বাচ্চা নিলে সব ঠিক হয়ে যাবে

সন্তান নেওয়ার আগে স্বামী– স্ত্রীর ভেতর বোঝাপোড়া হওয়াটা খুব জরুরি।
ছবি: কবির হোসেন

আপনি কি সন্তান নেওয়ার কথা ভাবছেন? অভিভাবক বা মা–বাবা হওয়া মানে অনেক বড় একটি দায়িত্বের সঙ্গে নিজের জীবনকে জড়িয়ে ফেলা। বিয়ে হয়েছে, এবার বাচ্চা হবে; এ তো খুব সাধারণ ব্যাপার, এমন একটা ধারণা আমাদের সমাজ বা পরিবারে চালু আছে। তবে বাচ্চাকে সুন্দরভাবে লালন-পালন করার জন্য মা–বাবাকে যে পূর্বপ্রস্তুতি নিতে হয়, এ সমাজে সেই ধারণা একেবারেই নেই।

ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও শুধু মা–বাবার চাওয়া পূরণ করতে অনেকেই সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
ছবি : অধুনা

শ্বশুর–শাশুড়ি নাতি-নাতনির মুখ দেখতে চান

অনেক পরিবারেই স্বামী বা স্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, মা–বাবার বয়স হয়েছে, তাঁরা নাতি–নাতনির মুখ দেখতে চান। সেই মুহূর্তে সেই দম্পতির হয়তো মা–বাবা হওয়ার কোনো পূর্বপ্রস্তুতিই নেই। শুধুমাত্র তাঁদের মা–বাবার চাওয়া পূরণ করতে তাঁরা সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এসব পরিস্থিতিতে একটি কথা মনে রাখবেন, মা–বাবা সারা জীবন আপনার সন্তানের সঙ্গে থাকবেন না। তাকে সুস্থ সুন্দর করে বড় করার দায়িত্ব কিন্তু আপনাদেরই নিতে হবে

বাচ্চা নিলে সব ঠিক হয়ে যাবে

হয়তো স্বামী–স্ত্রীর নিজেদের মধ্যে সম্পর্কে ভালো যাচ্ছে না। তখনই চারপাশ থেকে সবাই বলতে থাকে, একটা বাচ্চা নিয়ে নাও, সব ঠিক হয়ে যাবে। এই ভাবনা থেকে সেই দম্পতিও হয়তো সন্তান নেওয়ার কথা ভাবেন। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়া যদি ঠিক না থাকে, তাহলে সেই সন্তানের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। এ ধরনের সম্পর্কে অনেক সময় দেখা যায়, সন্তানের জন্মের পর অনেক দম্পতির সম্পর্কই বিচ্ছেদে গড়ায়। তখন সেই সন্তানের জীবনকে ঘিরে তৈরি হয় নতুন জটিলতা।

মেয়েটির হয়তো কোনো শারীরিক সমস্যা আছে, সন্তান না নিলে এমন গুঞ্জন ওঠে চারপাশে
ছবি : সুমন ইউসুফ

মেয়েটির মনে হয় কোনো সমস্যা আছে

আমরা এমন একটি সমাজে বাস করি, যেখানে বিয়ের পর সন্তান না নিলে চারপাশ থেকে শুরু হয় নানা গুঞ্জন। মেয়েটির হয়তো কোনো শারীরিক সমস্যা আছে বা ছেলেটির সমস্যার কারণে মেয়েটি মা হতে পারছে না, এমন ভাবনায় মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। আর এই কথার ভয়েই ইচ্ছা থাকা না সত্ত্বেও অনেক দম্পতি সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

বন্ধুদের সবাই তো মা–বাবা হয়ে গেছেন

অনেক সময় আপনি যাঁদের সঙ্গে সব সময় চলাফেরা করছেন, সেসব সমবয়সী বন্ধুবান্ধব সবাইকে দেখছেন মা–বাবা হয়ে গেছেন। আর্থিক বা মানসিকভাবে যদিও আপনারা তখন হয়তো মা–বাবা হওয়ার জন্য প্রস্তুত না। তবু এসব পরিচিত দলের সঙ্গে যখন কোথাও ঘুরতে যান বা দেখা হয়, তখন আপনাদের মধ্যেও হয়তো একধরনের অস্বস্তি কাজ করে। আর এই হীনম্মন্যতার কারণে পরিকল্পনা না থাকা সত্ত্বেও অনেকেই সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্তে আসেন।

সন্তান যেন আমার সব ইচ্ছা পূরণ করে

অনেক মা–বাবা মনে করেন তার অপূর্ণ ইচ্ছাগুলো সন্তান পূরণ করবে। এই ভাবনা থেকে সন্তান নেন তাঁরা। পরে সন্তানের ইচ্ছার সঙ্গে যখন নিজেদের ইচ্ছার অসামঞ্জস্য হয়, তখনই শুরু হয় সম্পর্কের টানাপোড়েন। তাই মনে রাখবেন, সন্তান কখনোই আপনার ইচ্ছাপূরণের চাবি নয়। সন্তানের ইচ্ছাকে পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে যখন আপনি তার পাশে থাকতে পারবেন, তখনই আপনি একজন চমৎকার বাবা বা মা হয়ে উঠবেন।

তথ্য সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া