এই ১০ অভ্যাসে নিজের অজান্তেই ‘গরিব’ হয়ে যাচ্ছেন না তো
মাস শেষ হওয়ার আগে বেতনের টাকা শেষ। নিয়মিত আয় থাকার পরও আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। বরং ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন মজার মিমও শেয়ার করেন অনেকে। হতে পারে সেটা মনের চাপা কষ্ট থেকে বা মজার ছলে।
কখনো টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার প্রকৃত কারণ কি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন? উত্তর খুঁজতে গেলে সবার আগে যেটা পাবেন, সেটা বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই হবে ‘সঠিক পরিকল্পনার অভাব’, বদভ্যাস আর ‘বিঞ্জ শপিং’। আমরা আমাদের আয়ের হিসাবে ব্যয় করি না। সে জন্য হয়তো মাস শেষ হওয়ার আগেই পকেটে হাহাকার শুরু হয়ে যায়! চলুন, চট করে জেনে নিই, কোন অভ্যাসগুলোতে আপনি ‘গরিব’ হয়ে যাচ্ছেন!
১. ধূমপান
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপান প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ক্যানসারের কারণ। শুধু এমনটাই নয়, এই অভ্যাসের কারণে নিজের অজান্তেই কমছে আপনার সম্পদ। ধরুন, সিগারেটের পেছনে আপনার দৈনিক ব্যয় ১০০ টাকা। এই টাকা দৈনিক হিসাবে আপনার কাছে কম মনে হলেও মাস কিংবা বছরের হিসাব করে দেখুন একবার। মাসে অন্তত ৩ হাজার টাকা, বছরে ৩৬ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে শুধু সিগারেটের পেছনে!
এই অভ্যাস আপনার কীভাবে শারীরিক এবং আর্থিক ক্ষতি করছে। সিগারেটের খরচটা এত ‘মাইক্রো লেভেল’–এ হয় যে বোঝা যায় না, কোন দিক থেকে এত টাকা চলে গেল! অনেকের মাসিক সিগারেটের খরচই এমন যে তা দিয়ে নিম্নবিত্ত একটা পরিবার দিব্যি এক মাস কাটিয়ে দিতে পারবে। ধূমপানের মতো অন্যান্য বদভ্যাসেও বেখেয়ালে পকেট থেকে হাওয়া হয়ে যায় অনেক টাকা।
২. ব্র্যান্ডের পণ্যের হাতছানি
কোনো ব্র্যান্ড নতুন কোনো পণ্য বাজারে আনলে ‘সেটা আমার লাগবেই’—এমন মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসুন। আগে দেখুন পণ্যটি আপনার আসলেই প্রয়োজন কি না। আগের যা আছে, তা দিয়ে আপনার চলতে অসুবিধা হচ্ছে কি না। এ ছাড়াও ভেবে দেখুন, যে টাকায় আপনি ব্র্যান্ডের দামি পণ্যটি কিনছেন, তার চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম দামে স্থানীয় দোকানগুলোতে আপনি প্রায় একই পণ্য পেয়ে যাবেন।
৩. রেস্তোরাঁয় খাওয়া
মাসে ১০ দিন বাইরে তথা রেস্তোরাঁয় খাবার খান— অনেকেই আছেন এমন। মুখরোচক হওয়ায় খাবারগুলো স্বাস্থ্যকর কি না, তা–ও যাচাই করেন না। সাধারণত রেস্টুরেন্টের খাবারের দাম হয় কয়েক গুণ। রেস্টুরেন্টে খাবার খাওয়ার চেয়ে বাসায় ওই খাবারটি প্রয়োজনে ইউটিউব থেকে রেসিপি দেখে নিজে বানিয়ে খান। এতে করে প্রথমত আপনার ‘রান্নার দক্ষতা’ অর্জিত হবে। খরচ বাঁচবে। আর খাবারটা রেস্তোরাঁর চেয়ে স্বাস্থ্যকর হবে।
৪. বোতলজাত পানি পান
বিশুদ্ধতার অজুহাতে অনেকেই বাসার বাইরে গেলে বোতলজাত পানি কিনে খান। আপনি কিন্তু চাইলেই বাসা থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য বোতলে পানি নিয়ে বের হতে পারেন। এতে পানি কেনার টাকা যেমন বেঁচে যাবে, তেমনি বারবার পানি কেনার ভোগান্তি থেকেও রেহাই পাবেন।
৫. দামি কফি
শো অফ করে বা অভ্যাস বশে প্রায়ই রেস্টুরেন্টে দামি কফি খাওয়ার অভ্যাস আছে কারও কারও। কফি খেতে গিয়ে খালি কফি খেলে কি চলে? অনেকে কফির সঙ্গে ‘টফি’—এই যেমন ক্রসাঁ, বিস্কুট, কেক, এক ফালি পিৎজ্জা না হলেও কেমন অসম্পূর্ণ লাগে। সপ্তাহে একবার ধরলেও মাসে কয়েক হাজার টাকা খরচ হয়ে যায় দামি কফির বিল দিতে গিয়ে। প্রয়োজনে আপনি বাসায় রেগুলার কফি বানিয়ে খেতে পারেন।
৬. হুটহাট কেনাকাটা
আমাদের অনেকেরই ‘উইন্ডো শপিং’, ‘ইমপালসিভ শপিং’–এর বদভ্যাস আছে। একটা জিনিস দেখে ভালো লাগল, না কিনলে মনটা খচখচ করছিল—তাই চট করে কিনে ফেললেন। বাসায় ফিরে মনে হলো, এটা দিয়ে আপনি করবেন কী! কেনাকাটা করার আগে ভাবুন, জিনিসটি আপনার কতটা প্রয়োজন। আর যে টাকা দিয়ে ওই জিনিসটি কিনতে যাচ্ছেন, তা আপনার কী প্রয়োজন। সেই টাকা দিয়ে আরও কী কী করা যেতে পারে।
৭. ধার করা
একবার টাকা ধার করে খরচ করা শুরু করলেন তো ধারের দুষ্টচক্রের ফাঁদে পা দিলেন। যে টাকা আপনার কাছে নেই, সেই টাকা আপনি পারতপক্ষে খরচ করবেন না।
৮. ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে পে করা
অনেকেই কার্ডে বিল পে করার অভ্যাসে মনের অজান্তে অনেক টাকা খরচ করে ফেলেন। তাই কার্ডকে প্রথাগত চেক বইয়ের মতো ব্যবহার করুন। শুধু প্রয়োজনীয় অর্থটুকুই তুলুন। ‘ক্যাশে’ খরচ করলে তুলনামূলকভাবে কম খরচ হয়।
৯. ‘ডিপিএস’ অ্যাকাউন্ট না থাকা
আপনার ব্যাংকের যে অ্যাকাউন্টে বেতনের অর্থ জমা হয়, সেখানে একটা ডিপিএস (ডিপোজিট পেনশন স্কিম) অ্যাকাউন্ট খুলুন। মাসের একটা নির্দিষ্ট দিনে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি কিছু পরিমাণ অর্থ ‘কেটে’ জমা হবে ডিপিএস অ্যাকাউন্টে। টাকা না জমানো বা জরুরি ফান্ড না রাখার ফলেও আপনি ক্রমাগত দরিদ্র হয়ে পড়বেন।
১০. অর্থ বিনিয়োগ না করা
প্রথমত, অর্থ জমাতে হবে। জরুরি অবস্থার জন্য ফান্ড রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, সম্পদ বাড়াতে চাইলে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আপনাকে বিনিয়োগ করতেই হবে।
এই অভ্যাসগুলো থেকে যত দ্রুত সম্ভব বের হয়ে আসুন। এ জন্য যা করণীয়, তাই–ই করুন। কেননা, অভাবে যেমন স্বভাব নষ্ট হয়, স্বভাবের কারণেও অভাব হতে পারে আপনার নিত্যসঙ্গী।