আমি অনেক কিছুই ছাইড়া আসা লোক
পাঠকের সুখ–দুঃখ, হাসি–আনন্দ, পছন্দ, ভালোলাগা, ভালোবাসাসহ যে কোনো না বলা কথা শুনতে চায় মনের বাক্স। প্রতি সপ্তাহে পাঠকের পাঠানো সেসব লেখা থেকে নির্বাচিত কিছু লেখা আজ প্রকাশিত হলো এখানে
কী একটা বছর ছিল ২০২০!
আজ কেন জানি অতীত নিয়ে লিখতে ইচ্ছে করছে। পুরোনা ব্যথায় মনটা কাতরাচ্ছে। প্রায় দুই বছর আগের কথা। ২০২০ সালের মার্চে হঠাৎ করোনার জন্য ছুটি পেয়ে উচ্ছ্বাস–আনন্দে গ্রামের বাড়ি বগুড়ায় ফিরি। কিন্তু বেশি দিন এ আনন্দ টিকল না। আনন্দ হয়ে গেল আতঙ্ক। দিন দিন করোনার প্রকোপে মৃত্যু বাড়ছে। ছুটি বাড়ছে। ছুটি পেয়ে যে মানুষ আতঙ্কিত হতে পারে, সেটা প্রথম জানলাম। কেউ ঢাকা থেকে ফিরলেই সবাই তাকে অন্য চোখে দেখত। তার সঙ্গে কেউ মিশত না। এমনকি তাদের একঘরে করে লাল পতাকা টাঙিয়ে দিত। আমার মন ব্যথিত হতো ঠিকই কিন্তু কিছু করার ছিল না। টানা ১৪ দিন একটা পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল। লুকিয়ে লুকিয়ে খবর নিতে যেতাম, আর ভাবতাম কী দোষ করেছে এরা? তাদের তো করোনা হয়নি। ১৪ দিন পরও তারা বেঁচে ছিল। তবে কেন এমন বিচ্ছিন্নতা!
মাহমুদা টুম্পা
শিক্ষার্থী
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
বিটিএস ফ্যান বলছি
হ্যালো, বিটিএস। এই লেখা হয়তো তোমরা পড়বে না। তবু ভালোবাসা বলে কথা। তোমাদের হয়তো কোনো দিন দেখতে পাব না। কারণ, তোমরা থাকো কোরিয়ায় আর আমি বাংলাদেশে। তবু আমার তোমাদের কথাই মনে পড়ে প্রতিদিন। তোমাদের গান শুনে আমার ঘুম ভাঙে। ঘুমাতে যাইও তোমাদের সুরে। কল্পনায় আমি তোমাদেরই দেখি। বিশ্বাস রাখি আমাদের একদিন দেখা হবে। তোমরা এভাবেই আমাকে আনন্দে রেখো আজীবন।
মাসুদ রানা
আলোয় ভুবনভরা
‘কেউ বই কিনবেন? আমার নিজের লেখা সব কবিতা আছে এখানে।’ বলছিলেন কোহিনূর আক্তার জুঁই। খেয়াল করলাম তিনি অন্ধ। বাঁ হাতে একটা ছড়ি আর ডান হাতে একটি ব্যাগ ও দুইটা বই ধরে তিনি অতিধীরে হাঁটছেন। ঘটনাটি গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির বইমেলায়। কৌতূহলী হয়ে সেখানেই কথা বললাম এই কবির সঙ্গে। জানলাম, সাত বছর বয়সে বসন্ত রোগে তাঁর দুই চোখের আলো হারিয়েছেন। কিন্তু থেমে যাননি। নিজের চেষ্টায় এমএ পাস করেছেন। কবিতা লিখতে ভালোবাসেন। আর এখন নিজেই হয়েছেন নিজের কবিতার বইয়ের ফেরিওয়ালা।
এই মানুষটির একটা মহৎ উদ্যোগ আছে। তাঁর নিজের একটি চোখের হাসপাতাল আছে। নিজে সামর্থ্য অনুযায়ী অন্ধ অসহায় মহিলাদের পাশে থাকেন। কয়েকজন দাতাও কিছু সাহায্য করেন। বই বিক্রির টাকাও এই হাসপাতালে দেন। এমন একজন মহৎ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পেরে সত্যিই আমি অভিভূত ও অনুপ্রাণিত। বুকভরা ভালোবাসা রইল পৃথিবীর এমন আলোর পথিকদের প্রতি, যাঁরা অহর্নিশ চমৎকার সব স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাচ্ছে।
মুঈন হুসাইন
সাতক্ষীরা
এখনো তোমাকে সেভাবেই ভালোবাসি
আমি মনের বাক্সের একজন নিয়মিত পাঠক। মাঝেমধ্যে নিজেও লিখতে চাই, কিন্তু বিষয় খুঁজে পাই না। আজ হঠাৎ মনে হলো, মনের চিলেকোঠায় সযত্নে যে গোপন কথাগুলো লুকিয়ে রেখেছি, তা সঠিক মানুষটির কাছে পৌঁছে দেওয়ার এটাই তো সেরা মাধ্যম।
এই লেখা যখন প্রকাশিত হবে, তত দিনে হয়তো আমাদের ব্রেকআপের দুই বছর পূর্ণ হবে। অথচ কী অদ্ভুত, এখনো আমি তোমাকে ঠিক সেভাবেই ভালোবাসি, যেভাবে দুই বছর আগেও বেসেছি। তুমি চলে যাওয়ায় আমার মনের রঙিন পৃষ্ঠাটি আজও বিবর্ণ। তুমি এখন অন্য কারও দিগন্তের তারা। যা–ই হোক, তোমার সেই নতুন প্রিয় মানুষটির সঙ্গে ভালো থেকো। আমি না হয় আজীবন এই ভাঙা হৃদয় নিয়ে বেঁচে থাকব।
মুন
ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়
কাগজে মোড়ানো কিছু সংলাপ
এই বসন্তে তোমায় খুব মনে পড়ে। শীতল সিঁথির ভাঁজে ভাঁজে আর লেখা হয় না সুমধুর বসন্তের গান। চোখে চোখে হয় না কথা বলা। হাতে হাত রেখে হাঁটা হয় না কত গ্রীষ্ম, বর্ষা! অথচ কত কাছাকাছি থাকি আমরা। তবু আমাদের দেখা হয় না। সময়ে-অসময়ে অবসরে-ব্যস্ততায় খুব মিস করি তোমায়। হৃদয় উপকূলের প্রলয়ংকরী সুনামির বিরুদ্ধে আর কতকাল ডানা ঝাপটাব, বলো?
ল্যাম্পপোস্টের নিয়ন আলোয় ব্যস্ত রাস্তায় চঞ্চল চড়ুইয়ের মতো লেপ্টে থাকি। এই বুঝি সেই পথে এসে দাঁড়াবে। কিন্তু তোমার দেখা নেই। তবু অপেক্ষায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি। এই শহরটা বড় অদ্ভুত, মায়ায় জড়িয়ে রেখে ছায়া দিতেই ভুলে যায়। এই ছায়া-মায়ার জটিল ক্যালকুলাসের উত্তর আজও মেলাতে পারিনি।
সাজ্জাদ সিয়াম
চেকপোস্ট
রংপুর
আমি অনেক কিছুই ছাইড়া আসা লোক
ভালোবাসার মানুষকে কাছে না পাওয়ার অভাব মধ্যবিত্তের অসহায় মুখের মতো। ঝেড়ে-কেশে বলা যায় না, আবার লুকিয়েও রাখা যায় না। জানি না আর কতকাল হাত ধরা হবে না, হবে না চোখে চোখ রেখে কথা বলা। কপালে চাইলে হয়তো তোমার কাছেই থেকে যেতাম। তোমার শহরের অলিগলি ঘুরতাম তোমাকে সঙ্গে নিয়ে। আরও অনেক ঝগড়া করতাম। তুমি অভিমানের পসরা সাজিয়ে রাখতে, আমি সেখানের ক্রেতা হতাম।
ভালোবাসি মায়াবিনী, ইনফিনিটি পরিমাণ। নিজের খেয়াল রেখো। আশা করি, আবার এক হব, ঘর বাঁধব আমরা। তবে আপাতত মারজুক রাসেলের কবিতার মতো বলতে হচ্ছে—
‘তোমার এলাকা ছাইড়া যাচ্ছি;
তোমারে ছাড়ার ফিলিংস হচ্ছে, হোক—
আমি অনেক-কিছুই-ছাইড়া-আসা-লোক!’
এস এম ইসহাক
সিলেট
লেখা পাঠানোর ঠিকানা
অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ই-মেইল: [email protected], ফেসবুক: facebook.com/adhuna.PA খামের ওপর ও ই-মেইলের subject–এ লিখুন ‘মনের বাক্স’