বাঙালির প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছুটির দিন নিয়ে চিন্তিত ছিলেন! ভাবতেন, কীভাবে কাটাবেন দিনটি! কিন্তু আমাদের এমন হয় না। ছুটির দিনের অপেক্ষায় থাকি আমরা। কর্মদিবসের ব্যস্ততায় দম ফেলার অবসর কোথায়! সময়ের অভাবে পরিবার-প্রিয়জনদের সঙ্গে তৈরি হয় দূরত্ব। আহত হয় নাগরিক মন। ছুটির দিনে সেই ক্ষত পরিচর্যার সুযোগ পাই। কীভাবে আপনার সাপ্তাহিক ছুটির দিনটি আরেকটু আনন্দময় হয়ে উঠতে পারে, সেটা নিয়ে ভেবেছি আমরা।
পরিবারের সঙ্গে
সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই ভেবে রাখুন কীভাবে কাটাতে চান দিনটি। পরিকল্পনা করুন। কেউ কেউ বাসায় থাকতে পছন্দ করেন। সে ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটান। সবাই মিলে সিনেমা দেখতে পারেন। রান্না করতে পারেন প্রিয় কোনো খাবার। পুরোনো দিনের গল্প করুন। ঘরোয়া আড্ডায় নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করুন।
দৈনন্দিন ব্যস্ততায় আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের জায়গাতে ধুলো জমে যায়। সকাল-সন্ধ্যা অফিস কিংবা চাকরির ঝামেলায় কথা বলার সুযোগও হয় না সবার সঙ্গে। সেই ক্ষতি পূরণ করে নিন। মা-বাবা, ভাইবোনদের সঙ্গে মন খুলে গল্প করুন। সন্তানদের সঙ্গে আলাপ করুন। সময় দিন পরিবারকে। নাগরিক জীবনে এই মানুষগুলোই আপনার সবচেয়ে আপন।
যদি বাইরে কোথাও কাটাতে চান আপনার ছুটি, তাহলে যেতে পারেন লং ড্রাইভে। ঢাকার আশপাশে সোনারগাঁও, জিন্দা পার্ক, মাওয়াঘাট কিংবা বালিয়াটি জমিদারবাড়ি ঘুরে আসতে পারেন। শীতের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে আদর্শ একটি গন্তব্য। অতিথি পাখিদের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে জাবিতে। ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহ থাকলে যেতে পারেন পুরান ঢাকাতে। লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, বংশাল, তাঁতীবাজার, শাঁখারীপট্টি, ফরাশগঞ্জ আর সদরঘাটে ঘুরতে পারেন। এখানের অলিগলিতে দেখা মিলবে পুরোনো স্থাপত্যের। অপ্রশস্ত রাস্তা আর প্রাচীন সময়ের ঘ্রাণমাখা ঢাকা অসাধারণ এক অনুভূতি দেবে। যেতে পারেন বিউটি বোর্ডিং। সুপ্রাচীন এই স্থাপনার সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের এক নিবিড় যোগাযোগ আছে।
এ ছাড়া সবাইকে নিয়ে চলে যেতে পারেন বাসার পাশের কোনো সিনেমা হলে। তবে যাওয়ার আগে অবশ্যই প্রেক্ষাগৃহের খোঁজখবর নিয়ে যাবেন। নাট্যপ্রেমী হলে যেতে পারেন শিল্পকলা একাডেমিতে। জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চনাটকের আয়োজন থাকে প্রায় সন্ধ্যায়। রমনা পার্ক কিংবা বোটানিক্যাল গার্ডেনে একচক্করও হতে পারে সুন্দর পছন্দ। প্রকৃতির সঙ্গে কিছুটা সময় কাটালে ভালোই লাগবে।
একা একা ছুটির দিন
ঢাকা এখন সুবিস্তৃত। ক্রমাগত বাড়ছে জনসংখ্যা। বহু একা মানুষের বাস এখানে। অনেকে জীবন-জীবিকার তাগিদে থাকছেন ঢাকায়। কেউ আবার পড়াশোনার প্রয়োজনে আবাস গেড়েছেন শহরে। তাঁদের ছুটির দিন কেমন হতে পারে?
ঘুম থেকে উঠে ভেবে নিন কী করতে চান। কোথাও বেড়াতে যেতে পারেন একা। বন্ধুরা মিলেও যাওয়া যেতে পারে কোনোখানে, কোনো কনসার্ট কিংবা প্রদর্শনীতে। পছন্দের টং দোকানে চায়ের কাপে জমিয়ে তুলতে পারেন তুমুল আড্ডা। প্রিয় কোনো জায়গায় দুপুরে খেয়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন নিজের মতো করে। রিকশাভ্রমণও দারুণ আনন্দের হতে পারে ফাঁকা ঢাকাতে। ছুটির দিনগুলোতে অনেকেই নিজের মতো থাকতে পছন্দ করেন। আপনিও তাই করতে পারেন। প্রিয় কোনো কাজ করতে পারেন। শখের বিষয় চর্চায় সময় দিতে পারেন। ফটোগ্রাফির আগ্রহ থাকলে ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। বাসায় নিজের পছন্দের কোনো রান্না করতে পারেন। পড়তে পারেন প্রিয় লেখকের বই। তখন মুঠোফোন কিংবা পিসিতে বাজতে পারে কোনো হালকা ধাঁচের গান।
যেভাবেই কাটান ছুটির দিন, সেটা হতে হবে দারুণ শান্তি ও স্বস্তির। যেন ছুটির পর কাজে ফিরলে আপনাকে প্রাণবন্ত লাগে। আপনি নিজেই অনুভব করতে পারেন আপনার জমে থাকা ক্লান্তিগুলো মুছে গেছে। একা হোক আর পরিবারের সঙ্গে হোক, ছুটির দিনে সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন কিংবা ডিজিটাল গ্যাজেটসের সংস্পর্শ থেকে যতটা সম্ভব দূরত্ব রাখুন। ই-মেইল-ফোনকল যতটুকু পারা যায়, এড়িয়ে চলুন। তথ্যের অধিক প্রবাহ একরকম বিরক্তি তৈরি করে।
ব্যস্ততা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেই সঙ্গে অবসরও অপরিহার্য। সফল ও সুখী মানুষেরা কর্মময় জীবনকে ভালোবাসেন। ছুটির দিনগুলোতে তাঁরা সংগ্রহ করেন বেঁচে থাকার রসদ। তাই সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোকে পরিকল্পনা অনুসারে যাপন করুন। সজীব আনন্দে থাকুক আমাদের নাগরিক জীবন।