আজ ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব দিবস

আজ ২১ সেপ্টেম্বর, ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব দিবস
ছবি: প্রথম আলো

ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব—সম্পর্ক দুটি যতটা পরস্পরঘনিষ্ঠ, ঠিক ততটাই আলাদা। এ ব্যাপারে বোধ হয় সবচেয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ‘বিবিধ প্রসঙ্গ’-তে তিনি বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা নিয়ে লিখেছেন, ‘বন্ধুত্ব ও ভালবাসায় অনেক তফাৎ আছে, কিন্তু ঝট্‌ করিয়া সে তফাৎ ধরা যায় না। বন্ধুত্ব আটপৌরে, ভালবাসা পোষাকী।’

ঠিক তা–ই। প্রেম বা ভালোবাসা তীব্র আবেগমথিত অনুভূতি। এ অনুভূতির হ্রাস-বৃদ্ধি বা অবলুপ্তি আছে। কিন্তু বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে এসব নেহাতই গৌণ বিষয়। সন্দেহ নেই, বন্ধুত্বে ভালোবাসা থাকে। তবে সেই সঙ্গে আরও এমন কিছু থাকে, যা প্রেমে-ভালোবাসায় না–ও থাকতে পারে। বিশ্বাস, ভরসা, শ্রদ্ধা, সততা, সুখ-দুঃখ, হাসি-উল্লাস—এসবের সম্মিলিত নাম বন্ধুত্ব। প্রেমের ক্ষেত্রে এই সবকিছুর উপস্থিতি একসঙ্গে পাওয়া কঠিন। ফলে বন্ধুত্বে ভালোবাসা থাকলেও ভালোবাসায় বন্ধুত্ব না থাকার ঝুঁকি আছে।

প্রেম দুজন মানুষে সীমাবদ্ধ, অন্যদিকে বন্ধুত্বে সংখ্যারই স্থান নেই
ছবি: প্রথম আলো

এ জন্যই বন্ধুত্ব প্রেমে রূপান্তরিত হতে পারে। কিন্তু প্রেম মরে গেলে তা পুনরায় বন্ধুত্বে প্রতিস্থাপিত হয় না। আর কে না জানে, প্রেম কেন্দ্রীভূত, বন্ধুত্ব অবারিত। প্রেম দুজন মানুষে সীমাবদ্ধ, তৃতীয়ের স্থান নেই। অন্যদিকে বন্ধুত্বে সংখ্যারই স্থান নেই। ওই লেখাতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘প্রেম বলিলে দুই জন ব্যক্তি মাত্র বুঝায়, আর জগৎ নাই। দুই জনেই দুই জনের জগৎ। অতএব বন্ধুত্ব অর্থে দুই এবং তিন, প্রেম অর্থে এক এবং দুই।’

তবে এতসব তুলনামূলক আলোচনার মানে কিন্তু এই নয় যে, বন্ধুত্বের বিবেচনায় প্রেমকে ছোট করে দেখা হচ্ছে। দুটি সম্পর্ক নিজ নিজ ক্ষেত্রে হয়তো যথার্থ। কিন্তু এই দুটি সম্পর্ককে যদি একই সুতোয় গাঁথা যায়, বাঁধা যায় অভিন্ন অনুভূতিতে, তাহলে কেমন হয়! বন্ধুত্ব ও প্রেমের পুণ্য বাঁধন পরস্পরে মিলে গেলে যাপিত জীবন হয়ে ওঠে স্বর্গসম। শেক্‌সপিয়ার বলেছেন, ‘কাউকে সারা জীবন কাছে পেতে চান? তাহলে প্রেম দিয়ে নয় বন্ধুত্ব দিয়ে আগলে রাখুন। কারণ, প্রেম একদিন হারিয়ে যেতে পারে কিন্তু বন্ধুত্ব কোনো দিন হারায় না।’ আর আমরা বলি, প্রেম বাদ দিয়ে নয়; বরং প্রেম ও বন্ধুত্ব দিয়ে আগলে রাখুন আপন মানুষ।

ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব দিবসের ধারণাটি ড. র‍্যামন আর্টেমিও ব্রাচোর
ছবি: সংগৃহীত

আজ ২১ সেপ্টেম্বর, ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব দিবস। ১৯৫০-এর দশকে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ প্যারাগুয়েতে দিনটির চল শুরু হয়। ধারণাটি ছিল ড. র‍্যামন আর্টেমিও ব্রাচো নামের একজন চিকিৎসকের। তিনি বিশ্বাস করতেন, সমাজে সুখ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় এই দিবস দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে। ব্রাচোর বিবেচনায়, প্রেম-ভালোবাসা-বন্ধুত্ব—এসব আর নেহাত দুজন নর-নারীর ভেতর সীমাবদ্ধ থাকে না। হয়ে ওঠে সামাজিক ও সর্বজনীন। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, প্রেমিক-প্রেমিকা সবার সঙ্গেই সম্পর্কগুলো হয়ে উঠুক ভালোবাসায় সিক্ত বন্ধুত্বময়।

ডেজ অব দ্য ইয়ার অবলম্বনে