁটি মধু চেনার সাধারণ কিছু উপায়, যেমন মধুতে কখনো কটু গন্ধ থাকবে না। খাঁটি মধুর গন্ধ হবে মিষ্টি ও আকর্ষণীয়। মধুর স্বাদ হবে মিষ্টি, এতে কোনো ঝাঁজালো ভাব থাকবে না। স্বভাবতই বিশুদ্ধ মধু বহুদিন ধরে রেখে দিলে জমে যেতে পারে, একে ক্রিস্টালাইজেশন বলা হয়। এ ক্ষেত্রে বোতলসহ গরম পানিতে বা রোদে কিছুক্ষণ রাখলেই মধু আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
গ্লাসে বা বাটিতে খানিকটা পানি নিয়ে তার মধ্যে এক চামচ মধু দিতে হবে। যদি মধু পানির সঙ্গে সহজেই মিশে যায়, তাহলে বুঝবেন যে এটা অবশ্যই নকল। আসল মধুর ঘনত্ব পানির চেয়ে অনেক বেশি, তাই তা সহজে পানিতে মিশবে না। এমনকি ভালোভাবে নাড়া না দিলে মধু পানিতে মিশবে না।
মধু সংরক্ষণ করতে হবে বায়ুরোধী পাত্রে। আর পাত্রটি রাখতে হবে ঠান্ডা এবং শুকনো জায়গায়। নিম্নমানের প্লাস্টিকের বোতলে রাখলে মধুর ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল’ উপাদান হারিয়ে মধু নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই মধুকে বায়ুরোধী কাচের পাত্রে সংরক্ষণ করা সবচেয়ে ভালো।
চাহিদা বৃদ্ধির কারণে প্রতিনিয়ত বাজারে বিভিন্ন অখ্যাত বা নতুন ব্র্যান্ডের মধু পাওয়া যাচ্ছে। তবে খাঁটি ও সেরা মানের মধু চেনার বিড়ম্বনায় না থেকে ক্রেতারা ভরসা রাখতে পারেন দীর্ঘদিনের পরিচিত ব্র্যান্ডগুলোর ওপর। কারণ, এসব মধু আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে স্বীকৃত ও পরীক্ষিত হয়ে থাকে। গ্লোবাল সিন্ডিকেট স্টাডির ২০১৯ ও ২০২০ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, মোড়কজাত মধুর তালিকায় ডাবর হানি বর্তমানে শীর্ষে অবস্থান করছে।