আমাদের ভারতীয় বা পাকিস্তানি পোশাকের দরকার নেই, দেশী দশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পী হাশেম খান

সাত মাস রাজধানী পান্থপথের বসুন্ধরা সিটিতে ছিল না দেশী দশ। অনেকেই এরই মধ্যে কেনাকাটা করতে এসে হতাশ হয়েছেন। তাঁদের জন্যই নতুন আঙ্গিকে ফিরে এসেছে দেশের দশটি নামকরা প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন ব্র্যান্ডের এই মেলবন্ধন। নিপুণ, কে ক্র্যাফট, অঞ্জন’স, রঙ বাংলাদেশ, বাংলার মেলা, সাদাকালো, বিবিয়ানা, দেশাল, নগরদোলা ও সৃষ্টি—এই দশ মিলেই দেশী দশ!

বসুন্ধরা সিটির সপ্তম তলা থেকে চতুর্থ তলায় নেমে এসেছে দেশী দশ। জায়গা কমেছ, তবে তাতে জৌলুশ বা আবেদন ম্লান হয়নি
ছবি: সংগৃহীত

বসুন্ধরা সিটির সপ্তম তলা থেকে চতুর্থ তলায় নেমে এসেছে দেশী দশ। জায়গা কমেছ, তবে তাতে জৌলুশ বা আবেদন ম্লান হয়নি। বরং এতে ক্রেতাদের সুবিধাই হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত পণ্য খুঁজেতে আর হাতড়ে বেড়াতে হবে না। দশটা আলাদা আলাদা ফ্যাশন ব্র্যান্ডকেও মনে হচ্ছে যেন একটাই। দেশী দশের নতুন আউটলেটের অন্দরসজ্জার কাজ করা স্থপতি আছিয়া করিমের কাছে এটাই নাকি ছিল চ্যালেঞ্জ। বললেন, ‘স্পেসটাকে এমনভাবে ভেবেছি যেন মনে হয়, এটা একটা ব্র্যান্ডেরই দশটা ভিন্ন “উইন্ডো”। বিষয়টি এমন, এটি একই সঙ্গে এক, আবার আলাদা। দেয়ালগুলোয় লোগো বসানোর কাজটা করেছি। বাকি সব ডেকোরেশনের কাজ ওরা নিজেরাই করেছে।’

রঙ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাস বললেন, ‘এই দশটি ফ্যাশন ব্র্যান্ড সবাই নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে আবার একত্র হয়েছে। এটা আমাদের ক্রেতাসহ সবার জন্য স্বস্তির আর আনন্দের ঘটনা। আমার জায়গাটা পাওয়ার ১৫ থেকে ২০ দিনের ভেতর সাজিয়ে-গুছিয়ে ফেলেছি। সবার সামর্থ্য তো আর সমান নয়। সবাই একমত হয়ে উৎসবের আগে এভাবে ফিরে আসাটাও এটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। মজার বিষয় হলো, আমরা সবাই কিন্তু একে অন্যের প্রতিযোগী আবার সহযোগী। এই বৈপরীত্যই আমাদের শক্তি।’

গতকাল বুধবার বিকেলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চিত্রশিল্পী হাশেম খান। উদ্বোধনী বক্তৃতায় ৮২ বছর বয়সী এই ‘তরুণ’ শিল্পী বাংলাদেশের ফ্যাশনের বাজারে ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাকের আধিপত্যের দিকটি তুলে ধরেন। বলেন, ‘আমাদের ভারতীয় বা পাকিস্তানি পোশাকের দরকার নেই। দেশে তৈরি পোশাক দিয়েই আমাদের চাহিদার সবটুকু পূরণ করা সম্ভব। পাশাপাশি বিদেশি পোশাকও থাকবে, তবে এই সময়ে এসেও বিদেশি পোশাকই যদি প্রভাব খাটায়, সেটা তো রুচির দুর্ভিক্ষ। (শিল্পাচার্য ) জয়নুল আবেদিন যেমনটা বলেছিলেন।’

স্মৃতির অলিগলি ঘুরে বর্তমান প্রজন্মের সামনে অতীত তুলে ধরেন শিল্পী। জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একে একে যখন দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো হাঁটি হাঁটি পা পা করে যাত্রা শুরু করে, তখন একদিন হাশেম খানের বাসায় গিয়ে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘গেঞ্জিতে আপনার এই আর্টটা ব্যবহার করতে চাই। শাড়িতে এই নকশাটা করতে চাই। কিন্তু টাকা দিতে পারব না। বোঝেনই তো...।’ শুনেই হাশেম খান বলেছিলেন, ‘অবশ্যই।’ এর কিছুদিন পর হাশেম খানের জন্য পাঞ্জাবি আর তাঁর স্ত্রীর জন্য শাড়ি নিয়ে যান কাইয়ুম চৌধুরী। আজও সেগুলো যত্ন করে তুলে রেখেছেন হাশেম খান। কোনো দিন যদি তাঁর ব্যবহার্য জিনিস নিয়ে প্রদর্শনী হয়, তখন সেগুলো দেবেন!

লটারিতে প্রথম দোকানটাই পেয়েছে রঙ বাংলাদেশ
ছবি: সংগৃহীত

গতকাল নতুন আঙ্গিকে দেশী দশের উদ্বোধনের সময় কিছু বিদেশি ক্রেতাও উপস্থিত ছিলেন। পোশাকের রঙের বাহারে তাঁরা মুগ্ধ। একজন তো বলেই ফেললেন, ‘দিস ইজ সো কালারফুল অ্যান্ড সো কিউট।’

দেশীয় সংস্কৃতি, দেশীয় উৎসব আর দেশীয় পোশাক নিয়ে কাজ করতে ২০০৯ সালে গঠিত হয় দেশী দশ। দেশীয় উপকরণে উৎসবনির্ভর পোশাক তৈরি করেই মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে এই যৌথ ফ্যাশন উদ্যোগ। বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স ছাড়াও সিলেটের কুমারপাড়া ও চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড়ে আফমি প্লাজায় দেশী দশের আউটলেট রয়েছে। অনলাইনে দেশী দশের ফেসবুক পেজে যুক্ত হয়েও কেনাকাটা করা যায়।