বিদ্যুৎ ও পানি সাশ্রয় করে যেভাবে ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করবেন
এখন তো যখন-তখন বৃষ্টি। সকালে ছাদে কাপড় মেলে দিয়ে বের হয়ে গেলেন। বাড়িতে কেউ না থাকলে দিনভর দড়ির ওপরেই কাপড়গুলো ভিজতে থাকবে। ওয়াশিং মেশিন থাকলে এই ঝামেলা নেই। কাপড় ধোয়া থেকে শুকানো—সবই করে দেবে এই মেশিন। তবে ওয়াশিং মেশিন কেনার সময় কিছু প্রশ্ন মাথায় ঘুরতেই থাকে—পানির অপচয় করবে কি না, বিদ্যুতের বিল বাড়াবে কি না, ঘরের কোথায় রাখলে ভালো হবে ইত্যাদি। সব প্রশ্নের উত্তরই আছে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
কার জন্য কোন ওয়াশিং মেশিন ভালো?
বাজারে সাধারণত দুই ধরনের কাপড় ধোয়ার মেশিন পাওয়া যায়। ফ্রন্ট লোডিং এবং টপ লোডিং। কাপড় দেওয়ার জন্য ওয়াশিং মেশিনের সামনে দরজা থাকলে সেটা ফ্রন্ট লোডিং আর ওপরে থাকলে টপ লোডিং। কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ের ট্রান্সকম ডিজিটালের অপারেশন ব্রাঞ্চ ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম জানান, ফ্রন্ট লোডিংয়ের দাম টপ লোডিংয়ের চেয়ে একটু বেশি এবং কাপড়ও তুলনামূলক ভালো পরিষ্কার করে।
কাপড় ধোয়া এবং শুকানোর দিক থেকেও দুই ধরনের ওয়াশিং মেশিন আছে। এক ধরনের ওয়াশিং মেশিন পানি ও ডিটারজেন্ট দিয়ে কাপড় ধুয়ে ফেললেও শুকাতে পারে না। ধোয়া কাপড় মেশিন থেকে বের করে রোদে শুকাতে হয়। তবে ড্রায়ার অপশন আছে, এমন ওয়াশিং মেশিনে কাপড় শুকিয়ে ফেলার ব্যবস্থাও থাকে। সেটি কিনতে হলে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি গুনতে হবে। চাকরিজীবীদের জন্য ড্রায়ারসহ ওয়াশিং মেশিন বেশি সুবিধাজনক, জানান রফিকুল ইসলাম। বলেন, এতে ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যে কাপড় ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন যে কেউ। তবে যেহেতু রোদে শুকালে কাপড় ভালো থাকে, সেহেতু যাঁদের সময় আছে, তাঁরা ড্রায়ার ছাড়াই ওয়াশিং নিতে পারেন।
যেভাবে ব্যবহার করতে হবে
অনেকেরই ধারণা, ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করতে অনেক কিছু লাগে। বিষয়টি মোটেও এমন নয়। সাধারণ গুঁড়া সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার কিংবা তরল ডিটারজেন্ট ও পানি হলেই ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়া যায়। সম্প্রতি স্যামসাং ওয়াশিং মেশিনে এআই প্রযুক্তি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানান স্যামসাংয়ের এক্সপেরিয়েন্স কনসালট্যান্ট নাফিজ আহমেদ। বলেন, এখন স্মার্টফোনে থাকা অ্যাপসের মাধ্যমেই ওয়াশিং মেশিন চালানো সম্ভব। নোংরা কাপড়গুলো মেশিনে আগে থেকে রেখে দিলে ঘরে-বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন, ফোনের মাধ্যমেই ওয়াশিং মেশিন চালিয়ে কাপড় ধুয়ে ফেলতে পারবেন।
বিদ্যুৎ বিল কি বেশি?
আজকাল বেশ কয়েকটি কোম্পানি ওয়াশিং মেশিনে ১ হাজার ৪০০ বা ১ হাজার ৫০০ আরপিএম-এর ইনভার্টার ব্যবহার করেছে। এটি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে। ইনভার্টারযুক্ত এসব ওয়াশিং মেশিন সপ্তাহে ৫ দিন ব্যবহার করলে মাসে বিদ্যুৎ বিল হবে ২০০ থেক ২৫০ টাকা, বলেন রফিকুল ইসলাম।
পানির অপচয় করবে নাকি সাশ্রয়?
সাবানপানি দিয়ে কাপড় কাচার পর পুনরায় পরিষ্কার পানি দিয়ে কাপড়গুলোকে ধুয়ে নিতে হয়। এতে একাধিকবার পানি ব্যবহার করতে হয় এবং পানির অপচয় হয়। কিন্তু ওয়াশিং মেশিনে কাপড়ের ওজন অনুযায়ী পানি ব্যবহার করা হয়, একবারই। ওইটুকু পানি দিয়েই কাপড় ধুয়ে দেয় মেশিন। রফিকুল ইসলাম বলেন, হাতে কাপড় ধুলে যে পরিমাণ পানি লাগে, তার অর্ধেকও ওয়াশিং মেশিনে লাগে না। এতে পানি সাশ্রয়ই হয় বলা যায়।
ঘরের কোথায় রাখতে হবে
যেহেতু এতে পানি ও বিদ্যুতের ব্যবহার হয়, তাই এমন কোথাও রাখতে হবে, যেখানে দুটিই সহজে পাওয়া যাবে। ওয়াশিং মেশিনের ড্রেন লাইন দিয়ে পানি সহজে বের হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাথরুমের কাছাকাছি বা বড় বাথরুম হলে তার ভেতরে রাখলে ব্যবহার করা সহজ হবে।
বাজারে যে যে ব্র্যান্ডের ওয়াশিং মেশিন আছে
স্যামসাং, হিটাচি, ওয়ার্লপুল এবং হায়ার ওয়াশিং মেশিনগুলোর দাম ২৫ হাজার থেকে শুরু। এ ছাড়া দেশীয় ব্র্যান্ড র্যাংগস এবং ওয়ালটনের ওয়াশিং মেশিনের দাম শুরু ১০ হাজার থেকে।