তরুণীদের কাছে যে কারণে জনপ্রিয় হোপ মার্কেট
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর মিরপুরের একটি হোস্টেলে যখন উঠি, তখন প্রায়ই দেখতাম ছুটির দিনে বড় আপুরা দল বেঁধে সব হোপ মার্কেটে যেত। আমারও সেভাবেই হোপ মার্কেটে যাওয়ার শুরু। প্রথম দর্শনে ভিড় দেখে কিছুটা ভড়কে গেলেও বছর তিন পেরিয়ে এখন এই মার্কেটের অলিগলিও চেনা হয়ে গেছে।
মিরপুর–১০–এর বি ব্লকের ১১ নম্বর সড়কে অবস্থিত হোপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পাশে বলে নাম হয়ে গেছে হোপ মার্কেট। প্রায় ১৫ বছর আগে স্কুলের আশপাশে সাধারণ কয়েকটা ফুটপাতের দোকান দিয়ে যাত্রা শুরু করে হোপ মার্কেট। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরাই ছিলেন এই মার্কেটের প্রথম ক্রেতা। বেশ কম দামে ভালো জিনিস পাওয়া যায় বলে দ্রুতই লোকমুখে ছড়িয়ে পড়তে থাকে হোপ মার্কেটের নাম। ধীরে ধীরে আশপাশের এলাকা থেকেও ক্রেতারা আসতে শুরু করেন। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মেট্রোরেলের কল্যাণে গত দুই বছরে হোপ মার্কেটের জনপ্রিয়তা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।
এখন শতাধিক স্থায়ী-অস্থায়ী দোকান, ফুটপাত, হকার ও হোপ প্লাজা মিলিয়ে গড়ে উঠেছে হোপ মার্কেট। থ্রি-পিস, কুর্তা, জিনস, জুতা, ব্যাগ থেকে শুরু করে বাসনকোসন, ঘর সাজানোর জিনিস—সবই মিলবে। পাওয়া যায় বাচ্চাদের আরামদায়ক পোশাক। শুধু তা-ই নয়, শীত আসার আগেই শীতের জামাকাপড় আসতে শুরু হয়েছে। কেনাকাটা করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠলে আছে নানা রকম স্ট্রিট ফুডের দোকান।
কুর্তা ও কামিজ
৪০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে বাহারি নকশার সুতি, লিনেন ও জর্জেটের কুর্তা ও কামিজ। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের কাফতান, টপ ও লং শার্ট পাওয়া যাবে ২০০ থেকে ৫০০ টাকায়। সুতি, জর্জেট, শিফন ও বাটিকের ওড়না ও স্কার্ফ পেয়ে যাবেন ১০০ থেকে ২০০ টাকায়।
প্যান্ট
সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো মানের প্যান্ট কিনতে হোপ মার্কেটে আসেন অনেকেই। নিয়মিত ব্যবহারের গ্যাবার্ডিন, জিনস ও ডেনিমের প্যান্ট পাওয়া যাবে ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়। অন্যদিকে আরামদায়ক কার্গো প্যান্ট পাওয়া যাবে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। এ ছাড়া পায়জামা ও পালাজ্জো কিনতে পারবেন ১৫০ থেকে ৫০০ টাকায়।
জুতা
পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে বিভিন্ন ধরনের হিল, স্নিকার্স, স্লিপার জুতা কিনতে পারবেন। দাম পড়বে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা। চুমকি, জরি ও রাজস্থানি কারুকাজ করা নাগরা বা জুত্তি তরুণীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। ওজনে হালকা ও দেখতে নজরকাড়া এই নাগরা পাওয়া যাবে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকায়।
ব্যাগ
হোপ মার্কেটের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ব্যাগের দোকান রয়েছে। যেখানে বিভিন্ন ধরনের হাতব্যাগ ও পার্স পেয়ে যাবেন ১০০ থেকে ৫০০ টাকায়। আজকাল তরুণ-তরুণীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় লম্বা আকৃতির টোটব্যাগ। বিভিন্ন ধরনের কথা লেখা ও ছবি আঁকা টোটব্যাগ পেয়ে যাবেন ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।
সিরামিকের বাসনকোসন
হোপ মার্কেটে মূলত কয়েকটি ভ্যানে সিরামিকের বিভিন্ন জিনিস বিক্রি হয়। এসব দোকানে পাওয়া যায় নান্দনিক সব বাসনকোসন। বিভিন্ন ধরনের মগ ও কাপ পাওয়া যাবে ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। হাফ প্লেট ও প্লেটের দাম ১০০ টাকা থেকে শুরু। ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় পেয়ে যাবেন মাঝারি আকারের সার্ভিং ডিশ। ছোট থেকে মাঝারি আকারের বাটির দাম পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।
সাজগোজের জিনিস
হোপ মার্কেটের পাশাপাশি অনেকগুলো দোকানে সাজসজ্জার বিভিন্ন জিনিস পাওয়া যায়। দোকানগুলোতে টিপ, কাজল, আইলাইনার, লিপস্টিক, লিপলাইনার পেয়ে যাবেন ১০০ টাকায়। গয়নার সংগ্রহও বেশ ভালো। ছোট ছোট কানের টপ পাওয়া যাবে ২০ থেকে ৫০ টাকায়, ঝুমকার দাম পড়বে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা। অ্যান্টিক ও পাথরের মালার দাম পড়বে ১০০ থেকে ২৫০ টাকা৷ কাচ ও অ্যান্টিকের চুড়ির দাম যথাক্রমে ৫০ টাকা ও ১০০ টাকা।
সপ্তাহের সাত দিনই সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই মার্কেট। বিকেল থেকে সন্ধ্যায় থাকে সবচেয়ে বেশি জমজমাট। সপ্তাহে সাত দিন খোলা থাকলেও ছুটির দিনে ভিড় হয় সবচেয়ে বেশি। ভিড় এড়াতে চাইলে ছুটির দিনে
এই মার্কেটে না যাওয়াই ভালো। ঠিকমতো দরদাম করতে পারলে হোপ মার্কেট থেকে বেশ কম দামে জিনিস কিনে ফিরতে পারবেন। যেহেতু এই মার্কেটে প্রায়ই প্রচুর ভিড় থাকে, তাই ছোট শিশুদের এখানে না আনাই ভালো।