স্ত্রীর আয় বেশি হলে যা হয়
স্ত্রীর আয় বেশি বলে স্বামীকে হীনম্মন্যতা ও অনিরাপত্তায় ভুগতে দেখার দৃশ্য বলিউডি অনেক ছবিতেই রয়েছে। ‘অভিমান’ থেকে শুরু করে ‘ম্যায়, মেরি পত্নী ঔর ওহ’র মতো ছবিতে এমন ঘটনা দেখা যায়। স্ত্রীর আয় আর ঠাটবাট বেশি হওয়ায় স্বামীকে চাপা ঈর্ষায় জ্বলতে দেখা যায়। পরিণতিতে ভালোবাসার বন্ধনে মাথা তুলে দাঁড়ায় দূরত্বের দেয়াল। ছবির মতো বাস্তব জীবনেও এমন ঘটনা এখন বিরল নয়।
যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের দীর্ঘদিনের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় ৬ হাজার দম্পতির তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। ১৫ বছর ধরে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যখন পুরো দাম্পত্য আয়ের ৪০ শতাংশের বেশি স্ত্রীর কাছ থেকে আসতে শুরু করে, তখনই স্বামী উদ্বিগ্ন হতে শুরু করেন।
দম্পতি কর্মজীবী হলে ঠাটবাটে কে কার চেয়ে এগিয়ে যাবেন, একটা দৌড় শুরু হয়। এমন দৌড়ে স্ত্রী যদি স্বামীকে টপকে এগিয়ে যান, তখন বিরূপ এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। স্বামী ভুগতে পারেন অনিরাপত্তায়। সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফলাফলে এমনটি দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।
গবেষণায় দেখা গেছে, স্ত্রীর আয় বেশি হয়ে গেলে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার শিকার হয়ে স্বামী অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন, যা বেড়েই চলে। যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেদের করা ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, যে স্বামী তাঁর স্ত্রীর আয়ে পুরোপুরি নির্ভর করেন, তাঁর অবস্থা থাকে সবচেয়ে করুণ। স্ত্রীর আর্থিক সমর্থনে চলা পুরুষেরা সবচেয়ে বেশি অবসাদগ্রস্ত থাকেন।
গবেষক জোয়ানা সাইড্রা বলেন, গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয় যে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের রীতিনীতির কারণে প্রচলিত প্রথা ভেঙে নারীর আয় বেড়ে গেলে তা পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
গবেষকেরা বলেন, স্ত্রী যদি পরিবারে আর্থিকভাবে সাহায্য করেন তবে সবচেয়ে কম চাপ অনুভব করেন স্বামী। কিন্তু স্বামীর আয়ের চেয়ে স্ত্রীর আয় বেড়ে গেলেই তখনই অনিরাপদ বোধ শুরু হয়ে যায়।
গবেষক জোয়ানা বলেন, স্ত্রীর অধিক আয়ের সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক বিষয়ের পাশাপাশি জীবন সন্তুষ্টি, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, সম্পর্কচ্ছেদ, বৈবাহিক দর-কষাকষির ক্ষমতার মতো বিষয় যুক্ত হয়ে যায়। প্রথাগত লিঙ্গ ভূমিকার পরিণতি হিসেবে এটা তৈরি হয়।
ভারতের মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শক শ্বেতা সিংয়ের ভাষ্য, অনেক পরিবারে মনে করা হয় পুরুষই হবে মূল রোজগেরে। ছোটবেলায় অনেক বইতে পরিবারে বাবার ভূমিকা হিসেবে লেখা হয়, যিনি পরিবারের জন্য আয় করেন এবং মায়ের ভূমিকা পরিবারের দেখাশোনা করা। এ ধারণা নিয়েই অনেকে বড় হন। তাই নারীর আয় বেড়ে গেলে অনেক পুরুষকেই অনিরাপত্তায় ভুগতে দেখা যায়। লিঙ্গ নিয়ে গৎবাঁধা ধারণার কারণেই রীতিনীতির বাইরের কোনো বিষয় গ্রহণ করতে মানুষের কষ্ট হয়। তথ্যসূত্র: ইনডিপেনডেন্ট, টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইন