শুরু করার কোনো বয়স নেই
হোক সেটা ভিডিও এডিটিং, প্রফেশনাল কোর্স, নতুন কোনো ভাষা কিংবা কোনো ছোট উদ্যোগ—নতুন কিছু একটা শেখার ক্ষেত্রে শুরুর দিকে আমাদের উৎসাহ আর উদ্দীপনা বাঁধ মানে না। নানা ভিডিও দেখে, রিভিউ পড়ে বা নতুন ক্লাসে জয়েন করে চলতে থাকে নতুন কিছু শেখার অনুশীলন।
তবে শুরু করার কিছুদিন পরেই আমাদের ভেতর থেকে কে যেন বলে ওঠে, ‘যা ভেবেছিলাম, তা নয়। এ তো দেখি অনেক কঠিন’, ‘আমার দ্বারা এটি শেখা সম্ভব নয়’ কিংবা ‘কাজের প্রেশারে নতুন কোর্স করার সময় কোথায়’। শুরুর দিকের সেই উদ্যম আর থাকে না, হতাশ লাগে। তারপর হাল ছেড়ে দেওয়া যেন শুধু সময়ের অপেক্ষা!
তবে হাল ছেড়ে দেওয়া তো কোনো কাজের কথা নয়। চলুন ফেলে রাখা নিজের সেই কাজটা শুরু করা যাক নতুন করে।
১. ভাবুন, কেন শুরু করেছিলেন
প্রতিটি উদ্যোগ শুরু করার পেছনে আমাদের কোনো না কোনো কারণ থাকে। তাই যখন আপনি কিছু ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন, সেই উদ্যোগ গ্রহণের পেছনের কারণগুলোর কথা মনে করুন। সেই উদ্যোগকে ঘিরে প্রথম দিকের সেই আবেগ–অনুভূতির কথা ভাবুন। মনে করুন, কী অর্জন করতে চেয়েছিলেন, আর সেটা শিখলে আপনার ব্যক্তিগত আর পেশাগত জীবনে কী যোগ হতো। তারপর নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আপনি কি সত্যিই সেগুলো ছেড়ে দিতে চান?
২. এত দূর আসার পেছনের কষ্টগুলোর কথা ভাবুন
প্রতিটি কাজের পেছনে শ্রম থাকে। কাজের ফাঁকে সময় বের করা, অবসর বা ঘুমের সময় কমিয়ে অনেকেই শেখা চালিয়ে যান। হয়তো কোনো ছুটির দিনের ঘোরাঘুরি বা আড্ডায় বন্ধুদের ডাক উপেক্ষা করে আপনি কাজ করে গেছেন আপনার লক্ষ্যকে ছোঁয়ার জন্য। তাই যখনই কোনো কিছু ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন, ভাবুন আপনার এত দিনের কষ্ট, ত্যাগ এসবের কথা। এত সব ত্যাগ আর কষ্টকে কি আপনি বৃথা যেতে দেবেন?
৩. অতীতের চ্যালেঞ্জগুলো মনে করুন
এগিয়ে যাওয়ার জন্য কখনো পেছনে ফিরে তাকাতেও হয়। নিজের জীবনের চ্যালেঞ্জগুলোর কথা ভাবুন, যখন আপনি লেগে ছিলেন। হাল ছাড়েননি। নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উৎসাহিত করার জন্য মনে করুন, কীভাবে অতীতে নিজের সমস্যাগুলো সামলে উঠেছিলেন। অতীতের চ্যালেঞ্জিং ঘটনাগুলো আপনাকে সামনে এগিয়ে চলার শক্তি জোগাবে।
৪. শুভাকাঙ্ক্ষীর সঙ্গে সমস্যাগুলো শেয়ার করুন
কখনো কখনো আমাদের শুধু একজন মানুষকে দরকার পড়ে, যার কাছে আমরা নিজের কথাগুলো বলে হালকা হতে পারি। যদি একা একা আর চাপ নিতে না পারেন, তাহলে একজন ভালো বন্ধু বা মেন্টরের কাছে যান। সমস্যাগুলো খুলে বলুন। তিনি নিশ্চয়ই আপনার সমস্যাগুলো থেকে বের হতে সাহায্য করবেন। আর আপনিও ভারমুক্ত হয়ে আবার ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবেন কাজে।
৫. সমস্যা জীবনেরই অংশ
আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথ কখনো মসৃণ হয় না। হাজারো সমস্যা থাকে, বাধা আসে। আর এ সমস্যাগুলোই আমাদের ধৈর্য ধরে লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া শেখায়, আরও শক্তিশালী করে। তাই সমস্যাকে ইতিবাচকভাবে দেখার চেষ্টা করুন। আজ সমস্যা ভেবে কোনো কাজ ছেড়ে দেওয়া মানে ভবিষ্যতে আরও সম্ভাব্য সমস্যার সৃষ্টি করা।
৬. বিরতি নিন
কখনো কখনো আমরা কাজের চাপে বিরতি নেওয়ার কথা ভুলে যাই। একটানা কাজ আমাদের শুধু শারীরিকভাবেই নয়, মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত করে। ক্লান্ত লাগলে বিরতি নিন। তবে হাল ছাড়বেন না। সময় পেলে ঘুরে আসুন কোথাও থেকে। না হলে একটা ভালো সিনেমা বা সিরিজে ডুব দিন। বই পড়ুন। বিরতি নেওয়া শেষ হলে আবার নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়ুন।
নতুন একটা কাজের শুরুটাই সবচেয়ে কঠিন। তবে আপনি যেহেতু কঠিন কাজটাই করে ফেলেছেন, তাই হতাশা বা নেতিবাচক চিন্তাকে আপনার পথের কাঁটা হতে দেবেন না। যতই কষ্ট হোক, বাধা আসুক, একটু একটু করে এগিয়ে যান। লক্ষ্যে পৌঁছানোর পর বুঝতে পারবেন, আপনার পরিশ্রম বৃথা যায়নি।