প্রথমবারেই ব্রোঞ্জ
অন্য প্রতিযোগীদের পেশল শরীর দেখে একটু ঘাবড়েই গিয়েছিলেন রাইয়ান রহমান। ইস্তাম্বুলের হোটেলে পা রাখার পর থেকেই আসা-যাওয়ার পথে তাঁদের অনেকের সঙ্গে দেখা হচ্ছিল। তার ওপর মঞ্চের পেছনে যখন অন্য দেশের প্রতিযোগীদের শরীরচর্চার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিগুলো দেখলেন, সংশয় আরও বেড়ে গেল। পারব তো?
প্রথমবার ‘ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্ল্ড পাওয়ার লিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপ’-এ অংশ নিয়ে তুরস্ক থেকে শেষ পর্যন্ত কিন্তু চমকপ্রদ অর্জন নিয়েই ফিরেছেন রাইয়ান। সম্মিলিতভাবে চতুর্থ হয়েছেন। ‘ওয়ার্ল্ড সাব–জুনিয়র (অনূর্ধ্ব–১৮) পাওয়ার লিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২২ ’-এ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘৫৯ কেজি’ শ্রেণিতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
এ ছাড়া স্কোয়াটে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে রৌপ্য ও ডেডলিফটে তৃতীয় স্থান অর্জন করে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন এই তরুণ। বাংলাদেশ ছাড়াও এই গ্রুপে অংশ নেয় জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, মেক্সিকো, তুরস্ক, ব্রাজিল, তাজিকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, বুলগেরিয়া।
ঢাকার লেকহেড গ্রামার স্কুল থেকে ও লেভেল করে এখন লালমাটিয়ার ম্যানগ্রোভ কলেজে ‘এ’ লেভেল পড়ছেন রাইয়ান। বয়স যখন ১৫, তখন শরীরের বাড়তি মেদ ঝড়াতে ধানমন্ডির একটি ব্যায়ামাগারে ভর্তি হয়েছিলেন। তখন থেকেই ভারোত্তোলনের প্রতি আগ্রহ। লেখাপড়ার পাশাপাশি শখ হিসেবে এর চর্চাও চালিয়ে যান।
রাইয়ান বলছিলেন, ‘জিমে ভর্তি হয়ে মাত্র এক বছর ট্রেনিংয়ের পরই লক্ষ করলাম, অন্য সদস্যদের তুলনায় আমি বেশ ভার তুলতে পারি। আশপাশের অনেকে যখন ১০০ কেজি তুলতেই হিমশিম খায়, আমি তখন ১৮০ কেজি ভারও তুলতে পারি। তাই এ ব্যাপারে কিছুটা আগ্রহ হয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যে পাওয়ার লিফটিং সম্পর্কে জানতে পারলাম। জানলাম, জাতীয় পর্যায়েও প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া যায়। সেই থেকে একজন কোচের অধীনে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করি।’
জাতীয় ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে রাইয়ানকে উৎসাহিত করেন তাঁর কোচ তাসিন আলী। প্রশিক্ষণ শুরুর পাঁচ মাস মাথায় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন রাইয়ান, তখন তাঁর বয়স ১৭ বছর। সেটা ২০২১ সালের ডিসেম্বরের কথা। প্রথমবারেই জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন রাইয়ান। এই সুবাদেই ওয়ার্ল্ড পাওয়ার লিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়ার সুযোগ। আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে কোচ তাসিন আলী ও রেফারি মুমিনুল হককে সঙ্গে নিয়ে রাইয়ান তুরস্কে যান গত ২৮ আগস্ট। প্রতিযোগিতায় এবার ৪৯টি দেশের ২১২ জন ভারোত্তোলক অংশগ্রহণ নেন।
বাংলাদেশ পাওয়ার লিফটিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতায় রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদক পেয়ে চতুর্থ স্থান অর্জন করাটা সহজ ছিল না। যেসব সরঞ্জাম এই প্রতিযোগিতায় ব্যবহার করা হয়েছে, বাংলাদেশে তা কখনো ব্যবহারের সুযোগ পায়নি রাইয়ান। এগুলো বাংলাদেশে নেই। এসব সরঞ্জাম দিয়ে যদি ওর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারতাম, তাহলে আমার বিশ্বাস, ও আরও ভালো রেজাল্ট পেত।’ পড়াশোনায় ভালো করার পাশাপাশি ভারোত্তোলনে বাংলাদেশকে আরও সামনে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন রাইয়ান রহমান। এ বছরের ডিসেম্বরে দুবাইতে অনুষ্ঠিত হবে ‘এশিয়ান পাওয়ার লিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপ’। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আগ্রহী তিনি। এখন চলছে তার প্রস্তুতি।